BRAKING NEWS

রেলপথে জুড়ল ত্রিপুরা ও মণিপুর, আগরতলা-জিরিবাম জনশতাব্দী এক্সপ্রেসের হল সূচনা

আগরতলা, ৮ জানুয়ারি (হি. স.) : রেলপথে ত্রিপুরা ও মণিপুর আজ জুড়ে গেল। আজ দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সে আগরতলা-জিরিবাম জনশতাব্দী এক্সপ্রেসের সূচনা করেন রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তাতে, তিনটি রাজ্যের সরাসরি সংযোগ স্থাপন হয়েছে। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ দারুন উপকৃত হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।


আজ রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রেলওয়ে বোর্ড থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অসম হয়ে ত্রিপুরার সাথে মণিপুর সংযোগী প্রথম জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনের ফ্ল্যাগ অফ করেন। একই সঙ্গে আগরতলা ও জিরিবাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন নং ০২০১৭/০২০১৮ আগরতলা-জিরিবাম-আগরতলা জনশতাব্দী স্পেশাল ট্রেনের যাত্রার সূচনা করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক, পর্যটন ও উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন (ডোনার) বিভাগের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি. কিষান রেড্ডি, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।


এছাড়া ছিলেন বিদেশ বিষয়ক শিক্ষা বিভাগের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ড. রাজকুমার রঞ্জন সিং, সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন প্রতি মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, মণিপুরের পরিবহণ মন্ত্রী ভাংজাগিল ভাল্টে, ত্রিপুরার পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এই পরিষেবা দুটি রাজ্যের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করল। অতিরিক্তভাবে আগরতলা থেকে জিরিবাম পর্যন্ত আপ ও ডাউন উভয় পরিষেবার উদ্বোধন করা হয়েছে।
রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সিইও ভি.কে. ত্রিপাঠী সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাগতম জানিয়ে নতুন এই ট্রেন পরিষেবা চালু করা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, এই ট্রেন পরিষেবার ফলে আগরতলা থেকে শিলচর (নিকটবর্তী অরুণাচল স্টেশন) ও জিরিবাম যাত্রার সময়সীমা হ্রাস হবে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং ভাষণে ইম্ফল-মোরে সেকশনের নতুন রেল লাইন প্রকল্পের অনুমোদন লাভ করার জন্য রেলমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উভয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা আরও বলেন, এই ট্রেন পরিষেবা আরম্ভ হওয়ার পর দুই রাজ্যের পুরনো সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।


সাংস্কৃতিক, পর্যটন ও উত্তর পূর্ব অঞ্চল উন্নয়ন (ডোনার) বিভাগের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি. কিষান রেড্ডি বলেন, বহু প্রতিক্ষিত এই ট্রেন পরিষেবা উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্য ও পর্যটনকে আরও বেশি উৎসাহ প্রদান করবে। এছাড়াও তিনি উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির উন্নয়নের জন্য ‘হীরা’ মডেল (এইচ দিয়ে হাইওযে, আই দিয়ে ইন্টারনেট, আর দিয়ে রেলওয়ে এবং এ দিয়ে এয়ারওয়েজ) নিয়ে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এদিন রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, এই ট্রেন দুটি রাজ্যের সংস্কৃতিকে সংযুক্ত করবে। ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইম্ফল-মোরে সেকশনটি কৌশলগতভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ লাইন হয়ে উঠবে। আগরতলা-আখাউরা রেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন রেলমন্ত্রী।


অসমের অরুণাচল স্টেশন (শিলচর) হয়ে মণিপুর থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত প্রথম জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনটি শিলচর, বদরপুর, নিউ করিমগঞ্জ, ধর্মনগর ও আমবাসার পাশাপাশি জিরিবাম থেকে আগরতলা পর্যন্ত দুটি টার্মিনাল স্টেশনের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক শহরকে সংযুক্ত করবে। স্থল পথ দিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টার যাত্রার পরিবর্তে ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বের এই পথ ট্রেনের দ্বারা যাত্রা করলে অর্ধেক সময় তথা প্রায় ০৬ ঘণ্টায় অতিক্রম করা যাবে। ত্রি-সাপ্তাহিক ১২০১৭/১২০৯৮ নং আগরতলা-জিরিবাম-আগরতলা জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনটির পরিষেবা সোম, বুধ ও শুক্রবার নির্ধারিত করা হয়েছে যা ১০ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ট্রেনটি আগরতলা থেকে সকাল ৬টায় রওনা দিবে এবং জিরিবামে দুপুর ১২টায় পৌঁছাবে। ফেরত যাত্রার সময়ে ট্রেনটি জিরিবাম থেকে বিকেল ৪টায় রওনা দেবে ও আগরতলায় পৌঁছাবে রাত ১০টায়।


এই ট্রেনর্টির পরিষেবা তিনটি রাজ্য সহ এই সময় অঞ্চলে বাণিজ্য, পর্যটন ও পরিবহণ খণ্ডকে প্রেরণা যোগাবে। বর্তমানে মণিপুর ও ত্রিপুরার মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ ট্রেন নেই এবং আগরতলা ও শিলচরের মধ্য শুধুমাত্র একটিই ট্রেন সকালে চলাচল করছে। তবে এই জনশতাব্দী ট্রেনটি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য ত্রিপুরায় যেতে মণিপুরের মানুষকে প্রত্যক্ষ সংযোগ প্রদান করবে এবং পাশাপাশি ত্রিপুরার মানুষও বাণিজ্য, পর্যটন ইত্যাদির জন্য মণিপুর পরিদর্শনের সুযোগ লাভ করবেন। যার ফলে এই অঞ্চলটির সামগ্রিক অর্থনীতিরও উন্নতি ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *