BRAKING NEWS

জঙ্গলমহলে নিস্তব্ধতা, উধাও গরিমা

খোয়াই, ৩ জানুয়ারি : খোয়াইয়ের জংগলমহলে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা। ২০২১ সালের বর্ষশেষের দিনটিতেও যেন জংগলমহল পিকনিক স্পটে  ছিল শুনশান। ৩১ শে ডিসেম্বর সারা দিনে একটিও পিকনিক পার্টির দেখা মিললো না খোয়াইয়ের জংগলমহল পিকনিক স্পটে। সত্যিই এত বছরের জংগলমহলের উদ্বোধনের পর থেকে এক অচেনা ছবি। বড়দিন বা বর্ষশেষের দিনে সারা রাজ্যের পিকনিক পার্টির লাইন পড়তো। লাইন পড়ে যেতো ছোট বড় গাড়ির। খোয়াইয়ের পূর্ব গণকী গাঁওসভায় জংগলমহল পিকনিক স্পটের শুরু থেকে কয়েক বছর সময়ের মধ্যে এই বছর ব্যাতিক্রমী চিত্র দেখা গেল।


এই জংগলমহল একটি আদর্শ পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। ২০০৮ সালে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের পরিকল্পনায় গড়ে উঠে ছিল জংগলমহল পিকনিক স্পট। একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্ভর গ্রামীণ পর্য্যটন কেন্দ্রও। সবুজ প্রকৃতির মাঝে মনোমুগ্ধকর পিকনিক স্পট। ছুটির দিনে দল বেঁধে এসে চুটিয়ে মজা করার জায়গা। সারা দিনের জন্য আনন্দ বিনোদনের কেন্দ্র। ছোট বড় সবাই মিলে হৈ হুল্লোর করে কাটিয়ে দিয়ে দিনের শেষে বনভোজনের আনন্দে মেতে উঠা। পিকনিকের উপযুক্ত পরিকাঠামো সহ সর্বসুবিধাযুক্ত পরিবেশ প্রকৃতি নির্ভর অপরুপ শোভা মন্ডিত মনোরম পর্য্যটন কেন্দ্র।


এখানে একসাথে অনেকগুলো পিকনিক পার্টি বনভোজনের আনন্দে মেতে উঠতে পারে। বিরাট আয়তনের প্রশস্ত প্রাঙ্গন। পৃথক পৃথক ছাউনি আর শেড। পানীয় জলের সুবিধা। টয়লেট ব্লক। শিশুদের জন্য আলাদা পার্ক কর্ণার। হরেক রকমের স্ট্যাচুর সমাহার। সুউচ্চ টংঘর থেকে সবুজাভ প্রকৃতির শোভা আর অপরুপ সৌন্দর্য্য অবলোকন করার মতো উপযুক্ত জায়গা। রেস্ট শেড আর সিটিং বেঞ্চ। লেকের জলে নৌকাবিহার। পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনায় এদের কুজনে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা জংগলমহলের উন্মুক্ত চত্বর।


খোয়াই ব্লকের পূর্ব গণকী গাঁওসভায় গড়ে উঠা জংগলমহল পিকনিক স্পট রাজ্যের পর্য্যটন মানচিত্রে স্হান করে নেওয়া একটি গ্রামীণ পর্য্যটন কেন্দ্র। সারা রাজ্যের মানুষের কাছে সুপরিচিত। প্রকৃতির টানে ছুটে আসেন সারা রাজ্যের বিভিন্ন বয়সের মানুষ। রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা থেকে এদের ছুটে আসা। শীতের মরশুমে বনভোজনের আয়োজনে মেতে উঠা। ছুটির দিনে ব্যাতিক্রমী আনন্দ উপভোগ করা।


সকাল থেকেই পিকনিক করতে বহু মানুষ গাড়ি নিয়ে পার্কে আসতে শুরু হত। বেলা গড়িয়ে যাওয়ার সাথে ফাঁকা জায়গা না পেয়ে অনেককে ফিরেও যেতে হয়েছে। আশপাশে জায়গা খুঁজে আয়োজন করতো পিকনিকের। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে আলাদা মঞ্চ। আর মঞ্চের সামনেও নাচগানের জন্য উন্মুক্ত। এই পিকনিক স্পট এলাকার স্থানীয় মানুষের আয় বাড়িয়েছিল। পূর্ব গণকী পঞ্চায়েতের নিজস্ব রাজস্ব খাতের আয় উপার্জন বৃদ্ধি করেছিল জংগলমহল পিকনিক স্পট।
বর্তমান সরকার ২০১৯ সালে পঞ্চায়েতের হাত থেকে নিয়ে জংগলমহল তুলে দেওয়া হয়েছে এনজিও-র হাতে। এরপর থেকেই জংগলমহলের চেনা ছবি দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। পঞ্চায়েতের নিজস্ব আয় বন্ধ হয়ে যায়। পরিকাঠামো অনেকটাই নষ্ট হতে থাকে। অনেক স্ট্যাচু ভেঙে যায়। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে পুরো পিকনিক স্পট। মেরামতির উদ্যোগ নেই। জঙ্গলমহল পার্কটি জঙ্গলাকীর্ণ, আবর্জনা একাকার। অনেকগুলি স্ট্যাচু, বাচ্চাদের খেলনার সরঞ্জাম ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।


এখন জংগলমহল পিকনিক স্পট তার গরিমা হারিয়েছে অনেকাংশেই। গত বছরও চার-পাঁচটি পিকনিক পার্টির ভিড় দেখা যেত। আজ সেখানে অন্য ছবি।  খবর নিয়ে জানা গেছে, এবার বড়দিনে মাত্র দুটি পিকনিক পার্টি এসেছে। শুক্রবার বর্ষশেষের দিনে একটি পিকনিক পার্টিরও দেখা নেই। সারাদিন শুনশান। জংগলমহল যেন এদিন ছিল একটি পরিত্যক্ত শ্মশানের চেহারা নিয়েছে। একই অবস্থা ছিল ধলাবিলের বনবীথি ইকো পার্কের লাগোয়া চাবাগান পিকনিক স্পটেরও। খবর মিলেছে যে, মাত্র পাঁচটি পিকনিক পার্টিকে এদিন দেখা গেছে চাবাগানের পিকনিক স্পটে। তাও খোয়াইয়ের স্থানীয় বাসিন্দারা এসেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *