আগরতলা, ৬ অক্টোবর (হি. স.) : ত্রিপুরায় তৃণমূলের পরিচালন কমিটির ঘোষণা হতেই দলের অন্দরে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। ক্ষোভের দাবানল এতটাই তেজি রূপ নিয়েছে আগামী দিনে ত্রিপুরায় তৃণমূলের সংগঠন টিকিয়ে রাখা দায় হতে পারে। কারণ, দলের দুর্দিনের সেনাপতি আশীষ লাল সিংহ সাফ জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতি সন্যাস নেবেন। দলের বিরুদ্ধে যাবেন না, তবে দল ছেড়ে তিনি ত্রিপুরা ত্যাগ করবেন। এমন আরো অনেকেই নব গঠিত পরিচালন কমিটি ঘোষণার পর থেকে বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন। সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, হয়তো আই-প্যাকের সাথে রফা করে ত্রিপুরায় তৃণমূলের সর্বময় কর্তার মুকুট মাথায় পড়েছেন সুবল ভৌমিক।
প্রসঙ্গত, আজ ত্রিপুরায় তৃণমূলের নব গঠিত পরিচালন কমিটির ঘোষণা হয়েছে। মোট ১৯ জন সদস্য রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাতে, সুবল ভৌমিক ও সুস্মিতা দেব ছাড়া রয়েছেন প্রকাশ চন্দ্র দাস, আশীষ লাল সিংহ, কৃষ্ণধন নাথ, ডা: দেবব্রত দেব রায়, আব্দুল বসিত খান, ত্রিদিব দত্ত, সম্পা দাস, কল্পমোহন ত্রিপুরা, মামন খান, নীলকান্ত সিনহা, শর্মিষ্ঠা দেব সরকার, রবি চৌধুরী, শিবানী সেনগুপ্তা, ইদ্রিস মিয়া, অঞ্জন চক্রবর্তী, অনিতা দাস এবং মলিন জমাতিয়া।
এদিকে, তৃণমূলের ত্রিপুরায় নব গঠিত যুব কমিটিরও ঘোষণা হয়েছে। তাতে মোট ১১ জন সদস্য রয়েছেন। বাপ্টু চক্রবর্তী ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন রাকেশ দাস, শান্তনু সাহা, জাকির হোসেইন, উত্তম কলই, মৃনাল কান্তি দেবনাথ, সুমন দে, চিরঞ্জিত পাল, সোলাঙ্কি সেনগুপ্তা, দিপন্ত চক্রবর্তী এবং অমিত দেব্বর্মা।
তৃণমূলের নব গঠিত কমিটি অনেকটাই চমক দিয়েছে। কারণ, কংগ্রেসত্যাগী পুড় খাওয়া রাজনীতিবিদ সাংসদ সুস্মিতা দেব এখন ত্রিপুরায় সুবল ভৌমিকের নেতৃত্বে সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত হবেন। আজকের ঘোষণা অনুযায়ী ত্রিপুরায় এখন তৃণমূলের সর্বময় কর্তা হয়েছেন সুবল ভৌমিক। এমনকি, দুর্দিনে তৃণমূলের পতাকা কাঁধে দিয়ে সংগ্রামে ঝাপিয়েই আশীষ লাল সিংহ সাধারণ সদস্য হিসেবেই কমিটিতে ঠাই পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এই রাজনৈতিক সমীকরণ মেলাতে পারছে না রাজনীতির কারবারীরা।
আজ ওই কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশীষ লাল সিংহ। তিনি সাফ জানালেন, এতদিন দলের জন্য যারা মার খেলেন, জেলে গেলেন, তাঁরা ব্রাত্য। অথচ, দলবদল করে এসেছেন এমন নেতাকে দলের শিরোমনি করা হয়েছে। তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই, তৃণমূল ছেড়ে দিচ্ছি। রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিচ্ছি এবং ত্রিপুরা থেকে চলে যাচ্ছি। তাঁর অভিযোগ, ষড়যন্ত্র করে দলবদলু নেতাকে পরিচালন কমিটির শীর্ষে বসানো হয়েছে।
এমনই অসন্তোষ এবং ক্ষোভ আরো অনেকেই প্রকাশ করেছেন। তাঁদের সকলের বক্তব্য, দুর্দিনে তৃণমূলকে যাঁরা বুকে আগলে রেখেছিলেন তাঁদের পাত্তাই দিলেন না দলনেত্রী। এমন হটকারী সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায়না। তাতে স্পষ্ট, শীঘ্রই তৃনমুলে ধ্বস নামতে চলেছে। ফলে, সংগঠন শক্তিশালী করার বদলে তৃণমূল সাইনবোর্ড সর্বস্বে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।