BRAKING NEWS

সালিশী সভায় সম্ভ্রম নষ্টের ঘটনায় আত্মঘাতী মহিলার স্বামী-ও আত্মঘাতী

আগরতলা, ১৮ মে (হি. স.) : সালিশী সভায় সম্ভ্রম নষ্টের ঘটনায় আত্মঘাতী মহিলার স্বামী আজ আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের দাবি, ওই মহিলার স্বামী স্ত্রী-র মৃত্যুর পর মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মানসিক অবসাদ থেকেই বিষ পানে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, ওই মহিলার আত্মহত্যার ঘটনায় ত্রিপুরা হাই কোর্ট স্বত:প্রনোদিত মামলা নিয়েছে। উচ্চ আদালতে শুনানি চলছে। এরই মধ্যে মহিলার স্বামীর আত্মহত্যা পুরো ঘটনায় নতুন মোড় এনে দিয়েছে বলে দাবি আইনি বিশেষজ্ঞ মহলের।

গত ৪ মে সালিশী সভায় নোংরা ভিডিও দেখানো এবং চরিত্র নিয়ে বাজে মন্তব্যের জেরে লজ্জায় ও অপমানে অনিল মালা ত্রিপুরা আত্মহত্যা করেছিলেন। ওই ঘটনায় ত্রিপুরা হাই কোর্ট সুয়োমুটো মামলা নিয়েছে। ওই মামলায় ত্রিপুরা হাই কোর্ট মুখ্য সচিব, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক, দক্ষিণ ত্রিপুরা পুলিশ সুপার এবং সাব্রুম-র মহকুমা পুলিশ আধিকারিক-কে নোটিশ জারি করেছিল। গতকাল ওই মামলায় শুনানি-তে অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ওই ঘটনার সাথে জড়িত ১১ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের জবানবন্দী আদালতে পেশ করা হবে।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় সাব্রুম মহকুমায় বেতাগা এডিসি ভিলেজে বিরেন্দ্র চৌমুহনী বাজার এলাকায় পরকীয়া-র অভিযোগে সালিশী সভায় অনিল মালা ত্রিপুরা(২৪)-র অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও এবং ছবি প্রকাশ্যে দেখানো হয়েছে। তাতে, লজ্জায় ও অপমানে ওই মহিলা গতকাল আত্মহত্যা করেছেন। মৃতার স্বামী আনন্দ ত্রিপুরা বলেন, সালিশী সভায় গ্রামবাসী-রা তার স্ত্রী-কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং মারধর করেছেন। তিনি বলেন, সালিশী সভায় কিছু ভিডিও দেখানো হয়েছিল এবং তাতে স্থানীয় মহিলারা উত্তেজিত হয়ে তার স্ত্রীকে মারধর করেছেন। তাই, অনিল মালা ত্রিপুরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন, বলেন তিনি।

ওই ঘটনায় সাব্রুম থানা একটি স্বত:প্রনোদিত মামলা নিয়েছিল । থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দুলাল দত্ত জানিয়েছেন, সালিশী সভায় মহিলা-কে নিগ্রহ এবং পরবর্তী সময়ে তার আত্মহত্যার ঘটনায় স্বত:প্রনোদিত মামলা নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় ফৌজদারি দন্ডবিধি ৩২৩, ৩৫৪, ৩০৬ এবং ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তি-তে মামলা রুজু হয়েছে।

এদিকে, ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ত্রিপুরা হাই কোর্ট স্বত:প্রনোদিত মামলা নিয়ে মুখ্য সচিব, ত্রিপুরা পুলিশের মহা নির্দেশক, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা পুলিশ সুপার এবং সাব্রুম মহকুমা পুলিশ আধিকারিক-কে নোটিশ পাঠিয়েছিল। অন্যদিকে, ত্রিপুরা সরকার দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল। গতকাল আদালতে শুনানি হয়েছিল এবং আগামী ২৪ মে পরবর্তী শুনানি-র ধার্য্য হয়েছে। এরই মধ্যে আজ দুপুরে নিজ বাড়িতেই আত্মহত্যা করেন ওই মহিলার স্বামী আনন্দ ত্রিপুরা।

সাব্রুম থানার ওসি দুলাল দত্তের কথায়, আজ দুপুর ১২টা নাগাদ আনন্দ ত্রিপুরার ছেলে দেখতে পান তার বাবা ঘরের মেঝেতে ছটপট করছেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ছুটে যান এবং তাকে প্রথমে মনুঘাট প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে সাব্রুম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিত্ত্শক-রা তাকে মৃত বলে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট-র উপস্থিতি-তে তার ময়না তদন্ত হয়েছে। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরেই আনন্দ ত্রিপুরা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। স্ত্রী-র মৃত্যু যেভাবে হয়েছে তিনিও সেভাবে আত্মঘাতী হবেন বলে প্রায় সময় পরিবারের সদস্যদের কাছে বলেছেন। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মানসিক অবসাদ থেকেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। সাব্রুম থানা-র ওসি বলেন, পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নিয়েছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *