আগরতলায় লাগামহীন করোনা, কনটেনমেন্ট জোনের দাওয়াই

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ মে৷৷ আপাতত কনটেনমেন্ট জোন নির্ধারণের মাধ্যমে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের৷ কারণ, সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, পুর নিগম এলাকায় ৫, ৪৯ এবং ২১ নং ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশী করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে৷ এছাড়া পুর নিগমের ১২, ২৪ এবং ২০ নং ওয়ার্ডেও সংক্রমণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ নিগম সূত্রের দাবি, আগামীকাল ৫ এবং ৪৬ নং ওয়ার্ডকে কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করার সম্ভাবনা প্রবল৷


প্রসঙ্গত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা সারা রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সংক্রমিত হয়েছে৷ ইতিমধ্যে দেড় সহস্রাধিক জেলাবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকাতেও পশ্চিম জেলা শীর্ষে রয়েছে৷ স্বাভাবিক ভাবে করোনার শৃঙ্খল ভাঙার জন্য কাল বিলম্ব দেরী না করে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে৷


সূত্রের দাবি, পুর নিগম এলাকাতে সবচেয়ে বেশী সংক্রমণের খোঁজ মিলেছে৷ এক্ষেত্রে ১২টি ওয়ার্ড অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ বলে প্রমাণ মিলেছে৷ সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে পুর নিগমের ৫, ৪৯ এবং ২১ নং ওয়ার্ডে সংক্রমণের সংখ্যা সত্তর ছাড়িয়ে গিয়েছে৷ তেমনি ১২, ২, ২৪ এবং ২০ নং ওয়ার্ড সংক্রমণে অর্ধশতক পার করে ফেলেছে৷ ঠিক পেছনেই সংক্রমণে এগিয়ে চলেছে পুর নিগমের ৩৩, ৪৬, ৪৫, ৪৮ এবং ৪২ নং ওয়ার্ড৷ ওই ওয়ার্ডগুলিতে সংক্রমণের সংখ্যা চল্লিশ অতিক্রম করেছে৷


স্বাভাবিকভাবেই দ্রুতগতিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি সমগ্র নিগমবাসীকে গভীর চিন্তায় ফেলেছে৷ এক্ষেত্রে কনটেনমেন্ট জোনের মাধ্যমে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙা কতটা সাফল্য এনে দেবে তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷
সম্প্রতি পুর নিগমের পাঁচটি ওয়ার্ডে করোনার নমুনা পরীক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷ তাতেই গত চবিবশ ঘন্টায় শুধু পশ্চিম জেলায় সংক্রমণ ২৭১-এ পৌঁছে গিয়েছে৷ এদিকে, ফ্লাওয়ার্স ক্লাব, চিত্তরঞ্জন ক্লাব, লালবাহাদূর ক্লাব এবং জগহরিমুড়া হেল্থ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টারে করোনার নমুনা পরীক্ষার বিশেষ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে৷

সম্প্রতি রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির জেরে পুর নিগম এলাকায় সমস্ত দোকান ও অফিসগুলিতে ধারাবাহিক করোনার নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হবে৷ কারণ, সারা রাজ্যের মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পশ্চিম জেলা মারাত্মক ঝুকির মধ্যে রয়েছে৷ এমনিতেই রাজধানী আগরতলা শহরে রাজ্যের অন্যান্য শহরের তুলনায় ঘন জনবসতি রয়েছে৷ ফলে, করোনার শৃঙ্খল ভাঙার ক্ষেত্রে ঘন জনবসতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে৷ তাছাড়া পুর নাগরিকদের একাংশের দায়িত্বহীন মনোভাব সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে৷
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে এখনই সম্পূর্ণ লকডাউনের মাধ্যমে করোনার শৃঙ্খল কিছুটা হলেও ভাঙা সম্ভব হবে৷ এক্ষেত্রে বাজারগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে৷ অবশ্য, প্রশাসনিক ভাবে এই পথে পা বাড়ানো অনেকটাই ঝুকিপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা৷ কারণ, লকডাউনের মাধ্যমে পুরবাসীকে ঘরে রাখা আবদ্ধ রাখা সম্ভব হলেও সুস্পষ্ট রূপরেখা তৈরী করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না৷ অন্তত অতীত অভিজ্ঞতা প্রশাসনকে গভীর চিন্তায় ফেলেছে৷ তবে, আগামীকাল প্রাথমিকভাবে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক সম্ভবত পুর নিগম এলাকায় দুইটি ওয়ার্ডে কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা দিতে পারেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *