BRAKING NEWS

কোনও উচ্চাশা নেই আমার ,শুধু কাজ করে যেতে চাই : মীনাদেবী পুরোহিত

অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা,  এপ্রিল (হি. স.) : রাজ্যের এবারের বিধানসভা নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে হিন্দিভাষী ভোটদাতাদের রায়। কলকাতার এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে হিন্দিভাষীরা। এবার তাঁদের ভোট কোন দিকে যাবে সেটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। জোড়াসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্র তাই খুব নজরে। এই কেন্দ্রে এবারের বিজেপি প্রার্থী গেরুয়া শিবিরের বহুদিনের কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত।

১৯৯৭ থেকে টানা ক’বছর খবর সংগ্রহের সূত্রে সদর পুরভবন ছিল এই প্রতিবেদকের দৈনিক গন্তব্যস্থল। তখনই চোখে পড়ত চুপচাপ, সদা হাসি মুখে লেগে থাকা দুই পুরমাতা। মীনাদেবী পুরোহিত এবং সুনীতা ঝাওয়ার। কথাবার্তা, আচরণে শিষ্টতার ছাপ। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যখন নামগন্ধ ছিল না, তখনও পদ্ম নিশানে ভোটে জিতেছেন তিনি। সেই ১৯৯৫-র পুরভোট দিয়ে শুরু। একবারও হারেননি। বরং ভোটের ব্যবধান উত্তরোত্তর বাড়িয়েছেন বছর ষাটেকের মীনাদেবী। বিজেপি এখন বাংলার অনেক জায়গাতেই জাঁকিয়ে বসেছে। বাজপেয়ী-আদবানির পার্টি এখন পুরোদস্তুর কর্পোরেট। 

৪২ কালীকৃষ্ণ টেগোর স্ট্রিটের পুরোনো বাড়িটার একতলার একটি ঘরে মীনাদেবীর অফিসঘর। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং দীনদয়াল উপাধ্যায় ছাড়া ঘরে আর কোনও গেরুয়া নেতার ছবি নেই। আশি-নব্বইয়ের দশকে মীনাদেবীর বাড়িতে লালকৃষ্ণ আদবানি, মদনলাল খুরানা, ভৈরোঁ সিং শেখাওয়াতের মতো তাবড় নেতারা আসতেন। তাঁর হাতের রান্না খেয়ে দরাজ প্রশংসা করেছিলেন আদবানি। যদিও গড়পরতা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর মতো সেই সব ছবি অফিস ঘরে টাঙিয়ে নিজের ‘ওজন’ বাড়ানোর কথা ভাবেননি মীনাদেবী।

নিজের কথা জানাতে গিয়ে ’হিন্দুস্থান সমাচার’-কে বলেন, “আমার মূল বাড়ি রাজস্থানের বিকানীরে। বিয়ের পর ১৯৭৮-এ সেই যে কলকাতায় এলাম, এই শহরটাই হয়ে গেল আমার নিজের। স্বামী ছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়ী।“ রাজনীতিতে এলেন কীভাবে? “স্বামী বিজেপি করতেন। ১৯৯২-তে দুর্ঘটনায় আচমকা মারা যান। বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রীজী আমাকে এসে স্বান্ত্বনা দিয়েছিলেন। ১৯৯৫-তে পুরোদস্তুর চলে এলাম দলের কাজে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলার হলাম। তখন বয়স ৩০।”

পাঁচবারের কাউন্সিলার মীনাদেবী ২০০০ থেকে ২০০৫ ছিলেন ডেপুটি মেয়র। ২০১৫-তে মীনাদেবী পুরোহিতকে পুরসভার কাউন্সিলরদের নেত্রী করা হয়। সুনীতা ঝাওয়ারকে করা হয় দলের মুখ্য সচেতক। সেবার কলকাতায় পুরভোটে জিতেছিলেন বিজেপি-র ৭ জন। পরে এক জন দলত্যাগ করায় থাকেন বিজেপি-র ৬ কাউন্সিলর। ২০১৮-তে মেয়র পদে নির্বাচনে মীনাদেবী হেরে যান তৃণমূলের ববি হাকিমের কাছে। 

২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে মীনাদেবী প্রার্থী হন জোড়াসাঁকোয়। তৃণমূলের স্মিতা বক্সী পান ৫৭,৯৭০টি ভোট। সিপিএমের জানকী সিং পান ২৬ হাজার ভোট। বিজেপির মীনাদেবী পুরোহিত পান ১৭ হাজার ভোট। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের স্মিতা বক্সী পান ৪৪,৭৬৬টি ভোট। বিজেপির রাহুল সিনহা পান ৩৮,৪৭৬টি ভোট। আরজেডি প্রার্থী পান ১৫,৬৩৯টি ভোট। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলে এই আসনে এগিয়ে যায় বিজেপি। প্রায় ১৪ হাজার ভোটে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির।

এই আসনে এবার স্মিতা বক্সিকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। তার বদলে প্রার্থী করেছেন তৃণমূলের হিন্দি সেলের সদস্য ও একটি সাংবাদমাধ্যমের মালিক বিবেক গুপ্তাকে। দুবারের জেতা বিধায়ক স্মিতাকে তৃণমূল প্রার্থী না করানোর পিছনে অন্য কারণ দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, লোকসভা না জিতলেও এই বিধানসভা আসনে বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। পাশাপাশি তৃণমূলের তোলা বহিরাগত ইস্যুটি খুব একটা ভালো চোখে দেখছে না হিন্দিভাষী মানুষেরা। ফলে এই আসনের ভোট বিজেপির দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *