BRAKING NEWS

অযোধ্যা মামলায় মধ্যস্থতাতেই আস্থা সুপ্রিম কোর্টের, আট সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে প্যানেলকে

নয়াদিল্লি, ৮ মার্চ (হি.স.): অতীতে কি হয়েছে তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে কোনও লাভ নেই| বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অযোধ্যার জমি বিবাদের ফয়সালা হোক| মধ্যস্থতার মাধ্যমে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ সম্পর্কিত বিবাদ নিষ্পতির পথে আগেই হেঁটেছিল সুপ্রিম কোর্ট| এবার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তিন সদস্যের প্যানেল তৈরি করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত| সুপ্রিম কোর্টে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইব্রাহিম খালিফুল্লার নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিকে আট সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে| প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন ধর্মগুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর এবং বর্ষীয়ান আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু| চার সপ্তাহের মধ্যে মধ্যস্থতার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে ওই কমিটিকে। বারবার পিছিয়ে যাওয়ার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয় বহুচর্চিত অযোধ্যার বিতর্কিত রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি সংক্রান্ত মামলার শুনানি| ওই দিন মামলার প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি ইংরেজিতে অনুবাদ সম্পন্ন না হওয়ায় সময় চান আবেদনকারীরা| এরপরই অযোধ্যার বিতর্কিত রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি সংক্রান্ত মামলার বিবাদ মেটানোর জন্য মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট| গত বুধবার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ জমি বিতর্ক মামলার রায়দান স্থগিত রেখেছিল। অযোধ্যা মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘অতিতে কি ঘটেছিল, তার উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই| বাবর কি করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে কি হয়েছিল তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই| এটি শুধুমাত্র জমি সম্পর্কিত নয়, অনুভূতি এবং বিশ্বাসের বিষয়।’ বিচারপতি এস এ বোবদে জানান, ‘অযোধ্যা মামলার রায় আবেগ, ধর্ম এবং বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত| শুধুমাত্র একজন মধ্যস্থতাকারী নন, মধ্যস্থতাকারীদের একটি প্যানেলের প্রয়োজন| অতিতের উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই| কারা আক্রমণ করেছিল, কে রাজা ছিল, মন্দির অথবা মসজিদ ছিল কিনা| আমরা বর্তমান বিতর্কের সমাধান চাই|’গত বুধবার জমি বিতর্ক মামলায় দুই পক্ষের মতামত শোনে সুপ্রিম কোর্ট। এদিন শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অযোধ্যা জমি বিতর্কের সমাধান একমাত্র মধ্যস্থতাকারী প্যানেলের দ্বারাই সম্ভব হতে পারে।

সেই মতো রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত অযোধ্যার জমি মামলায় মধ্যস্থতাকারী প্যানেল নিয়োগেই আস্থা রাখল শীর্ষ আদালত। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তিন সদস্যের প্যানেল তৈরি করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত| সুপ্রিম কোর্টে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইব্রাহিম খালিফুল্লার নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিকে আট সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে| প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন ধর্মগুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর এবং বর্ষীয়ান আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু| চার সপ্তাহের মধ্যে মধ্যস্থতার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে ওই কমিটিকে। ‘চূড়ান্ত গোপনীয়তা’-র মধ্যে মধ্যস্থতা পর্ব সম্পন্ন করতে হবে, এমনই নির্দেশ শীর্ষ আদালতের। এই মধ্যস্থতার পুরো কাজটি হবে একেবারে গোপনে। সেখানে কোনও সংবাদমাধ্যমের প্রবেশের অনুমতি থাকবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ফৈজাবাদে হবে সেই মধ্যস্থতার কাজ। এই মামলায় প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি এ এস বোবদে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এস এ নাজির। তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রবীণ বিচারপতি এ এস বোবদের পর্যবেক্ষণ, জমি নয়, বরং রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলা ভাবাবেগ এবং বিশ্বাস-এর।

তিন সদস্যের মধ্যস্থতাকারী প্যানেলের চেয়ারম্যান প্রধান সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইব্রাহিম খালিফুল্লা জানিয়েছেন, ‘আমার নেতৃত্বে একটি মধ্যস্থতাকারী কমিটি নিযুক্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট| যদিও, আমি এখনও কপি হাতে পাইনি| আমি বলতে পারি, এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব|’ প্যানেলের অন্য দুই সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর| সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর জানিয়েছেন, ‘আমি মনে করি, মধ্যস্থতাই একমাত্র উপায়|’ মধ্যস্থকারী প্যানেল প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী জানিয়েছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না| মধ্যস্থকারীদের নাম নিয়েও আমার কোনও বক্তব্য নেই| তবে একজন হিন্দু হিসেবে আমি মনে করি, ভগবান রাম যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেখানে মন্দিরই তৈরি করা উচিত|’ শুক্রবার অযোধ্য মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে মায়াবতী জানিয়েছেন, ‘‘রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ সম্পর্কিত জমি বিবাদ মেটাতে মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের মধ্যস্থতার পক্ষে রায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। সম্পর্ক যাতে আরও ভালো হয় সেই উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) এই রায়কে স্বাগত জানায়।\” অযোধ্য মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিপিআই(এম) নেত্রী বৃন্দা কারাট বলেছেন, ‘‘পূর্বের মধ্যস্থতাকারীরা কিছুই করতে পারেননি। তবে, এইবার মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। সমস্ত পার্টিই সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে সহমত হয়েছে। এখন দেখা যাক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি হয়।\”

এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের তৈরি করা তিন সদস্যের মধ্যস্থতাকারী প্যানেলের সদস্য হিসেবে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করকে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমেন (এআইএমআইএম)-এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি| শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, ‘নিরপেক্ষ কাউকে নিযুক্ত করতে পারত সুপ্রিম কোর্ট|’শুক্রবার অযোধ্য মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, ‘‘মধ্যস্থতাকারী প্যানেলের সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করকে| অথচ এর আগে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘অযোধ্যা নিয়ে মুসলমানরা যদি নিজেদের দাবি থেকে পিছু না হঠেন, তবে সিরিয়ায় পরিণত হবে ভারত’| সুপ্রিম কোর্ট নিরপেক্ষ কাউকে নিয়োগ করলে আরও ভালো হত|’ এদিকে, শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর জানিয়েছেন, ‘আমি মনে করি, মধ্যস্থতাই একমাত্র উপায়|’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার বহুচর্চিত অযোধ্যা মামলার শুনানির সময় থেকেই মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের পক্ষে যুক্তি দেন বিচারপতি এস এ বোবদে| বিচারপতি বলেছিলেন, ‘অতীতে মুঘল সম্রাট বাবর কি করেছিলেন, তার উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই| আমরা এই বিবাদের স্থায়ী মীমাংসা নিয়ে চিন্তিত|’ মধ্যস্থতার মাধ্যমে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ সম্পর্কিত বিবাদ নিষ্পতির পথে আগেই হেঁটেছিল সুপ্রিম কোর্ট| এবার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তিন সদস্যের প্যানেল তৈরি করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *