BRAKING NEWS

আন্দোলনের পরিধি বাড়ছে, দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্ণায় বসতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষকরা

কলকাতা, ৫ মার্চ (হি.স.): বুধবার, ৬ মার্চ দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্ণায় বসতে চলেছেন বাংলার শতাধিক প্রাথমিক শিক্ষক। মেয়ো রোডে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অনশন, বিধাননগরে এসএসকে-এমএসকে শিক্ষকদের আন্দোলনের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষকদের এই আন্দোলনে অস্বস্তিতে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আসন্ন লোকসভা ভোটে এই শিক্ষকদের দাবিকে তুরূপের তাস করতে চাইছেন রাজ্যের বিরোধীরা। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বঞ্চনা নিয়ে বারবার রাস্তায় নেমে সরব হয়েছেন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামে এক অরাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের লক্ষাধিক শিক্ষক। এর সম্পাদক পৃথা বিশ্বাস ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা নিয়ে গত এক বছরে বারংবার সরব হয়েছি। সমস্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক থেকে শুরু করে বিকাশ ভবনে আধিকারিকদের, শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে কোনও সদর্থক বার্তা না পাওয়ায় আমরা এবার জাতীয় স্তরে আন্দোলনকে নিয়ে যাচ্ছি।\”

পৃথার কথায়, “আমরা দাবি আদায়ের জন্য প্রকাশ্যে একাধিক শিক্ষক আন্দোলন করেছি। বারবার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী-র সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তিনি দেখা করেন নি। এমতাবস্থায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি আমরা রামলীলা ময়দানে সমাবেশ করি। মুখ্যমন্ত্রীকে আলোচনায় বসার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি অবধি চরম সময়সীমা দিই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বা প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।“সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনহার নিয়ে ফের আদালতে মুখ পুড়েছে রজ্যের। কেন্দ্রের নির্ধারিত যোগ্যতামান সম্পূর্ণ হলেও, এত বেতন বৈষম্য কেন, লিখিত আকারে তা জানাতে রাজ্যকে নির্দেশ দেয় আদালত। এমনই মন্তব্য করেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। তা সত্বেও শিক্ষকরা সুফল পাননি।

অন্যান্য রাজ্য গুলির তুলনায় এ রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা প্রায় ১২০০০টাকা বেতন কম পান বলে অভিযোগ। শিক্ষকদের দাবি, কেন্দ্রে ও এনসিটিই-র নির্দেশ অনুসারে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতামান সম্পূর্ণ করেছেন এ রাজ্যের প্রাথমিক প্রায় সমস্ত শিক্ষক/শিক্ষিকারা। অথচ বেতনের ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য রাজ্যের শিক্ষকদের তুলনায় প্রচুর কম পাচ্ছেন তারা। কেন এই বৈষম্য?একাধিকবার পথে নেমে আন্দোলন করার পর সরকারের কোন হেলদোল না দেখে শেষমেশ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শিক্ষকরা। তবে আন্দোলনের পথ বা আলোচনার রাস্তা কোনওটাই ছাড়েনি উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন। এই সংগঠনের সহযোগিতায় গৌতম-সহ ৩৮ জনের করা মামলার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় মামলাকারীদের অভিযোগকে মান্যতা দেন। রাজ্য সরকারের আইনজীবীর কাছে জানতে চান কেন্দ্রের নির্দেশ অনুসারে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতামানে সম্পূর্ণ করার পরেও কেন প্রাথমিক শিক্ষকদের যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন / পিআরটি স্কেল দেওয়া হচ্ছে না?
হাইকোর্টকে এর উত্তর হলফনামা দিয়ে লিখিত আকারে জানাতে নির্দেশও দেন বিচারপতি। পাশাপাশি মামলাকারীকেও জবাবী হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এ ছাড়াও পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী এপ্রিল মাসের মাসিক তালিকায় মামলাটিকে রাখার নির্দেশ দেন বিচারপতি। মামলাকারীদের পক্ষে মামলাটি লড়ছেন বিখ্যাত আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্জের সহকারী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত।এই প্রতিবেদককে পৃথা মঙ্গলবার জানান, আগামীকালই আমরা ডেপুটেশন দেব মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ও এনসিটিই দফতরে। এ রাজ্যের শিক্ষক আন্দোলন যে শুধুমাত্র রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জাতীয় মঞ্চে সাড়া ফেলতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য। এ রাজ্যের শিক্ষক দের দিল্লিতে যেতে হচ্ছে নায্য বেতনের দাবিতে এটা আমাদের পক্ষে চরম লজ্জার। শিক্ষামন্ত্রী বলছেন আমাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত। অথচ সরকারি স্তরে কোনও হেলদোল নেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে এর প্রভাব ভোটবাক্সে পড়তে বাধ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *