BRAKING NEWS

৩০/১০ ধারা বিস্ফোরণ : রঞ্জন-সহ ১০ অভিযুক্তকে যাবজ্জীবনের রায় সিবিআই আদালতের

গুয়াহাটি ৩০ জানুয়ারি (হি.স.) : অভিশপ্ত ৩০ অক্টোবর ২০০৮-এর ধারা বিস্ফোরণে মূল অভিযুক্ত রঞ্জন দৈমারি-সহ দশ অভিযুক্তকে নগদ জরিমানা-সহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই বিশেষ আদালত। এছাড়া আরও চার অভিযুক্তকে নগদ টাকার জরিমানা-সহ খালাস করে দিয়েছেন বিচারপতি অপরেশ চক্রবর্তী।বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত করে দশ পৃষ্ঠার রায়ে যাদের যাবজ্জীবনের সাজা দেওয়া হয়েছে তারা ১. রঞ্জন দৈমারি ওরফে ডিআর নাবলা ওরফে লাসডুম ওরফে লওডুম, ২. জৰ্জ বড়ো ওরফে জন ওরফে বি জওয়াখাং, ৩. অজয় বসুমতারি ওরফে আওগি, ৪. খর্গেশ্বর বসুমতারি ওরফে রাহুল ব্ৰহ্ম ওরফে খারামশ্বর, ৫. রাজেন্দ্র গয়ারি ওরফে রাজেন ওরফে রিফিখাং, ৬. অনসাই বড়ো ওরফে অজিত বড়ো, ৭. লখরা বসুমতারি ওরফে লোবো, ৮. ইন্দ্ৰ ব্ৰহ্ম, ৯. বৈশাগি বসুমতারি ওরফে বি বিথুরাই এবং ১০. রাজু সরকার।

তাদের দশ হাজার করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া অন্য চার অভিযুক্তের মধ্য ১১. জয়ন্তী ব্ৰহ্ম ওরফে জুগামি, ১২. প্ৰভাত বড়ো ও ১৩. মথুরাম ব্ৰহ্ম ওরফে টেপাকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি নিলীম দৈমারিকে দুই মামলায় ২০০ টাকা জরিমানা করে খালাস করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গত বছরে তাদের সাজার মেয়াদ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে বলে দশ পৃষ্ঠার রায়ে বলেছে আদালত। এদিকে অপর অভিযুক্ত ১৪. মৃদুল গয়ারিকে বেনিফিট অব ডাউটে গত সোমবারই কারামুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি অপরেশ চক্রবর্তীর আদালত।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার দশ বছর পুরনো বীভৎস ভয়ংকর ধারা বিস্ফোরণ মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১৪ জনের মধ্যে ১৪ অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল অপরেশ চক্রবর্তীর বিশেষ আদালত। এনডিএফবি জঙ্গি সংগঠনের সর্বেসর্বা রঞ্জন দৈমারি-সহ দুজনকে মূল অপরাধী বলে বাকি ১২ জনকেও দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি চক্রবর্তী। আজ বুধবার তাদের সাজা ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছিল।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৮ সালের ৩০ অক্টোবর গুয়াহাটি, বরপেটা, বঙাইগাঁও এবং কোকরাঝাড়ের মোট আটটি স্থানে বিস্ফোরণ সংঘটিত করেছিল রঞ্জন দৈমারির ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অব বডোল্যান্ড (এনডিএফবি)। ভয়ংকর বিস্ফোরণে ৮৮ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যুর পাশাপশি ৫৪০ জন আহত হয়েছিলেন। গুয়াহাটির সিজেএম আদালত চত্বর, গণেশগুড়ি, এবং পানবাজার-সহ তিন জায়গায়, বরপেটারোডে দু জায়গায়, বঙাইগাঁওয়ে এক জায়গায় এবং কোকরাঝাড়ে দু জায়গায় বিস্ফোরণ হয়েছিল। সেদিন গুয়াহাটির কয়েকজন আইনজীবীও মৃত্যুবরণ করেছিলেন। গোটা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত ছিল রঞ্জন দৈমারি নেতৃত্বাধীন এডিএফবি।

পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ওই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআইকে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মামলা যায় সিবিআই বিশেষ আদালতে। সে বছরই ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০(বি), ৩০২, ৩২৪, ৩২৭, ৪৩৫ এবং ৪৩৭ ধারা এবং বেআইনি কার্যকলাপে যুক্ত হওয়ায় ৯, ১৩, ১৬ এবং ২০ ধারায় ২২ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা। সবাইকে গ্রেফতার করে কারাগারে পোরা হয়েছিল। শুরু হয় শুনানি। শুনানি পর্বে ঘটনা সম্পর্কে ৬৫০ জনের সাক্ষী লিপিবদ্ধ করে আদালত। এর মধ্যে রঞ্জন দৈমারি-সহ সাতজনের শর্ত সাপেক্ষে অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে সিবিআই আদালত। কিন্তু জামিন পেয়ে ছয় জঙ্গি ফেরার হয়ে যায়। তাছাড়া এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে। ফেরার এবং নিহতকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ১৫ জনের বিচার প্রক্রিয়া চলে আদালতে।

পরবর্তীতে, ২০০৮ সালে ধারা বিস্ফোরণ মামলার দায়িত্ব সিবিআইকে দেওয়া হলেও তদন্ত প্রক্রিয়া চলে অত্যন্ত শম্বুকগতিতে। ২০১৬ সালে রাজ্যে সরকার বদল হয়। ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর বিজেপি সরকার ওই মামলা ফাস্টট্র্যাক আদালতে নিয়ে যায়। এর পর শুরু হয় দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া। মামলার তদন্তকারী অফিসার হিসেবে জনৈক এনএস যাদবকে নিয়োগ করে সিবিআই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *