BRAKING NEWS

শেষ হল একযুগের অবসান, চোখের জলে লক্ষ মানুষের ঢল, বিদায় ভারতীয় রাজনীতির ‘অজাতশত্রু’র

নয়াদিল্লি, ১৭ আগস্ট (হি.স.) : চিরবিদায় নিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। সেই সঙ্গে পঞ্চভূতে বিলীন হলেন ভারতীয় রাজনীতির এই‘অজাতশত্রু’। শনিবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থলে গান-স্যালুটের মাধ্যমে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য। মুখাগ্নি করেন তাঁর মেয়ে নমিতা। তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয় তেরঙা পতাকা। দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ স্মৃতিস্থলে উপস্থিত ছিলেন দেশের ও বিদেশের প্রতিনিধিরাও।

এদিন সকাল ৯টা নাগাদ বাসভবন নয়াদিল্লির ৬এ কৃষ্ণ মেনন মার্গ থেকে অটল বিহারী বাজপেয়ীর দেহ পৌঁছয় থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির সদর দফতরে। সেখানে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর দিল্লি গেট হয়ে মরদেহ পৌঁছয় রাজঘাটে। রাজঘাটের রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থলেই সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য।

প্রয়াত ভারতরত্নকে শেষ বিদায় জানাতে রাস্তায় নামে জনপ্লাবন।

বাজপেয়ীকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই বহু মানুষ ভিড় জমান। শুক্রবার সকালে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত-সহ আরও অনেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লালকৃষ্ণ আডবাণী তাঁকে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করেন। অটলজিকে শ্রদ্ধা জানাতে এদিন বিজেপির সদর দফতরে হাজির হন শিবসেনা প্রধান ঊদ্ধব ঠাকরে-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও। বিদেশি প্রতিনিধিরাও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ কুমার, বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মেহেমুদ আলি ও ভুটানের রাজা জিগমে খেসর নামগেয়াল ওয়াংচুক। অটলজিকে শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়েছেন পাক সরকারের প্রতিনিধিও।

ভারতরত্ন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষযাত্রায় মানুষের ঢল নামে রাস্তায়।

এদিন বিজেপির নবনির্মিত সদর দফতরে সাধারণের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য খুলে দেওয়া হয় দরজা। সেখান থেকে বেলা ঠিক ২টোয় শুরু হয় শেষ যাত্রা। উদ্দেশ্য দিল্লির স্মৃতি স্থল। হাজারো মানুষের সঙ্গে অটল বিহারীর শেষ যাত্রায় পায়ে হেঁটে শ্মশানে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিলেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। রাজপথে অটলকে শেষবারের মতো দেখতে রাতারাতি ৫০০ মাইল পেরিয়ে এসেছেন উত্তরাখণ্ডের যোগেশ কুমার, গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাজল এনেছেন তিনি। বাহাদুর শাহ মার্গে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা,শিক্ষক মৌলানার হাত ধরে তারাও এসেছে শেষবারের মতো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মুখটুকু যদি দেখা যায়। শেষ যাত্রায় মৃতদেহের পিছনে প্রথম সারিতে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। কিছুটা পিছনেই হাজারো মানুষের ভিড়ে পা মিলিয়েছেন কেরলের ভিক্ষুক অ্যান্টোনি জোশেফ। পূর্ণরাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হল তাঁর শেষকৃত্য। রাজনৈতিক মতাদর্শ, আদর্শগত মতভেদ সব ভুলে আজ গোটা দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের নজর ছিল নয়াদিল্লিতে। সেখানেই রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থলে পঞ্চভূতে বিলীন হলেন অটল। শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন বিজেপি শাসিত সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। বিজেপি শীর্ষ নেতারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সব সদস্য। শেষ যাত্রার শুরু থেকেই পুরভাগে হাঁটছিলেন মোদি-অমিত শাহরা। ছিলেন তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সাক্ষী, দীর্ঘদিনের বন্ধু লালকৃষ্ণ আডবানী। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, তিন সেনার প্রধান সকলেই ছিলেন। শুধু বিজেপি নয়,সারাজীবন ভিন্ন মেরুতে রাজনীতি করা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর আগে থেকেই পৌঁছে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থলে। পৌঁছে ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও। সারাজীবন বাজপেয়ীর প্রধান বিরোধী মুখ গুলির মধ্যে অন্যতম ছিলেন যে মনমোহন, এদিন তাঁর চোখেমুখেও দেখা গেল শোকের ছায়া। শুধু এদেশের নয় বিদেশ থেকেও এসেছিলেন তাঁর অসংখ্য গুণমুগ্ধ।সারাজীবন যে ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করে গিয়েছেন বিজেপির ভিতরে থেকেও সেই ঐক্যের ছবি দেখা গেল অটলবিহারী বাজপেয়ীর শেষযাত্রায়প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টার যাত্রার পর শুক্রবার বিকেল ৩.৪৫ মিনিটে যমুনার পাড়ে রাষ্ট্রীয় স্মৃতি স্থল শ্মশানে পৌঁছায় ভারতরত্ন অটলবিহারীর দেহ।

শেষ যাত্রায় সামিল হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও সেনার তিন বাহিনীর প্রতিনিধিরা। বিকেল ৪টেয় স্মৃতি স্থলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা অটল বিহারী বাজপেয়ীর। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তার দু’ধারে অপেক্ষা করছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাতে দেশের তামাম রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি শুক্রবার বিজেপির সদর দফতরে। হাজির হয়েছন হাজার হাজার মানুষ। ফুলে, স্মৃতিচারণায় বার বার ফিরে আসছে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন, তাঁর কবিতা, তাঁর ভাবনা।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫-০৫ মিনিটে অটলবিহারী বাজপেয়ী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শুক্রবার যথাযথ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। বাজপেয়ীর প্রয়াণে এদিন সুপ্রিম কোর্ট, দিল্লি হাইকোর্ট ও রাজধানীর অন্যান্য নিম্ন আদালতও অর্ধদিবস ছুটি রাখা হয়। তাঁর প্রয়াণে সাত দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সাত দিন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *