BRAKING NEWS

শ্যামাপ্রসাদের ভূমিতে ক্ষমতায় না আসলে বিজেপির জয় অসম্পূর্ণ, রাজ্যে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে বললেন অমিত শাহ

কলকাতা, ১১ আগস্ট (হি.স.) : পশ্চিমবঙ্গের জনক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাংলা বিজয় ছাড়া বিজেপির উত্থান অনর্থক বলে শনিবার মন্তব্য করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। এদিন মেয়োর রোডে বিজেপির জনসমাবেশে এই অাপেক্ষের কথা বলে বাংলা থেকে তৃণমূলকে উৎখাতের ডাক দিলেন তিনি। তিনি বলেন, বিজেপি ১৯টি রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও বাংলা বিজয় ছাড়া বিজেপির উত্থান অনর্থক। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে কতটা মরিয়া গেরুয়া শিবির তা বুঝিয়ে আর বাংলাকে ‘রং দো মোহে গেরুয়া’ করতে নিজেই জেলায় জেলায় সভা করার কথা ঘোষণা করলেন অমিত। তিনি আরও বলেন, ”আমি সব জেলায় যাব। প্রচার করব। তৃণমূলকে উৎখাত করেই ছাড়ব”। দলীয় কর্মীদের তাঁর নির্দেশ, ”মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে প্রচার করুন। তাঁর কথায়, ২০১৯ সালে ২২টি আসন নিশ্চিত করতে হবে। তারপর ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসব আমরা। বিজেপি ক্ষমতায় এলে দুর্গাপুজোর বিসর্জন আটকাবে না, স্কুলে স্কুলে সরস্বতী পুজোও হবে”।

তাঁর আগে বিজেপি যুব মোর্চার নেত্রী মমতা বিরোধী স্লোগানের আওয়াজ তোলেন৷ ২০ বছর পর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলেও, রাজনৈতিক উলটপুরান মারাত্মক৷ বাবা প্রমোদ মহাজন মমতাকে আপন করেই দিল্লি ফিরেছিলেন, আর মেয়ে পুনম কলকাতায় এলেন মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিতেই৷ ৯৯-র কলকাতা৷ মমতার ডাকে ২১ জুলাইয়ের বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছিলেন বিজেপির প্রমোদ মহাজন৷ যিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর রাজনৈতিক উপদেষ্টাও বটে৷ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা তখন বাইরে থেকে এনডিএ-কে সমর্থন করেছিলেন৷

এছাড়া বিজেপির যুব মোর্চার সমাবেশে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নিন্দায় মুখর হলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহাও। কলকাতা ছেড়ে পালিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস বলে দাবি করেছেন তিনি। এদিন রাহুল সিনহা বলেন, বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর বলিদান দিবসে যে যুব উৎসব হচ্ছে তাতে কলকাতা বিজেপিময় হয়ে উঠেছে। ‘আমিত শাহের অন তৃণমূল কংগ্রেস গন’। কলকাতা ছেড়ে পালিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের সরকার সমস্ত শিল্পকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সমস্ত বিষয়ে পিছিয়ে পড়েছে বাংলা। এখন তোলা আদায়ের শিল্প চালাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল। জায়গায় জায়গায় চোলাই মদের দেদার ব্যবসা চলছে।

অন্যদিকে, বিজেপির এদিন সভা ও দলের সভাপতি অমিত শাহের মন্তব্যকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস। এদিন সভার পর প্রতিক্রিয়ায় শিল্পমন্ত্রী তথা দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপির কোনও ব্যাংকই নেই৷ নীরব মোদী, বিজয় মালিয়ারা ওদের ব্যাংক লুঠ করেছে৷’’

এদিনের সভায় অমিত শাহ এনআরসি ইস্যুতে একহাত নেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর দাবি, মমতা দিদি আগে লোকসভায় এনআরসির বিরোধিতা করেছিলেন৷ লোকসভা অচল করে অনুপ্রবেশকারীদরে ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিলেন৷ আর এখন উল্টো কথা বলছেন৷ এর থেকেই স্পষ্ট তিনি ভোট ব্যাংক সামলাতেই এসব কথা বলছেন৷ এতে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে৷ এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘বাংলার মানুষই তৃণমূলের ভোট ব্যাংক৷ মমতা মা-মাটি-মানুষের নেত্রী৷ জনতা যতদিন আছেন মমতা ততদিন থাকবেন৷’’ আবার কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি৷ তিনি বলেন, অমিত শাহ বলে দিলেন ৪০ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী৷ সুপ্রিম কোর্ট বলছে এখনও একজনও অনুপ্রবেশকারী নেই৷ এটা খসড়া৷ এখনও চূড়ান্ত তালিকা হয়নি৷ আর তা যতক্ষণ না হচ্ছে প্রত্যেকে ভারতের নাগরিক৷ শুধু সুপ্রিম কোর্ট কেন, নির্বাচন কমিশনও তো বলেছে প্রত্যেকের ভোটাধিকার রয়েছে৷ তার মানে এটা পরিষ্কার ৪০ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে তা নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে৷ অধীরের কথায়, ‘‘যদি অমিত শাহ বা বিজেপি অনুপ্রবেশকারী পাঠানোর ক্ষেত্রে আন্তরিক হত, সত্যিই সচেষ্ট হত তবে এনআরসির খসড়া বানানোর আগে উচিৎ ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যার্পণ চুক্তি করে নেওয়া৷ তবেই তো পাঠাতে পারবেন এতগুলো মানুষকে৷ না হলে বাংলাদেশ কি ৪০ লক্ষ মানুষকে নেবে৷’’

অাবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন-র অভিযোগ, ‘‘বাংলাকে অপমান করেছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ বাংলাকে অপমানের দায় মেনে নিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে তাদের৷’’ এদিন তৃণমূলের তরফে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে বিজেপিকে৷ তবে ক্ষমা না চাইলে আইনের পথে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তৃণমূলের এই সাংসদ৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘একদিন সময় নিন, ক্ষমা চান৷ আমরা ভিডিও রেকর্ড করে রেখেছি৷ নইলে আইন কথা বলবে৷’’

মেয়ো রোডে সভা করা নিয়েও এদিন বিজেপিকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি ডেরেক৷ তিনি বলেছেন ‘‘মেয়ো রোড একটি ছোট জায়গা, সেখানে কত লোক ধরে তা সবাই জানে৷’’

শনিবার মেয়ো রোডে সভামঞ্চে অমিত শাহ তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে সরব হন৷ কেন্দ্র নানা প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা পাঠাচ্ছে, সেই পাঠানো টাকা কোঠায় যাচ্ছে? প্রশ্ন তোলেন অমিত শাহ৷ অমিত শাহ এদিন দাবি করেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল সরকার দুর্নীতি করে টাকা গায়েব করে দিচ্ছে’’। এদিন নারদা-সারদা, রোজভ্যালি, সিন্ডিকেট নিয়েও সরব হন৷ আর তাতেই বেজায় চটেছে শাসক দল৷ বিজেপির পালটা হিসেবে এদিন তৃণমূল তাদের সভাকে ‘ফ্লপ’ বলে আখ্যা দেয়৷ ফ্লপ শো হওয়ার জন্যই নানা অজুহাতে ওরা বাংলাকে দুষছেন বলেও দাবি করা হয় তৃণমূলের তরফে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *