BRAKING NEWS

এনআরসির পক্ষে সওয়াল বিজেপির, সমালোচনা তৃণমূলের, দুই দলই রাজনীতি করছে অভিযোগ কংগ্রেসের

কলকাতা, ১১ আগস্ট (হি স): বিজেপির যুব স্বাভিমান সমাবেশ থেকে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে সরব বিজেপি নেতৃত্ব । শনিবার কলকাতার মেয়ো রোডের এই সমাবেশ থেকে এনআরসি-র পক্ষে সওয়াল করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ, পুনম মহাজন, সমীক ভট্টাচার্য, মুকুল রায়, রাহুল সিনহা সহ সব নেতারাই | পাশাপাশি এবিষয়ে সুর চড়ান রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে | যদিও এবিষয়ে বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করেন তৃণমূল নেতৃত্ব | অন্যদিক আজ এই ইস্যুতে একইসঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূলকে বিঁধলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

শনিবার কলকাতার মেয়ো রোডে বিজেপির যুব স্বাভিমান সমাবেশ থেকে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে সুর চড়ালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ | এদিন তিনি বলেন, প্রতিটি অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্ণিত করে ফেরৎ পাঠানো হবে | তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিরোধিতা যতই হোক, নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে অসমের এনআরসি-র কাজ শেষ করা হবে। এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে অমিতবাবু প্রশ্ন তোলেন, আপনি আজ কেন এত প্রতিবাদ করছেন? ২০০৫-এ আপনি এই বিষয়ে লোকসভায় কত কান্ড করেছিলেন। আজ এই অনুপ্রবেশকারীরা আপনাদের ভোটব্যাঙ্ক হয়ে উঠেছে, তাই না? এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভূমিকারও সমালোচনা করেন বিজেপি সভাপতি। তিনি মমতা-রাহুলের উদ্দশ্যে প্রশ্ন করেন, “আপনারা স্পষ্ট করে বলুন। দেশের নিরাপত্তা না ভোটব্যাঙ্ক—কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? অসম চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল রাজীব গান্ধীর সময়ে। বিজেপি ওই চুক্তি করেনি। বক্তৃতার মাঝেই অমিতবাবু সমবেতদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশীরা বাংলার ক্ষতি করছে কি না? ওদের বার করে দেওয়া উচিত কি না? জনতা সহর্ষে ইতিবাচক উত্তর দেয়। বিজেপি সভাপতি তখন বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস সবাইকে বোঝাচ্ছে বিজেপি শরনার্থীদের সবাইকে বার করে দেবে। আমরা শরনার্থীদের সবাইকে আশ্বস্ত করছি। সসম্মানে এ দেশে থাকতে পারবেন। অমিতবাবু বলেন, এনআরসি নিয়ে সংসদে চর্চা হচ্ছে। মমতাজী দিল্লিতে গিয়ে বিরোধী প্রচার করছেন। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, অসমের প্রতিটি অনুপ্রবেশকারীকে খুঁজে বার করাটাই আমাদের লক্ষ্য। আপনারা এটা চান, না চান না? সমবেতভাবে উপস্থিত জনতা ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দেন।

এদিন তিনি তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ২০১৬-র নাগরিক সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে বাংলাদেশ-পাকিস্থান-আফগানিস্থানের শরনার্থীদের ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রশ্ন তোলেন, লোকসভা-রাজ্যসভায় যখন এই বিল আসবে, কী বলবেন বিরোধীরা?

এনআরসি প্রসঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘণের যে অভিযোগ তূলছেন বিরোধীরা, তারও কড়া সমালোচনা করেন অমিতবাবু। বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না কারও। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে শান্তি দিন।” জনতার উদ্দেশ করে তিনি প্রশ্ন করেন, “এনআরসি-কে আপনারা সমর্থন করেন, না করেন না?” উত্তরে জনতা বলে, “হ্যাঁ করি।” অমিতবাবু বলেন, “ওভাবে বললে হবে না। মমতাদির কানে আওয়াজ ঢোকে না। এমন জোরে বলুন, যাথে ওঁর কানে আওয়াজ যায়।” এবার জনতা আরও জোরে বলে \”হ্যাঁ করি\”।

এ দিনের সমাবেশে এনআরসি নিয়ে সরব হন বিজেপি-র অন্যান্য নেতারাও। অসমের নাগরিকপঞ্জির প্রসঙ্গে বিজেপির যুব মোর্চার সভানেত্রী পুনম মহাজনের বলেন, ”দিল্লিকে লন্ডন বানানোর কথা বলেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে পারেননি। অমেঠিকে সিঙ্গাপুর করতে ব্যর্থ হয়েছেন রাহুল গান্ধী। তবে পশ্চিমবাংলাকে বাংলাদেশ বানিয়ে ফেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়”। এপ্রসঙ্গে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, মমতা দিদি আর আমার কাছে মমতা নেই৷ তিনি আমার কাছে এখন ইউটার্ন দিদি হয়ে গিয়েছেন৷

এদিন এই একই ইস্যুতে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “পশ্চিমবাংলাকে আমরা বাংলাদেশ হতে দেব না। বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে আসা হচ্ছে ভোটের রাজনীতির জন্য। তাতেও কাজ না হওয়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের।”

এ দিন সমাবেশে শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বীকৃতির শর্তে ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। এই ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে? অসমকে টুকরো করে সিলেট করা হয়েছিল। সিলেট গিয়েছিল পাকিস্থানে। সেই সিলেটের মানুষ এখন কেন অসমে আসবে? অসমের মানুষ আজ সেই প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের মুসলমান নাগরিকদের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ওপার বাংলায় হিন্দুদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালানো হলে এই বাংলার কোনও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী সরব হননি। মুখ্যমন্ত্রী ওঁদের জন্য চোখের জল ফেলেননি।

দলের অন্যতম জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, “এনআরসি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা শরনার্থীদের সঙ্গে ছিলাম, আছি। অনুপ্রবেশের বিরুদ্দে লড়াই চলবে।\”

এদিনের সমাবেশে মুকুল রায় বলেন, ১৯৯৮-তে তৃণমূল কংগ্রেসের গোড়া থেকে আমি দেখেছি ওই দলের প্রতিটি নির্বাচনী ইস্তেহারে অনুপ্রবেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলনেত্রী বলতেন, ওদের জন্য নাকি বামপন্থীরা এ রাজ্যে ১০০টি বিধানসভার আসন পায়। তাহলে আজ কি হিসেবটা উল্টে গেল? জেএমবি-র যে সব জঙ্গি সীমান্ত পেরিয়ে এসে সন্ত্রাসবাদী কাজ করতে চাইছে, দলনেত্রী তাদের আড়াল করতে চাইছেন?

তবে এদিন বিজেপির সভা শেষ হতেই পাল্টা উত্তর দেয় তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসও | এবিষয়ে বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও দলের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন | এদিন অমিত শাহ বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীরাই তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক। অমিত শাহের এই কথার জবাব দিয়ে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, তৃণমূলের ভোট-ব্যাঙ্ক সারা বাংলায়। বাংলার সাধারণ মানুষই তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্ক। বরং বিজেপির এখানে কোনও ভোট-ব্যাঙ্ক নেই। অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবেন বলেও বার্তা দেন তিনি। সেই কথারই প্রত্যুত্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ভোটের আগে বাজার গরম করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। আর ভোট-ব্যাঙ্কের ইস্যু তুলে লাভ নেই। বাংলার মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। তাই যাদের কোনও ভিত্তিই নেই বাংলায়, তারা ওসব বাজে প্রচার চালিয়ে কী আর করবে।

এদিকে, অমিত শাহের ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি ইস্যুতে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অমিত শাহ। যা নিয়ে ডেরেকের পাল্টা প্রশ্ন, অমিত শাহ প্রশ্ন তোলার কে? তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, এনআরসি নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট। তৃণমূল সস্তার রাজনীতি করে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর দুর্নীতির কাদা ছুঁড়লে, বাংলার মানুষ অমিত শাহকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে বলেও এদিন সাংবাদিক বৈঠকে হুঁশিয়ারি দেন ডেরেক। বলেন, \”একদিন এমন আসবে, যেদিন বাংলা থেকে পালিয়ে যাবেন অমিত শাহ।\”

এদিকে, আজ এনআরসি নিয়ে একইসঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূলকে বিঁধলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। শনিবার অধীর অভিযোগ করেন, এনআরসি নিয়ে একদল করছে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি। আর একদল বাঙালি নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করছে। দুয়েরই ফল হতে পারে খারাপ। এদিন বিজেপির সমালোচনা করে অধীরবাবু বলেন, যারা অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত হবেন, তাঁদের কোথায় পাঠানো হবে? যেহেতু তাঁরা বাঙালি, তাই বাংলাদেশেই পাঠাতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ কেন ফেরত নেবে? বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে? বিজেপি যদি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানোর ব্যাপারে আন্তরিক হত, তাহলে আগে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে তবে এনআরসি করত। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন ভোটাধিকার থাকলে কেউ অবৈধ হয় কীভাবে। লোকসভা ভোটের আগে বাজার গরম করতেই এই খসড়া নাগরিকপঞ্জী তৈরি করেছ কেন্দ্র। কারণ সুপ্রিম কোর্ট আগেই বলেছে এটা চূড়ান্ত তালিকা নয়।

অন্যদিকে, তৃণমূলকেও আক্রমণ করে তিনি বলেন, বাঙালি নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করছে রাজ্যের শাসক দল । অধীরবাবুর আশঙ্কা, জাতীয় নাগরিকপঞ্জির খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পরে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালিকে বাঁচানোর কথা বলছেন, তাতে অসমীয়া ভাবাবেগ মাথা চাড়া দিতে পারে। হয়তো অসমে ফের শুরু হতে পারে বাঙালি খেদাও আন্দোলন। ১৯৮৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী অসম চুক্তি করে বাঙালি খেদাও থামিয়েছিলেন। কেউ কেউ হয়তো চায়, অসমে ফের গন্ডগোল শুরু হোক।

এবিষয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের প্রতি তাঁর আবেদন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে অনর্থক রাজনীতি করবেন না। এনিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর সতর্কবার্তা, সংকীর্ণ রাজনীতির কথা শুনবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *