BRAKING NEWS

কর্ণাটক জোটের খেলা এবং বিজেপি

সায়ন্তক চৌধুরী

দাক্ষিনাত্যে পদ্ম ফুটলো বটে৷ কিন্তু সৌরভ ছড়াতে পারলো না৷ জাতীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে রাজ্যস্তরের রাজনৈতিক নেতাদেরও অভিমুখ ছিল দাক্ষিণাত্যের দিকে৷ এনিয়ে চাপান উতোর কম হয়নি৷ এখনো আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে দাক্ষিণাত্যে রাজ্য কর্ণাটক৷ মঙ্গলবার ছিল ভোট গণনার দিন৷ শুরুতেই পদ্মবনে ছিল হাওয়ার দাপাদাপি৷ দেশ জুড়ে বিজেপি ঘরানায় ছিল উল্লাস৷ গণনায় এগিয়ে ছিল বিজেপি৷ কিন্তু, এখনও কেউ জানতো না যে অপেক্ষা করছিল চমক৷ সময় যতই গড়াতে লাগলো ততই যেন পদ্মবনে ফুটে উঠা কলি যেন ঝরতে শুরু করল৷ আসল প্রপ্তি থেকে বিজেপি প্রথম স্থান অধিকার করলেও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে যেন পিছিয়ে পড়লো৷ দেবগৌড়ার কোলে দোল খেতে লাগলো রাহুল৷ জাতীয় দল কংগ্রেস আঞ্চলিক দল জেডিএস জোটের কাছে আত্মসমর্পণ করল৷ উদ্দেশ্য একটাই ঠেকাতে হবে বিজেপিকে৷ তাই জাতীয় দলের অহং ছেড়ে রাহুল দেবগৌড়ার হাত ধরে ঝুলে রইলেন৷ অথচ ভোট গণনার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে যে, বিজেপি পেয়েছে ১০৪টি আসন, কংগ্রেসের ঝুলিতে গেল ৭৮টি এবং জেডিএস জোট বাগিয়ে নিল ৩৮টি আসন৷ অন্যান্যরা পেয়েছে দুটি আসন৷ কংগ্রেস আর জেডিএস জোটের আসন যোগ করলে দাঁড়ায় ১১৫টি আসন৷ এদিকে বিজেপির মাত্র ১০৪টি আসন৷ সুতরাং রাহুলকে পায় কে? নিজের নাক কেটে বিজেপির যাত্রাভঙ্গের কাছে নেমে পড়লেন রাহুল৷ চট জলদি জেডিএসকে সমর্থন জানালেন রাহুল৷ বলে দিলেন- জেডিএসের কুমার স্বামী মুখ্যমন্ত্রী হবেনি৷ তবুও ঠেকাতে হবে বিজেপিকে৷ ২০১৯ সালের আগে বিজেপিকে আর কোন রাজ্যে দিতে চান না বিরোধী দলগুলি৷ সুতরাং নড়ে চড়ে বসলেন জেডিএস৷ যেখানে সরকার গঠনের কথা ছিল বিজেপি সেখানে এখন স্বপ্ণ দেখছেন কুমার স্বামী৷ কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার স্বপ্ণ দেখছেন স্বামী৷ ইতিমধ্যে কংগ্রেস ও জেডিএস রাজ্যপালে কাছে সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন৷

একেই বলে কংগ্রেসের দুর্ভাগ্য৷ কেননা, কর্ণাটক ছিল কংগ্রেসের দখলে৷ বলা যেতে পারে মোদি ঝড়ে কংগ্রেস উড়ে গেল৷ সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন না পেলেও সরকার গঠনের পক্ষে আসল সংখ্যা ছিল৷ কংগ্রেসের ডাকে সাড়া দিয়ে অমিত শাহকে ফেলে দিল বেকায়দায়৷ সেই সাথে কর্ণাটক নির্বাচনে একটা বিষয় স্পষ্ট হল৷ তা হল বিরোধী দলগুলি এককাট্টা হলে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে কিছুটা ব্যাকফুটে পড়বে বিজেপি৷ তবে ইতিমধ্যে কর্ণাটকে যে নাটক চলছে তার যবনিকাপাত এখনো হয়নি৷ শেষ অংকের খেলা মনে হয় কিছুটা বাকি রয়েছে৷ এদিকে, একাংশ রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য হচ্ছে যে, দেবগৌড়ার সাথে অমিত শাহ এর সম্পর্ক খুব ভালো৷ তাছাড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিদের বেনিয়াদের মত অমিতের মেজাজ৷ সেই হিসাবে গুজরাটের বেনিয়া অমিত শাহ এত সহজে কর্ণাটক ছেড়ে দেবে বলে মনে হয় না৷ তাই বলা যেতে পারে কর্ণাটকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন উত্তাল৷ ছোট দলগুলির এখন জামাই আদর৷ মনে হয় যেন আঞ্চলিক দলগুলি জাতীয় দলগুলির চালিকা শক্তি৷ দেশের জাতীয় রাজনীতিতে এযেন বড় বিপর্যয়ের সংকেত৷ কেননা, জাতীয় দলগুলি ছোট দলগুলি জয়ী নেতাদের বাগে আনার চেষ্টা করবে৷ চলবে ঘোড়া বেচা কেনার খেলা৷ ফলে আঞ্চলিক দলগুলির রমরমা কোনভাবেই সুখকর নয়৷ কেননা ছোট দলগুলি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না৷ পারবে বড় দলের প্রতি সহায়ক ভূমিকা রাখতে৷ ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির এমন খেলা দেখেছে দেশবাসী৷ এবার কর্ণাটকে বিজেপি নতুন করে খেল দেখাবে নাকি কংগ্রেস, জেডিএস জোট মেনে নেবে- তাই দেখার বিষয়৷ সেই সাথে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, কর্ণাটকে রাহুলের করিশ্মা বলতে কিছুই ছিল না৷ কংগ্রেসের সভাপতি হবার পর নির্বাচনে চমক দেখাতে পারলেন না৷ বরং টিকে থাকার জন্য বেঁচে নিলেন সমঝোতার পথ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *