BRAKING NEWS

সপ্তম বেতন কমিশন দেব, কিন্তু কাজ চাই, ফেলে রাখা চলবে না, হিসাব দিতে হবে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ মার্চ ৷৷ উন্নয়নের জন্য কর্মসংসৃকতি ফেরানো খুবই জরুরি৷ তাই, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে কর্মসংসৃকতি

বিধানসভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷

ফেরাতেই জোর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর সাফ কথা, সপ্তম বেতন কমিশন দেব৷ কিন্তু, তার বদলে কাজ চাই৷ কোনও কাজ ফেলে রাখা চলবে না৷ প্রয়োজনে সকাল ৯টা থেকে কাজ শুরু করুন৷ কারণ, প্রতিদিন কাজের হিসেব দিতে হবে৷ তার ব্যতিক্রম  হলেই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে৷ একই সাথে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে হুশিয়ারি দিয়েছেন, রাজ্যের ব্যবসা করতে হলে এ রাজ্যের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে৷ তা না হলে এখানে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না৷ এভাবেই মঙ্গলবার দ্বাদশ বিধানসভার প্রথম অধিবেশনের তৃতীয় দিনে রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে অন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গেলো৷

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ২৫ বছর শাসনের পরও এ রাজ্যে গরীব কমেনি৷ প্রতিটি ঘরে উজ্জ্বলা যোজনায় এলপিজি কানেকশন পৌছায়নি৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এ রাজ্যে সকলকে এতোদিন সমান ভাবে দেখেনি পূর্বতন সরকার৷ তাই, উজ্জ্বলা যোজনায় কেবলমাত্র দুইটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিনামূল্যে এলপিজি কানেকশন দেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এই সরকার এ ধরনের দ্বিচারিতা কখনই করবে না৷ সারা রাজ্যে ৬০ টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিনামূল্যে চার লক্ষ এলপিজি কানেকশন দেওয়া হবে৷ ১৯ মার্চ পর্যন্ত ৪২ হাজার এলপিজি কানেকশন দেওয়া হয়েছে৷ বাকি ৩ লক্ষ ৫৮  হাজার কানেকশন বিনামূল্যে দেওয়া হবে৷ আইওসিকে এক মাসের মধ্যে ১ লক্ষ এলপিজি কানেকশন দিতে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান নির্দেশ দিয়েছেন৷

মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রধানমন্ত্রী বিমা যোজনা নিয়েও পূর্বতন সরকারের ব্যর্থতায় বিরোধীদের বিঁধেছেন৷ তাঁর কথায়, ১২ টাকা দিয়ে ২ লক্ষ টাকার বিমা যোজনা এনেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু এ রাজ্যে এই যোজনা সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছেনা৷ তিনি জানান, সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের বৈঠকে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷ তাতে, ব্যাঙ্ক আধিকারিকরা এই যোজনার সঠিক প্রচার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের গাফিলতিতে গরীব মানুষ বিমা যোজনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ এর দায় রাজ্য সরকার কোনও ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না৷ ২০১৫ সালের ১৫ মে এই যোজনা চালু হলেও পূর্বতন সরকার এবিষয়ে কোনও গুরুত্ব দেয়নি৷ তাই, ইউবিআইকে নির্দেশ দিয়েছি ১০০ দিনের মধ্যে রাজ্যে গরীব অংশের মানুষের যত ব্যাঙ্ক একাউন্ট আছে তাদের প্রধানমন্ত্রী বিমা যোজনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুশিয়ারি, এই কাজে ব্যর্থ হলে এ রাজ্যে তাদের ব্যবসা করা মুশকিল হবে৷

এদিন ফসল বিমা যোজনা নিয়েও পূর্বতন সরকারকে এক হাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা এ রাজ্যে সঠিক ভাবে চালু হলে গত বছরের বন্যায় কৃষকরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তা থেকে সুফল পেতে পারতেন৷ রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রে কাছে টাকা চাইতে হতো না৷ তাঁর বক্তব্য, ১০০ দিনের মধ্যে সমস্ত কৃষকদের কাছে ফসল বিমা যোজনা নিয়ে পৌছতে আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ কোন আধিকারিক এই কাজ করতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, কর্মচারীদের সপ্তম বেতন কমিশন দেবে নতুন সরকার৷ এ জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কিন্তু জনগণের সেবার কর্মচারীদের কাজ করতে হবে৷ এই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ, গরীব, তপশিলী জাতি, তপশিলী উপজাতি, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের কল্যাণে কর্মচারীদের শামিল হতে হবে৷ সমস্ত সরকারি দফতরে কর্মসংসৃকতি গড়ে তুলতে হবে৷ শুধু তাই নয়, সময়ের কাজ নির্দিষ্ট সময়েই শেষ করতে হবে৷ কোন কাজ ফেলে রাখা যাবে না৷ প্রয়োজনে সকাল ৯টা থেকে শুরু করুন এবং অধিক রাত পর্যন্ত কাজ করতে থাকুন৷ মুখ্যমন্ত্রীর হুশিয়ারি, সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করতে ব্যর্থ হলে তার জবাব দিতে হবে৷ আধিকারিকদের এদিকে সর্তক নজর রাখতে হবে৷ তাঁর বক্তব্য, সরকার ডিজিট্যাল ফাইলিংয়ের ব্যবস্থা করছে৷ সাথে যোগ করেন দুই বছরের জন্য বদলি নীতি তৈরি করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে না৷ এমনকি সরকারি চাকরির জন্য কমিউনিস্ট, আইপিএফটি কিংবা বিজেপির পরিচয় লাগবে না৷ তাঁর আশ্বাস, যারা যোগ্য তারাই চাকরি পাবেন৷

এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, রাজ্যপালের ভাষণে এই সরকার জনজাতিদের কল্যাণে কর্মসূচির সুষ্পষ্ঠ ছাপ রয়েছে৷ রাজ্য সরকার জনজাতিদের আর্থ সামাজিক, কৃষ্টি, সংসৃকতি ও ভাষার উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে৷ তাঁর দাবি, পর্যটনকে ঘিরে খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে৷ তাই নর্থইস্ট সার্কিটের মাধ্যমে এ রাজ্যে পর্যটনকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে৷ এরই সাথে সার কারখানা গড়ে তোলার মাধ্যমেও কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত সম্ভব হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এ রাজ্যে সার কারখানা গড়ে তোলা হলে বাংলাদেশের বাজার সহজেই দখল করা যাবে৷

মুখ্যমন্ত্রী রেগা প্রকল্প নিয়েও এদিন বিরোধীদের তুলোধুনো করেছেন৷ তাঁর কথায়, দিল্লি গিয়ে রেগার রিপোর্ট নিয়ে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গেছে৷ তাঁর দাবি,  পূর্বতন সরকারের আমলে রেগার কাজের হিসেব তাঁরা দিতে পারেননি৷ ২৫টি প্রশ্ণের মধ্যে ২৩ টি প্রশ্ণের উত্তরই চরম অসন্তোষজনক৷ তাই কেন্দ্রীয় সরকার রেগায় টাকা বরাদ্দ করছিলনা৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী রেগায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা করে রিপোর্ট পাঠাতে বলেছেন৷ তবেই অর্থ মঞ্জুরি দেওয়া হবে৷ আপাতত ২৪১ কোটি টাকা রেগায় মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তবে রিপোর্ট পাঠালেই কেন্দ্র রাজ্যকে এই টাকা দেবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সামনে গড়িয়া পূজা এবং বাংলা নববর্ষ৷ তাই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে রেগা প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছি৷ মুখ্যসচিবকে ১০ দিনের শ্রমদিবস সৃষ্টির নির্দেশ দিয়েছেন৷

এদিন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের ভাষণকে সমর্থন করেন এবং বিরোধীদের আনা সংশোধনীর বিরোধীতা করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *