BRAKING NEWS

সিপিএমের রাজত্বে নির্বাচনের পর রক্তগঙ্গা বয়েছে, এবারই ব্যতিক্রম ঃ মন্ত্রী রতনলাল

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ মার্চ ৷৷ রাজ্যপালের ভাষণে সন্ত্রাস নিয়ে কোনও উল্লেখ নেই৷ এই দাবিতে সংশোধনী এনে লেজেগোবরে হয়েছেন

সোমবার বিধানসভায় বক্তব্য রাখছেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ ছবি- নিজস্ব৷

বিরোধীরা৷ সোমবার দ্বাদশ বিধানসভার প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সরকার পক্ষ এই সংশোধনীর বিরোধীতায় বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন৷ সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী রতনলাল নাথের কথায়, সিপিএমের রাজত্বে প্রতি নির্বাচনের পর সারা রাজ্যে রক্তগঙ্গা বয়েছে৷ কিন্তু এবারই ব্যতিক্রম৷ কারণ, এবার সিপিএম পরাজিত হয়েছে৷ তাই, সারা রাজ্যে শান্তির পরিবেশ কায়েম করে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে৷ তাঁর কটাক্ষ, উপদেশ দিয়ে মুর্খদের শোধরানো যায় না৷ সন্ত্রাস ইস্যুতে আমরা বোধহয় বেশি গান্ধীগীরি করছি৷ এদিন, মুখ্যসচেতক কল্যাণী রায়, ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য আশীষ কুমার সাহা, বিশ্ববন্ধু সেন, সুশান্ত চৌধুরী, বৃষকেতু দেববর্মা এবং ডাঃ দীলিপ দাসও সন্ত্রাস ইস্যুতে বিরোধীদেরই একহাত নিয়েছেন৷

সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর কথায়, সিপিএমের রাজত্বে অনেক বিধায়ক খুন হয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, গত ২৫ বছরে খুন, সন্ত্রাস এবং ধর্ষণের ঘটনা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে৷ পূর্বতন সরকার এই রাজ্যকে নেশার করিডোর বানিয়ে রেখেছিলো৷ ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর মান্দাইতে ১১জনকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিলো৷ সম্প্রতি সাংবাদিক শান্তুনু ভৌমিক ও সুদীপ দত্ত ভৌমিককে খুন করা হয়েছে৷ তিনি উষ্মা প্রকাশ করে জানতে চেয়েছেন, একটি খুনেরও সিবিআই তদন্ত দিলেন না কেন? জিরানীয়ায় রবি ও লিটনের খুনের তদন্তের প্রয়োজন বোধ করেননি কেন? সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী রতন লাল নাথের কথায়, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বিরোধী দলনেতার এখন আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন৷ বিরোধীদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, একি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে৷

এদিন সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, ২৩ মার্চ বিধানসভায় রাজ্যপাল যে ভাষণ দিয়েছেন তা এই সরকারের সুসংহত পরিকল্পনার এক আলোর দিশা৷ বিজেপি- আই পি এফ টি নির্বাচনের আগে ভিশন ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছিল তা শুধু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই নয়৷ তার সার্বিক রূপায়ণে এই সরকার দায়বদ্ধ৷ তিনি বলেন, রাজ্য এখন এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের মুখে দাঁড়িয়ে৷ কেন্দ্রীয় সরকার এই অঞ্চলের উন্নয়নে আন্তরিক৷ অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী তিনবার রাজ্য সফর করে গেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর সঠিক পদক্ষেপ ও বাস্তব সম্মত পরিকল্পনায় বিকাশের এক নতুন পথ এখন আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে৷ প্রধানমন্ত্রী যে আশা-ভরসা রেখেছেন তার পূর্ণ মর্যাদা দেবে সরকার৷ শ্রীনাথ বলেন, উন্নয়ণের অর্থ হচ্ছে রাজ্যের মানুষের সার্বিক বিকাশ৷ জম্পুই হিলের শেষ প্রান্তে যে মানুষ রয়েছেন তাদেরও আর্থ-সামাজিক বিকাশ ঘটানো৷ তিনি বলেন, মানুষ পরিবর্তন চেয়ে ছিলেন৷ ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীনভাবে রক্তপাতহীন এক নিঃশব্দ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে মানুষ আমাদের জয়ী করেছেন৷ রাজ্যের মানুষের কল্যাণে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ৷ সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষিত সমস্ত প্রকল্পের রূপায়ণে সরকার উদ্যোগ নেবে৷ প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ণ সবকা সাথ সবকা বিকাশ এর লক্ষ্যে কাজ করবে এই সরকার৷ তিনি বলেন স্বাধীনতার পর এমন বাস্তবোচিত প্রকল্প দেশবাসী দেখেন নি৷ দেশের মানুষ উপকৃত হচ্ছেন৷ এর সুফল পাবেন ত্রিপুরাবাসীও৷ এই সরকারের অনেক স্বপ্ণ৷ আজ ১৮ দিন হল৷ আমাদের চলার পথে শক্তি আমাদের প্রধানমন্ত্রী৷

রাজ্যপালের ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সরকারী মুখ্য সচেতক বিধায়ক কল্যাণী রায় বলেন, রাজ্যের মানুষ দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিজেপি-আইপিএফটি সরকারের হাতে রাজ্যের দায়িত্বভার তুলে দিয়েছে৷ গণ প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়ে ইতিমধ্যেই নতুন সরকার তাঁদের কাজ শুরু করেছে৷ তিনি বলেন, সকল অংশের মানুষের জন্য একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরী হয়েছে৷ বিধায়ক রতন চক্রবর্তী বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতি বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েছে তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি৷ রাজ্যের বর্তমান সরকার জাতি উপজাতির মধ্যে মৈত্রী রূপায়ণের মধ্য দিয়ে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে৷

এদিন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য আশীষ কুমার সাহাও বিরোধীদের সংশোধনীর বিরোধীতায় বক্তব্য রাখেন৷ তাঁর কথায়, সন্ত্রাসের কথা বলে বিরোধীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন৷ আসলে নিজ দলের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না বিরোধীরা৷ তাঁর পরামর্শ, বিগত ২৫ বছরের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে নতুন সরকারকে সহযোগিতা করুন৷ এদিন তিনি  সাথে যোগ করেন, মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় এই সরকার সচেষ্টা৷ রাজ্যের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবার ব্যাপারে এই সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ৷

বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন আরোও চড়া সুরে বিরোধীদের বিধেছেন৷ তাঁর কথায়, রত্নাকর দস্যু এখন বাল্মিকি হতে চাইছেন৷ তাঁর আরও দাবি, গণতন্ত্রের মানোন্নয়নে নতুন সরকার কাজ চালিয়ে যাবে৷ বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরীও সন্ত্রাস ইস্যুতে বিরোধীদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, এই নির্বাচনে সিপিএম ক্ষমতায় আসলে অনেকে খুন হয়ে যেতেন৷ ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর মান্দাইয়ে ১১জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে এদিন তিনি বিরোধীদের বিধেছেন৷ এদিন তিনি সাথে যোগ করেন, বিগত দিনগুলিতে রাজ্যের পর্যটনকেন্দ্রগুলির্ দিকে সঠিকভাবে নজর দেয়া গেলে সেখানে অনেক বেশী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেত৷

বিধায়ক ডাঃ দিলীপ কুমার দাস বলেন,  রাজ্যের রোগীদের উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেবার ক্ষেত্রে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত৷ বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা বলেন, রাজ্যপালের ভাষণে উপজাতিদের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়নের বিষয়টি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *