নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ১ ফেব্রুয়ারি৷৷ সাধারণ বাজেটে বড়ই সাবাধানি পদক্ষেপ নিল মোদি সরকার৷ মূলতঃ কৃষক এবং
স্বাস্থ্য খাতে চমক দেওয়ার চেষ্টা প্রতিফলিত হয়েছে ২০১৮-১৯ সাধারণ বাজেটে৷ তবে, মধ্যবিত্তের ঝুলি কার্যত শূন্যই রইল৷ অবশ্য মহিলা এবং প্রবীণদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছে অর্থমন্ত্রক৷ বেতন বাড়ানো নিয়ে সমালোচনা এড়াতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সাংসদদের মাইনে বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷ সাথে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও ভ্রমণের ভাতা সংক্রান্ত খরচে ২৯ শতাংশ কাটছাট করা হয়েছে৷ বেতন বাড়ানো হয়েছে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং সমস্ত রাজ্যের রাজ্যপালদেরও৷ এই বাজেটে অত্যাধিক খুশি হয়েছেন কর্পোরেটগোষ্ঠী৷ কারণ, আড়াই কোটি টাকার নীচে বাৎসরিক লেনদেন এমন কর্পোরেটদের কর কমানো হয়েছে৷ এদিকে, মোদি সরকার ব্যক্তিগত আয়কর এবং কর্পোরেশন করে এক শতাংশ সেস বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছে বাজেটে৷
দেশের আম আদমীর সুবিধা ও উন্নয়নের ধারাকে ধরে রাখার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ এদিন বেলা ১১টা নাগাদ লোকসভায় আর্থিক বাজেট পেশ করেন৷ টানা এক ঘন্টা ৪৫ মিনিট ধরে তিনি এই বাজেট পেশ করেন৷ এর আগে সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ান সংসদে পৌঁছান৷ তার আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ-র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সংসদ ভবনে পৌছান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷ পরে স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের অনুমতি নিয়ে বেলা ১১টা নাগাদ লোকসভায় আর্থিক বাজেট পাঠ করা শুরু করেন৷ এবারের বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কৃষি ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে৷ প্রত্যাশা মত বাজেটে কৃষি তথা গ্রামোন্নয়নে এবার জোর দিয়েছে মোদী সরকার৷ শুধু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট নয়, দেশের সর্বস্তরের মানুষের সুবিধার কথা ভেবেই এবারের সাধারণ বাজেট বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারনা৷ আর সেদিকে খেয়াল রেখে কৃষি তথা গ্রামোন্নয়নে জোর দেওয়া হবে মোদী সরকারের এই পূর্ণাঙ্গ বাজেটে৷ এবারের বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে একগুচ্ছ প্রস্তাব৷ বাজেট পেশ করার সময় হাসি মুখে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, এটা ঘোষণা করতে পেরে আমি খুশি যে, আসন্ন খারিফ মরশুমে উৎপাদিত ফসলের নূ্যনতম সহায়ক মূল্য বাড়িয়ে দেড় গুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ এছাড়া জোর দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ ভারতের স্যানিটারি ব্যবস্থাতেও৷ গ্রামাঞ্চলে প্রকাশ্যে মলত্যাগ বন্ধ করতে আগামী দুই বছরে অতিরিক্ত ২ কোটি টয়লেট নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ সর্বশিক্ষা অভিযানের মত সব মানুষের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে দুর্দান্ত প্রকল্প এনেছে সরকার৷ নাম দেওয়া হয়েছে আয়ুস্মান ভারত প্রকল্প৷ এদিকে, এবারের বাজেটে করকাঠামো অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ বাজেটে পেশের সময় সেনার আত্মত্যাগের কথাও তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷
এবারের বাজেট অনেক বেশি দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছে৷ বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, পরিবেশে, তপশিলি জাতি এবং উপজাতির উন্নয়নের উপর৷ এছাড়া বাজেট ঘোষণার পরই সস্তা হল পেট্রোল এবং ডিজেল৷ এক ধাক্কায় লিটার পিছু ২ টাকা কমে গেল পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম৷ ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি অন্তঃশুল্ক কমানোর ফলেই সস্তা হল পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম৷ এর ফলে কলকাতায় পেট্রোলের দাম হল লিটার পিছু ৭৩৭৪ টাকা৷ আর ডিজেলের দাম দাঁড়াল ৬৪৭৮ টাকা৷ এদিন সংসদে বাজেট বত্তৃণতায় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ঘোষণা করেছেন, মোবাইল ফোন, মোবাইল ফোনের কিছু যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে৷ একই হারে টেলিভিশনের কিছু যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ও বাড়িয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ যদিও অর্থমন্ত্রীর দাবি, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে দেশে মোবাইল এবং টেলিভিশনের উৎপাদন বাড়বে৷ মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগকে আরও চাঙ্গা করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির আশায় মোবাইল ফোনের উপর কাস্টমস ডিউটি ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হল জেটলির বাজেটে৷ জেটলির বাজেটে দাম বাড়ছে, ইলেকট্রিকি সিটি বিল, ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা, ভোজ্য তেল, ভেজিটেবিল জুস, জুতো এবং মোমবাতির৷
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বড় ঘোষণা করে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারি মেডিক্ল্যামে গরিবদের জন্য বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমা দেওয়া হবে৷ এর ফলে উপকৃত হবেন ৫০ কোটি দুঃস্থ মানুষ৷ হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় বর্তমানে তিরিশ হাজার টাকা করে পান গরিবরা৷ এবার ন্যাশনাল হেলথ প্রোটেকশন স্কিমে ১০ কোটি গরিব পরিবার, ৫০ কোটি গরিব মানুষ বছরে সর্র্বেচ্চ ৫ লক্ষ টাকা করে পাবেন৷ এদিন এই বাজেট প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানান, এটি একটি বৃহৎ বাজেট৷ যেখানে গরিব, কৃষক এবং আদিবাসীদের জন্য অনেক ঘোষনা করা হয়েছে৷ বিশ্বের আর্থিক শক্তি হিসেবে ভারতের অবস্থানকে আরও বেশি শক্তিশালী করল এই বাজেট৷ কেন্দ্রীয়মন্ত্রী এম জে আকবর জানান, বাজেটে ১ ঘন্টা ধার্য করা ছিল গরিবদের জন্য৷ এটি অবশ্যই ঐতিহাসিক ঘটনায়৷ বিরোধীরা খুব বেশি নেতিবাচক হয়ে পড়েছে৷ বাজেট প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, দেশের গরিব, গ্রাম এবং কৃষক, বয়স্কদের কথা মাথায় রেখে উন্নতমানের যোজনা রয়েছে বাজেটে৷ এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই৷ শুভেচ্ছা জানাই অর্থমন্ত্রীকেও৷ এই বাজেট পেশকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরি বলেন, দেশের ১০ কোটি পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বীমা একটি বিশাল উদ্যোগ৷
এই বিষয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেভেগোউডা বলেন, অর্থমন্ত্রী কৃষকদের অবস্থার উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছেন৷ কিন্তু কৃষকদের এবং গ্রামীণ মানুষদের সমস্যা অনেক বেশি৷ বাজেটে যে দাওয়াই দেওয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়৷ এই বাজেট ভোটমুখীও নয়, আবার একইসঙ্গে সব শ্রেণির মানুষের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে এই বাজেট বলে মন্তব্য করেন দিলীপ ঘোষ৷ তাঁর মতে, ভোটের দিকে তাকিয়ে বাজেট করা হয়েছে একথা বলা যাবে না৷ অর্থমন্ত্রী নিউ ইন্ডিয়ার কথা বলে বাজেট বেশ করেছেন সেই নিউ ইন্ডিয়ার মধ্যে গ্রামগঞ্জের মানুষও পড়েন কৃষকরা আত্মহত্যা করছে৷ তাই তাদের কথাও ভাবতে হচ্ছে কেন্দ্রকে৷
এছাড়া জোর দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ ভারতের স্যানিটারি ব্যবস্থাতেও৷ গ্রামাঞ্চলে প্রকাশ্যে মলত্যাগ বন্ধ করতে আগামী দু’বছরে অতিরিক্ত ২ কোটি টয়লেট নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ সর্বশিক্ষা অভিযানের মত সব মানুষের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে দুর্দান্ত প্রকল্প এনেছে সরকার৷ নাম দেওয়া হয়েছে আয়ুস্মান ভারত প্রকল্প৷ এদিকে, এবারের বাজেটে করকাঠামো অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ বাজেট পেশের সময় সেনার আত্মত্যাগের কথাও তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷
বাজেটে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ফিক্সড ডিপোজিট এবং রেকারিং ডিপোজিট স্কিমে টিডিএস ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ চিকিৎসা ব্যয় ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বয়ঃ বন্ধনা যোজনা ২০২০ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে৷ তাতে বিনিয়োগ সাড়ে সাত লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে পনের লক্ষ টাকা করা হয়েছে৷ মহিলাদের জন্যও বড় ঘোষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷ ইপিএফে এখন থেকে মজুরী আট শতাংশ কাটা হবে৷ উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগের লক্ষ্যমাত্রা ৫ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৮ কোটি করা হয়েছে৷
এদিকে, বেতন বাড়ানো হয়েছে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং সমস্ত রাজ্যের রাজ্যপালদের৷ বাজেট বত্তৃণতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেন রাষ্ট্রপতির বেতন বেড়ে হবে পাঁচ লাখ টাকা, উপরাষ্ট্রপতি পাবেন চার লাখ টাকা এবং সমস্ত রাজ্যের রাজ্যপাল পাবেন সাড়ে তিন লক্ষ টাকা প্রতিমাসে৷
এদিকে, সাংসদদের বেতন বাড়ানো নিয়ে বারবার সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ কারণ, সাংসদরা নিজেরাই নিজেদের মাইনে বাড়িয়ে নিতে পারেন৷ অর্থমন্ত্রী সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন৷ সাংসদদের লাগামছাড়া বেতন এবং অন্যান্য ভাতা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়ে কেন্দ্রের তরফে জানানো হল সাংসদদের বেতন এবং অন্যান্য ভাতা ১লা এপ্রিল ২০১৮ থেকে বদলাচ্ছে৷ নতুন আইন আসছে৷ সাংসদদের মাইনে পাঁচ বছর অন্তর সংশোধিত হবে মুদ্রাস্ফীতির হার অনুযায়ী৷ এছাড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের বেতন ও ভাতা সংক্রান্ত খরচে ২৯ শতাংশ কাটছাট করেছে মোদি সরকার৷ এইখাতে আগে বরাদ্দ হয়েছিল ৪০০ কোটি টাকা৷ এবার সেটা কমিয়ে করা হয়েছে ২৯৫ কোটি টাকা৷