BRAKING NEWS

শোচনীয় ফলাফল : শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টপাধ্যায়ের বাড়িতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

কলকাতা,২৮ জানুয়ারি,( হি.স.): কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলের প্রশ্নে রবিবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টপাধ্যায়ের বাড়িতে গেলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় । সঙ্গে ছিলেন সহ উপাচার্য (শিক্ষা) দীপক কর । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকস্তরে পরীক্ষায় খারাপ ফল হওয়ায় নয়া পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষামন্ত্রী । তার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তলব করেন তিনি । বৈঠক শেষে দায় এড়ালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য । বলেন, আগের ভিসির আমলে এই রেজাল্ট হয়েছে । রেজাল্ট নিয়ে উদ্বেগে আছি । সকলের সঙ্গে আলোচনা করব । প্রয়োজনে ছাত্র স্বার্থে নিয়ম বদলও করা হতে পারে ।
বৃহস্পতিবার বিএ ও বিএসসি-র পার্ট-১ পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে । বিএ-তে অর্ধেকেরও বেশি পরীক্ষার্থী পাশ করতে পারেননি । বিএ-তে পাশের হার ২০১৬-র ৭৫ শতাংশ থেকে নেমে হয়েছে ৪২.৫০ শতাংশ এবং বিএসসি-তে ২০১৬-র ৮৫ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৭১ শতাংশ । এ বার মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৪০ হাজার । বিএসসি পার্ট-১ পরীক্ষায় পাশ করতে না পেরে ওই দিন ফল প্রকাশের পরে নিউ আলিপুর কলেজের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেন বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ ।
ফল প্রকাশের পরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলির পঠনপাঠনের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে শিক্ষা মহলে । হাজিরার কড়াকড়ি নেই বলে অধিকাংশ কলেজেই পড়ুয়াদের ক্লাসে যেতেও অনাগ্রহ রয়েছে বলে অভিযোগ । পড়ুয়াদের যে নিয়মিত ক্লাস করা প্রয়োজন, এ দিন শিক্ষামন্ত্রীও সে কথা মনে করিয়ে দেন । এ দিন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) দীপক কর বলেন, ‘এক বছরেই পড়াশোনার মান খারাপ হয়ে গিয়েছে, এ রকম নয় । প্রয়োজনে ছাত্রদের স্বার্থে নিয়ম পরিবর্তন করা হতে পারে’। শিক্ষামহলের একাংশের বক্তব্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত । সেখানকার পরীক্ষা সংক্রান্ত নিয়ম বদলের বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরকে জানাতে হবে, সেটা দস্তুর নয় । তবে শিক্ষামন্ত্রী বারবারই বলেন, জনগণের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চলে । সেই টাকা যথাযথ ব্যবাহার হচ্ছে কিনা, তা সরকার অবশ্যই দেখবে । তবে পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকবে না ।
পুরনো নিয়মে, অনার্সের কোনও পরীক্ষার্থী জেনারেলের দু’টি বিষয়ের একটিতেও পাশ না করলেও তাঁকে পরের ক্লাসে তুলে দেওয়া হত । পরে সাপ্লিমেন্টারি দিতে হত । জেনারেলের পরীক্ষার্থী তিনটির মধ্যে একটি বিষয়ে পাশ করলেই তাঁকে যোগ্য হিসেবে ধরে নেওয়া হতো । তবে পরে সাপ্লিমেন্টারি দিয়ে পাশ করতে হত । ২০১৬ সালে নিয়ম বদলের পরে এখন অনার্সের পড়ুয়াকে জেনারেলে দু’টো বিষয়ের যে কোনও একটিতে পাশ করতেই হবে । অন্যটি পরে সাপ্লিমেন্টারি দিয়ে পাশ করতে হবে । আর জেনারেলের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের মধ্যে দু’টি বিষয়ে পাশ করা বাধ্যতামূলক । এই নতুন শর্ত যাঁরা পূরণ করেননি, তাঁদেরই আটকে দেওয়া হয়েছে ।
শিক্ষামন্ত্রী চট্টপাধ্যায় জানান, এই নিয়ম যে পরিবর্তন হয়েছে, তা শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তাঁর জানার কথা নয় । তেমনই উচ্চশিক্ষা দফতরও এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল নয় বলে তিনি জানান । পরীক্ষার শোচনীয় ফলের কথা জেনে তিনি বিকাশ ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন । এ দিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারদের বলেছি, এই ব্যাপক অসাফল্যের কারণ কী, তা আমরা একটু জানতে চাই’। পার্থবাবু জানান, নতুন নিয়ম কতটা যুক্তিযুক্ত, তা তিনি জানেন না । এটা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কিনা, সেটাও তাঁর জানা নেই। পুরো বিষয়টি তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান । তবে শোচনীয় ফলের পরে কর্তৃপক্ষকে তলব করে পঠনপাঠন নিয়েও সরকার হস্তক্ষেপ করল বলে শিক্ষামহলের ধারণা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *