BRAKING NEWS

অসম-নাগাল্যান্ড সীমা বিবাদ : এলাকায় বি.সভা আইন কমিটি, শুক্রবার যাচ্ছে ছয় সদস্যের শীর্ষ প্রতিনিধি দল

মেরাপানি (অসম), ২৩ নভেম্বর, (হি.স.) : গোলাঘাট জেলার অন্তর্গত মেরাপানির বিবাদাকৃত অসম-নাগাল্যান্ড সীমান্ত পরিদর্শন করেছে রাজ্য বিধানসভার আইন রূপায়ণ সমিতির এক দল। দলে রয়েছেন বিধায়ক রণোজ পেগু, উৎপল বরা, মৃণাল শইকিয়া, নায়ায়ণ ডেকা এবং সত্যব্ৰত কলিতা। সীমান্ত এলাকার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে এখানে মোতায়েন নিরাপত্তা বাহিনীর পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গেও এক বৈঠক করেছেন তাঁরা।
তাছাড়া এখানে নাগা আগ্রাসন সংক্রান্ত ঘটনাবলির সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে আগামীকাল শুক্রবার রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী অতুল বরার নেতৃত্ব ছয় সদস্যের এক মন্ত্রীদল আসবেন। তাঁরা সীমান্ত সমস্যা খতিয়ে দেখে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে এক প্রতিবেদন দাখিল করবেন। অসম-নাগাল্যান্ড সীমা সমস্যাবলি খতিয়ে দেখতে মন্ত্রী অতুল বরার নেতৃত্ব এক কমিটি গঠন করে দিয়্ছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। অতুল বরা নেতৃত্বাধীন কমিটিতে রয়েছেন সাংসদ কামাখ্যাপ্রসাদ তাসা, ছয় বিধায়ক নোমল মমিন, মৃণাল শইকিয়া, প্রদীপ হাজরিকা এবং তপন গগৈ।
প্রসঙ্গত গোলাঘাট জেলার ধনশিরি মহকুমার নাগাল্যান্ড সীমান্তবর্তী বি সেক্টরের অসম ভূখণ্ডে ‘হকাই’ নামের এক মহকুমা পড়শি রাজ্য গঠন করেছে বলে এক খবর চাউর হলে অসমের বিভিন্ন প্রান্তে হইচই পড়েছে। বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত নাগা শান্তি চুক্তির বলে কেন্দ্রীয় সরকার বৃহত্তর নাগালিমে অসমের বহু এলাকা অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বুধবার মেরাপানির বিবাদাকৃত এলাকা পরিদর্শন করেছে অসম ও নাগাল্যান্ড পুলিশের উচ্চস্তরের এক দল। তাঁরা গোটা এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। প্রতিবেশী দুই রাজ্যের শীর্ষ পুলিশ অফিসাররা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। সীমানা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখেছেন। সব দেখে সীমান্ত পুলিশের ডিজিপি সিং বলেন, এখানে নাগাল্যান্ডের কোনও নবগঠিত মহকুমার অস্তিত্ব নেই।
মেরাপানি সীমান্তে নাগালিম প্ৰশ্নে শংকিত গ্রামবাসীদের নির্ভয় ও আশ্বস্ত করেছেন অসম ও নাগাল্যান্ড পুলিশের উচ্চস্তরের অফিসাররা। ওই দলে ছিলেন অসমের সীমান্ত শাখার ডিজিপি আরএম সিং, নাগাল্যান্ডের ডিআইজি রিচাৰ্ড ইমতো, সিআরপিএফ-এর ডিআইজি ডিএচ ওয়েইন, অসমের ডিআইজি (সাধারণ) বিপি রাভা ছাড়াও দুই রাজ্যের বেশ কষ়েকজন শীৰ্ষ পুলিশ আধিকারিক। প্রতিবেশী দুই রাজ্যের উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসাররা স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন। তাঁরা সীমান্তে বসবাসকারী মানুষজনকে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে এবং অসমের এক টুকরো ভূমি নাগাল্যান্ডে যাচ্ছে না বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে।
এদিকে গতকালই প্রদেশ বিজেপিএক প্রেসবিবৃতি জারি করে অসম-নাগাল্যান্ড সীমা বিবাদ তদানীন্তন সরকারের ফসল বলে অভিযোগ করেছে। প্রেসবিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তঃরাজ্য সীমা বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য ১৯৭৯ সালের ২ জানুয়ারি অসম ও নাগাল্যান্ডের দুই মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে এ নিয়ে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। সেই চুক্তির বলেই দুই রাজ্যের নাগরিকরা সহাবস্থান বজায় রাখতে সেখানে নিরপেক্ষ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
দলের অসম প্রদেশের দুই মুখপাত্র মেহদি আলম বরা এবং মেঘনা হাজরিকা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই তথ্য দিয়ে আরও বলা হয়েছে, টানা বহু দশক ধরে অসম সীমান্তে নাগা জনগোষ্ঠীর মানুষজন অসমের জমিতে জবরদখল করে রেখেছে। বিষয়টি নজরে পড়ে রাজ্যের নয়া সরকারের চোখে। সেই সুবাদে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে এক জরুরি চিঠি লিখেন। এতে অসম ভূখণ্ডে নাগাদের বেদখল রোধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণের কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল।
সম্প্রতি মেরাপানির অসম সীমান্তে বি সেক্টরের হকাই অঞ্চলের জালালবস্তিতে নতুন দুটি ঘর তৈরি করে নাগাল্যান্ড সরকার মহকুমা গঠন করেছে বলে যে খবর চাউর হয়েছে তা সঠিক নয় বলেও জানানো হয়েছে বিজেপির বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, আসলে এই দুটি ঘর তৈরি হয়েছে এক দশক আগে। পূর্ববর্তী সরকার অসমের বহু জমি নাগাল্যান্ডের হাতে নির্বিচারে অর্পণ করার ফলেই আজ এখানে নতুন মহকুমা গঠন করার উদ্যোগ নিতে সাহস পাচ্ছে পড়শি রাজ্য। পূর্ববর্তী সরকারের এমন অদূরদর্শী কাণ্ড এবং অজ্ঞাত দুর্বলতার জন্যই আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য অসমের জনসাধারণের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করতে হবে কংগ্রেসকে। বলা হয়েছে মেহদি আলম বরা ও এবং মেঘনা হাজরিকার বিবৃতিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *