BRAKING NEWS

সফররত নির্বাচন কমিশনের আধিকারীকদের কাছে রাজনৈতিক দলগুলির গুচ্ছ নালিশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ নভেম্বর৷৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানানোর রীতিমতো প্রতিযোগীতা লক্ষ্য করা গেছে৷ বৃহস্পতিবার রাজ্য সফরে এসেছেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের চার আধিকারিক৷ এদিন রাজ্য অতিথিশালায় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত সংগ্রহ করেন কমিশনের আধিকারিকরা৷ নির্বাচন কমিশনের কাছে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয়ে নালিশ জানিয়েছেন৷

এদিন, সিপিএমের পক্ষ থেকে এক মেমোরেন্ডাম জমা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে, হিন্দুত্ব ভাবাবেগকে ব্যবহার করে নির্বাচনের প্রাক মুহুর্তে বিজেপি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা শুরু করেছে৷ তাতে, রাজ্যের শান্তির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে৷ বিজেপির প্ররোচনায় সিপিএম ক্যাডাররা আক্রান্ত হচ্ছেন৷ সিপিএমের বহু পার্টি অফিস বিজেপি এবং আইপিএফটির এনসি গোষ্ঠির দুসৃকতিরা ভাঙচুর করেছে৷ তার একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে দিয়েছে সিপিএম৷ রাজ্যভাগের চক্রান্তের বিষয়টিও নির্বাচনকে ঘিরেই শুরু হয়েছে বলে কমিশনকে জানিয়েছে সিপিএম৷ সেই লক্ষ্যেই আইপিএফটি এনসি গোষ্ঠি ১১ দিন জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে রেখেছিল৷ গত ১৯ সেপ্ঢেম্বর জিএমপি’র সমাবেশকে ঘিরে আইপিএফটি এনসি গোষ্ঠির হামলা হুজ্জুতির ঘটনাগুলিও কমিশনকে জানিয়েছে সিপিএম৷ সাথে যোগ করেছে, স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে বিজেপি রাজ্য সভাপতির জনসভায় ভাষণের বিষয়টি৷ ঐ সংবাদপত্রের উদ্বৃতি দিয়ে সিপিএম জানিয়েছে, বিশালগড়ে একটি র্যালিতে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ না থাকলে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে৷ পাশাপাশি গত ১৪ এপ্রিল বিজেপি রাজ্য সভাপতির ভাষণের কিছু বক্তব্য কমিশনকে জানিয়েছে সিপিএম৷ সেদিন বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেছিলেন, উত্তরপ্রদেশ এবং মণিপুরে যে ধাঁচে নির্বাচন হয়েছে, একই ধাঁচে রাজ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ যদি মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাঁর দলের প্রতিক চিহ্ণে ভোট দেন, সেই ভোটও পদ্মে গিয়ে পড়বে৷

এরই পাশাপাশি রাজ্যকে নানাভাবে আর্থিক দিক দিয়ে বঞ্চনা নির্বাচনের উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে বলে কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে সিপিএম৷ রেগা প্রকল্প সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে নানা অজুহাতে কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করছেনা, তা নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই, দাবি সিপিএমের৷ শাসকদল সিপিএম নির্বাচন কমিশনের কাছে অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার দাবি জানিয়েছে৷ সাথে আগামী নির্বাচনে ভিভিপ্যাট ব্যবহার করার জন্য কমিশনের সিদ্ধান্তের সাধুবাদ জানিয়েছে সিপিএম৷

এদিন সিপিএম বিজেপির বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ এনেছে, তার পাল্টা বিজেপিও নির্বাচন কমিশনে শাসকদলের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণাদি সহ নালিশ জানিয়েছে৷ বিজেপির প্রতিনিধিরা কমিশনকে জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা নিয়ে এই রাজ্যে সংঘর্ষ হয়৷ ভোটার তালিকা সংশোধনকে ঘিরেও এই রাজ্যে ঝামেলা হয়৷ বহু ভূয়ো ভোটার এই রাজ্যে রয়েছে৷ তা সঠিকভাবে চিহ্ণিত করা না গেলে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ এবিষয়ে বিজেপি মুখপাত্র অশোক সিনহা জানান, কমিশনকে জানিয়েছি রাজ্যে ভূয়ো ভোটারে ছেয়ে গেছে৷ পরিস্থিতি এমন মনে হচ্ছে অর্ধেক বাংলাদেশ এখন ত্রিপুরাতেই অবস্থান করছে৷ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা এখনো কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ ফলে, ওপার থেকে এপারে অবাধে যাতায়াত চলছে৷ শাসকদল নির্বাচনে তা ব্যবহার করছে৷ নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে সঠিক ভোটার তালিকা রূপায়ন করার জন্য৷ একজন ভূয়ো ভোটারও যাতে না থাকে তা সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে৷ পাশাপাশি নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রেও কমিশনকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে৷

এদিন নির্বাচন কমিশনের কাছে গুচ্ছ দাবি সহ নালিশ জানিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসও৷ তাদেরও অভিযোগ প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্রে ভূয়ো ভোটার রয়েছে৷ তাদেরকে চিহ্ণিত করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে৷ প্রদেশ কংগ্রেসের দাবি, স্পর্শকাতর থানাগুলি চিহ্ণিত করে সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে৷ শাসকদল সমর্থিত সরকারি কর্মচারীদের নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা যাবেনা৷ পাশাপাশি, চাকুরীচ্যুত ১০৩২৩ জন শিক্ষকদের নির্বাচনের কাজে দায়িত্ব দেওয়া যাবেনা৷ প্রদেশ কংগ্রেসের বক্তব্য, নিরপেক্ষ সরকারী কর্মচারীদেরই নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা হোক৷ শুধু তাই নয়, নির্বাচনে শাসকদল প্রশাসন যন্ত্রকে যাতে ব্যবহার করতে না পারে সেই বিষয়টি সুনিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস৷

এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রত্যেকটি বুথে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *