বিজ্ঞান স্নাতক শিক্ষক মামলার রায়ে চ্যালেঞ্জ জানাবে না রাজ্য সরকার, ক্ষোভে ফঁুসছেন চাকুরীচ্যুতরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ জুন৷৷ ক্ষোভে ফঁুসছেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা৷ বিজ্ঞান স্নাতক শিক্ষকদের চাকুরী উচ্চ

শনিবার আগরতলায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন চত্বরে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা জড়ো হন৷ নিজস্ব ছবি৷

আদালতের রায়ে বহাল থাকায় চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের ক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে৷ শনিবার রাজধানী আগরতলায় এরই বহিঃপ্রকাশের আংশিক ছবি ফুটে উঠে৷ চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা এদিন রবীন্দ্র ভবন চত্বরে জড়ো হন৷ বিষয় ছিল, সম দোষে দোষী হয়েও বহাল তবিয়তে বিজ্ঞান স্নাতকরা চাকুরী করবেন৷ অথচ ১০৩২৩ জন শিক্ষকদের সরকারের পাশে থাকার আশ্বাসের উপর নির্ভর করে চলতে হবে৷ তাই দাবি উঠেছে, চাকুরীচ্যুতদের মধ্যে যাঁরা টেট উত্তীর্ণ হয়ে চাকুরী পাবেন এবং যাঁদের ১৩ হাজার নতুন পদে নিয়োগ করবে রাজ্য সরকার, তাদের রেগুলার স্কেল দিতে হবে৷ ফিক্সড পে’তে চাকুরী তারা মেনে নেবেন না৷ এনিয়ে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা আন্দোলনমুখী হওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আভাষ মিলেছে৷ কারণ, রাজ্য সরকারের ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে আরও পাঁচ বছর চাকুরীতে রেগুলার হওয়ার জন্য তাঁরা মুখিয়ে থাকতে চান না৷
বিজ্ঞান শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় ত্রিপুরা উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার বিচার বিশ্লেষণ শুরু করেছে৷ ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিল সংক্রান্ত মামলার রায় থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্য সরকার এবারের রায়ের বিরুদ্ধে আর কোন মামলা করতে যাবেনা বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে৷ এক্ষেত্রে আদালতের রায় মেনে চলার বিষয়ে রাজ্য সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে৷ যদিও পূর্ণাঙ্গ নিদের্শনামা এখনো সরকারের কাছে এসে পৌঁছায়নি৷ সংশ্লিষ্ট এই মামলার চূড়ান্ত রায় দান করতে গিয়ে শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি শুভাশিস তলাপাত্র এই মামলার আবেদনকারীদের মধ্যে যোগ্যদের আগামী ৬ মাসের মধ্যে চাকুরী প্রদানের আদেশ দেন৷ আদালতের নির্দেশের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে রাজ্যের আইন ও শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এখনো নির্দেশের প্রতিলিপি রাজ্য সরকারের কাছে এসে পৌঁছায়নি৷ এটি পাওয়ার পরেই সরকার নির্দেশের তর্জমা করবে৷ রাজ্য সরকার চাকুরী দেওয়ার বিরুদ্ধে নয়৷
তিনি বলেন, ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিল করে যে কঠিন রায় দিয়েছে আদালত তা রাজ্য সরকার মানতে বাধ্য হয়েছে৷ আর এই ক্ষেত্রে ১০ জনকে চাকুরী দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ সরকার আগামী কিছু দিনের মধ্যেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে৷ তবে এই ১০ জনের চাকুরী শিক্ষা দপ্তরেই দিতে হবে এমন কোন কথা নেই৷
ধারণা করা হচ্ছে, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের ক্ষোভ আরো বেড়ে যাওয়ার পিছনে মূল বিষয় হল, রাজ্য সরকার বিজ্ঞান স্নাতক শিক্ষক মামলায় উচ্চ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাবে না৷ আদালত যে রায় দিয়েছে তা মেনে নেবে৷ রাজ্য সরকারের আদালতের রায় মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে চাকুরীচ্যুতদের বক্তব্য, হাইকোর্টের গুয়াহাটি বেঞ্চের রায় মেনে পূর্বে কয়েকজন মামলাকারীদের চাকুরী দেওয়া হতো, তাহলে ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিলের ঘটনা ঘটত না৷
রাজ্য সরকার বিজ্ঞান স্নাতক শিক্ষক মামলায় আদালতের রায় মেনে নিয়েছে, তা আঁচ করতে পেরেই আজ বিকালে রবীন্দ্র ভবন চত্বরে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা জড়ো হন৷ এই খবর পেয়ে আরক্ষা প্রশাসন বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে রবীন্দ্র ভবন চত্বরে৷ পরে তারা সেখান থেকে নেহেরু পার্কে চলে যান৷ সেখানে গিয়ে তারা পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা করেন৷ যতদূর জানা গেছে, ২/৩ দিনের মধ্যে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায়ে আলোচনার জন্য এক হল সভার আয়োজন করবেন৷ তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে চাকুরী করার পরও পুনরায় নিয়োগ পেলে ফিক্সড পে’তে চাকুরী করতে হবে৷ টেট উত্তীর্ণ হয়ে চাকুরীচ্যুতদের মধ্যে যারাই শিক্ষক পদে চাকুরী পাবেন, তাঁদেরও ফিক্সড পে’তে পাঁচ বছর চাকুরী করতে হবে৷ চাকুরীচ্যুতদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে রেগুলার হয়ে গেছেন৷ অথচ তাদের পুণরায় পাঁচ বছর ফিক্সড পে’তে চাকুরী করতে হবে৷ কিন্তু, গতকাল উচ্চ আদালত বিজ্ঞান স্নাতক শিক্ষকদের চাকুরীতে বহাল রাখার রায় দিয়েছেন৷ ফলে, তাঁদের চাকুরী বাতিল হচ্ছে না৷ পাশাপাশি তাঁরা যেহেতু ২০১২ সালে চাকুরীতে নিয়োগ হয়েছেন, তাই পাঁচ বছর সময়কাল সমাপ্তি হতেই তাঁরা রেগুলারও হয়ে যাবেন৷ এসমস্ত বিষয়কে ঘিরেই চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
তাঁদের সাফ কথা, পুণরায় চাকুরীতে নিয়োগ হওয়ার পর কোন অবস্থাতেই ফিক্সড পে’তে তাঁরা চাকুরী করবেন না৷ যারা চাকুরী টেট উত্তীর্ণ হয়ে পাবেন এবং যাদেরকে ১৩ হাজার নতুন পদে নিয়োগ করা হবে প্রত্যেককেই রেগুলার হিসেবে চাকুরী দিতে হবে৷ এই দাবিতে চাকুরীচ্যুতরা আন্দোলনমুখী হচ্ছেন বলে আভাষ পাওয়া গেছে৷