BRAKING NEWS

১৩ হাজার নতুন পদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ণয় নিয়ে প্রশ্ণ, আইনী গ্যাড়াকলে পড়তে পারে সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ মে৷৷ অশিক্ষক পদে ১৩ হাজার পদ সৃষ্টি করল রাজ্য সরকার৷ কিন্তু, এই পদে প্রার্থীদের যোগ্যতা নির্ণয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে প্রশ্ণ উঠেছে৷ পাশাপাশি বেকার অসন্তোষের জেরে আইনী গ্যাড়াকলে পড়তে পারে রাজ্য সরকার, সেই সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে৷ মূল প্রশ্ণ উঠেছে যোগ্যতা নির্ণয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার এক্তিয়ার কতটুকু রয়েছে রাজ্য সরকারের৷
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে নতুন এই পদ সৃষ্টিকে ঘিরে নানা মহলে প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে একাডেমিক কাউন্সেলার, স্টুডেন্ট কাউন্সেলার এবং সুকল লাইব্রেরি এসিস্টেন্ট পদ নিয়ে রাজ্য সরকার কেবলমাত্র শিক্ষকতার যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরী কিভাবে দেবে তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ কাউন্সেলার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে এই পদে রাজ্য সরকারের নিয়োগের এক্তিয়ার নিয়েই মূল প্রশ্ণ উঠেছে৷ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কাউন্সেলার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কলা কিংবা বিজ্ঞান বিভাগে মনোবিদ্যা বিষয়ে স্নাতক ও সাথে কাউন্সেলিংয়ের ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট থাকতে হবে৷ আবশ্যিক যোগ্যতা হিসাবে ঐ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সুকলে কাউন্সেলিং করেছেন এমন অভিজ্ঞতা থাকতে হবে৷ অথবা নিয়োগ সংক্রান্ত সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে কিংবা ভারত সরকারের পুনর্বাসন পরিষদে ভোকেশনাল কাউন্সেলার হিসেবে নথিভুক্ত হতে হবে৷ যার কোনটাই রাজ্যে বর্তমানে যারা শিক্ষকতা করছেন এবং ঐ দুটি পদে আবেদন করবেন তাদের সেই যোগ্যতা নেই৷
এদিকে, এনসিইআরটি ডিপার্টম্যান্ট অফ এডুকেশনাল সাইকোলজি এন্ড ফাউন্ডেশান্স অফ এডুকেশান এর মাধ্যমে কর্মরত শিক্ষক, শিক্ষক প্রশিক্ষক, সুকল প্রশাসকদের ডিপ্লোমা কোর্স এর ব্যবস্থা করছে কয়েক বছর ধরে৷ এই কোর্সটি মূলত তাদের জন্য করানো হচ্ছে যারা সুকলগুলিতে কাউন্সেলার হিসেবে কাজ করবেন৷ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে একাডেমিক কাউন্সেলার এবং স্টুডেন্ট কাউন্সেলার নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ কোন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নেওয়া হবে কি না এই প্রশ্ণের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এমন কোন কিছুই বাধ্যতামূলক নয়৷ একাডেমিক কাউন্সেলার এবং স্টুডেন্ট কাউন্সেলার হিসাবে চাকুরীর আবেদনের জন্য শিক্ষক পদের যোগ্যতা থাকলেই যথেষ্ট৷ ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ণ উঠেছে, শিক্ষকতার দায়িত্ব যারা পালন করছেন তাদের মনোবিদ্যা সম্পর্কে কতটা ধারণা রয়েছে৷ কারণ, মনোবিদ ছাড়া কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব পালন করা যথেষ্ট কঠিন বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা৷ এদিকে, একাডেমিক কাউন্সেলার এবং স্টুডেন্ট কাউন্সেলারদের কার্যপদ্ধতী নিয়েও প্রশ্ণ উঠেছে৷ তাদের কাজের ধরণ কি হবে, এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে শিক্ষামন্ত্রী জানান, একাডেমিক কাউন্সেলার ছাত্রছাত্রীদের নির্দিষ্ট বিভাগ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করবেন৷ এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব চলে যাবে স্টুডেন্ট কাউন্সেলারদের হাতে৷ তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের পঠন পাঠনের বিভিন্ন দিক নিয়ে তাদের সাথে মত বিনিময় করবেন৷ প্রয়োজনে পরামর্শও দেবেন৷ এখন প্রশ্ণ হল, সারা বছর কাউন্সেলারদের কাজ থাকবে কি না৷ কারণ, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী একাডেমীক কাউন্সেলার পদে যাদের নিয়োগ করা হবে তাঁরা প্রতি শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের বিভাগ নির্ধারিত হয়ে গেলেই আর কোন দায়িত্ব তাদের থাকছে না৷ ধারণা করা হচ্ছে, একাদশ শ্রেণীতে যদি কোন ছাত্রছাত্রী ফেল করে কিংবা দ্বাদশ পাশ করার পর উচ্চশিক্ষায় কোন বিষয়টি বাছাই করলে ভবিষ্যতে তাদের পক্ষে সুবিধাজনক হবে সেক্ষেত্রেও একাডেমিক কাউন্সেলাররা কাউন্সেলিং করবেন৷ কিন্তু, এই সমস্ত ক্ষেত্রে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় তাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে৷ বাকি সময় তাদের কি কাজ করতে হবে সেই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছুই জানাননি৷
এদিকে, সুকল লাইব্রেরি এসিস্টেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, লাইব্রেরি সায়েন্স নিয়ে পিজি ডিপ্লোমা কোর্স বাধ্যতামূলক নয়৷ স্নাতক ডিগ্রীধারী ও পাঁচ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সম্পন্নরাই এই পদে আবেদন করতে পারবেন৷ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ণ উঠেছে, লাইব্রেরি সংক্রান্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন পদ সৃষ্টি করার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের কতটুকু রয়েছে৷ কারণ, লাইব্রেরি সংক্রান্ত নিয়োগে ভারত সরকার অনুমোদিত গ্রন্থাগার পর্ষদের নির্দিষ্ট গাইডলাইন ইতিমধ্যেই সারা দেশে কার্যকর রয়েছে৷ এদিকে, এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বোঝা সম্ভব হয়নি৷ শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, এদিন মন্ত্রিসভায় নিয়োগ নীতি সংশোধনের সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ দুই এক দিনের মধ্যে এর বিজ্ঞপ্তি জারি হবে৷ বিজ্ঞপ্তি জারি হলে সমস্ত বিষয় পরিস্কার হয়ে যাবে৷
ফলে, ধোয়াঁশা থেকেই যাচ্ছে শূন্যপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা ও অন্যান্য যোগ্যতা নির্ধারণের ব্যবস্থা যেখানে আবশ্যক, সেখানে তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কি পন্থা অবলম্বন করবে রাজ্য সরকার৷ ইতিপূর্বে গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শূন্যপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ সবমিলিয়ে রাজ্য সরকার ১৩ হাজার পদ সৃষ্টি করে বিরাট পদক্ষেপ নিলেও, যারা চাকুরী পাবেন তাদের অধিকাংশের ভবিষ্যত অনিশ্চিয়তার মধ্যেই রাজ্য সরকার ঠেলে দিচ্ছে বলে সমালোচনায় মুখর হয়েছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল৷ কারণ, এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার সাথে সাথেই চাকুরী বঞ্চিতদের একাংশ উচ্চ আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গিয়েছে৷ ফলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের এই নতুন পদে পুনর্বাসন দেওয়া হলেও অধিকাংশদের অনিশ্চিয়তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷ এদিকে, বুদ্ধিজীবী মহল মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত হটকারী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *