BRAKING NEWS

পাশ মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিল, এখন থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা অপরাধ নয়

নয়াদিল্লি, ২৮ মার্চ (হি.স.) : দীর্ঘ অপেক্ষার পর লোকসভায় পাশ হল মানসিক স্বাস্থ্য বিল| সোমবার ধ্বনি ভোটে লোকসভায় পাশ হয়ে যায় মানসিক স্বাস্থ্য বিল| নতুন মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিল, ২০১৬ -এর আইনের পরিণত হতে এখন অপেক্ষা রাষ্ট্রপতির অনুমতির| নতুন আইন কার‌্যকর হলে, আত্মহত্যা আর অপরাধ হিসাবে গন্য হবে না| পাশাপাশি, মানসিক চিকিত্সায় শিশুদের উপর শক থেরাপির প্রয়োগও নিষিদ্ধ হবে| এর ফলে এবার থেকে আত্মহত্যার চেষ্টার পর মানসিক সমস্যা রয়েছে প্রমাণিত হলে আর শাস্তি পেতে হবে না| পাশাপাশি যারা মানসিকভাবে সুস্থ নন, তাদের জন্যও বিলে চিকিত্সার কথা বলা হয়েছে|
গত বছরের আগস্টে রাজ্যসভায় এই বিলটি পাশ হয়েছিল| সেই সময়েই লোকসভায় এ বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা জানিয়েছিলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১-২ শতাংশ মানুষ স্কিত্জোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক রোগে ভোগেন| তা ছাড়া, প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ অবসাদজনিত রোগে আক্রান্ত| এই বিলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বড়সড় এক সংষ্কারের পথে হাঁটল কেন্দ্র| নয়া মানসিক স্বাস্থ্য বিলে একের পর এক প্রস্তাবে সেই ইঙ্গিত দিয়েছে মোদী সরকার| গত বছর লোকসভায় পেশ হলেও নতুন মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিল, ২০১৬ সোমবার পাশ হয়েছে লোকসভায়| খন আইন হিসাবে স্বীকৃতি পেতে ওই বিলটির শুধু রাষ্ট্রপতির প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সম্মতির অপেক্ষা|
এই মুহূর্তে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তবে তা অপরাধের সামিল| সাজা হিসাবে ওই ব্যক্তির সর্বোচ্চ এক বছর পর‌্যন্ত সাজা হতে পারে| নয়া ওই বিলে বলা হয়েছে, যদি অন্য কোনও কারণ প্রমাণিত না হয় তবে ধরে নিতে হবে ওই ব্যক্তি অতিরিক্ত মানসিক চাপের মুখে পড়েই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন| ফলে, নয়া আইন অনুযায়ী আত্মহত্যা মানসিক চাপেরই ফল| আর সে জন্য কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া যায় না| কাজেই আত্মহত্যার চেষ্টাকে আর অপরাধ হিসাবে দেখবে না আইন| বদলে চিকিসার কথা বলা হয়েছে| এখন ‘মেন্টাল হেলথ রিভিউ কমিশন অ্যান্ড বোর্ড’ গোটা বিষয়টিকে পর‌্যবেক্ষণ করে আগামী পদক্ষেপ ঠিক করবে| পাশাপাশি মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষার কাজেও সরকারকে পরামর্শ দেবে|
মানসিক চিকিত্সার ক্ষেত্রে একাধিক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে নয়া ওই বিলে| যেমন, গরিব অথচ মানসিক ভাবে অসুস্থ মানুষদের জন্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিত্সার সুযোগ থাকবে| সে ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি যদি দারিদ্যসীমার উপরে অথচ আর্থিক ভাবে সঙ্গতিহীন হন, তিনিও ওই সুযোগের আওতায় আসবেন| শিশুদের মানসিক চিকিত্সার ক্ষেত্রে শক থেরাপি বন্ধ করা যেমন হচ্ছে, তেমনই প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ওই থেরাপি দেওয়ার আগে রোগীর অনুমতি নেওয়ার কথা আইনে বলা হয়েছে| সে ক্ষেত্রে রোগীকে অজ্ঞান করে উপযুক্ত ওষুধ প্রয়োগ করেই শক থেরাপি দিতে হবে|
নতুন এই বিলে অন্যান্য সুযোগসুবিধার পাশাপাশি গোপনীয়তার শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে| মানসিক রোগীর চিকিত্সার সমস্ত তথ্যই গোপন রাখতে হবে| নয়া আইনে রোগীর সম্মতি ছাড়া তা কোনও ভাবেই প্রকাশ করা যাবে না| মানসিক রোগের চিকিত্সার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত প্রতিষ্ঠান, চিকিত্সক বা সমাজকর্মীকে একই ছাতার তলায় আনতেও উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র| জাতীয় স্তরে সেন্ট্রাল মেন্টাল হেলথ অথিরিটি ও প্রতিটি রাজ্যে স্টেট মেন্টাল হেলথ অথিরিটি গঠনের সংস্থান রাখা হয়েছে ওই বিলে| দেশের সমস্ত মনোবিদ, নার্স বা এই ক্ষেত্রে কর্মরত সমাজকর্মীকে তাতে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে বলেও বিলে বলা হয়েছে| মানসিক রোগীদের অধিকার যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে তা দেখতে একটি রিভিউ বোর্ডও গঠিত হবে|
মানসিক রোগীদের উন্নত চিকিত্সা ও আত্মহত্যা প্রবণতা কমাতে এই বিল অনেক উপযোগী হবে বলে মনে করছেন চিকিত্সকরা|
আইন ভাঙার শাস্তির বিধানও ওই বিলে রাখা হয়েছে| নতুন মানসিক স্বাস্থ্য বিলে বলা হয়েছে, এই সংক্রান্ত কোনও শর্তভঙ্গ হলে ছয় মাস জেল অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা একসঙ্গে দুটি শাস্তিই হবে| দ্বিতীয় বার একই অপরাধে দুবছরের জেল বা ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা একসঙ্গে দুই শাস্তি ভোগ করতে হবে|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *