BRAKING NEWS

ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উপ নির্বাচনেও বিজেপির উত্থান, কংগ্রেস নিশ্চিহ্ণ, অস্তিত্ব ধরে রাখল তৃণমূল, জয়ী বামেদের দুশ্চিন্তা গ্রাম নিয়েও

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ ডিসেম্বর৷৷ জয়ী হলেও, গ্রাম নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছে বামেরা৷ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে উপনির্বাচনে

ত্রিস্তর উপনির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সিপিএম প্রার্থীর উল্লাস৷ শুক্রবার তোলা নিজস্ব ছবি৷
ত্রিস্তর উপনির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সিপিএম প্রার্থীর উল্লাস৷ শুক্রবার তোলা নিজস্ব ছবি৷

অধিকাংশ আসনে বামেরা জয়ী হয়েছেন৷ দুটি করে মোট চারটি আসন বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস দখল নিয়েছে৷ কিন্তু বামেদেরকে চিন্তায় রাখার পেছনে অন্যতম কারণ হল গ্রামেও বিজেপির উত্থান৷ ভোট ফলাফলে দেখা গেছে, সিপিএম ৫৩.৫৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ সে তুলনায় বিজেপির দখলে গেছে ৩১.১৮ শতাংশ ভোট৷ স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসে বিজেপি বামেদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ চিন্তিত হওয়ার আরো একটি কারণ হল, অধিকতর আসনে বামবিরোধী ভোট শাসকদলের তুলনায় বেশি৷ জেলাপরিষদের একটি আসনে ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, সিপিএম একা ২৯৯১ ভোট পেয়েছে৷ অথচ বিজেপি ২৬৩১, তৃণমূল কংগ্রেস ১৮০, কংগ্রেস ৬৭৯ এবং ত্রিপুরা পিপলস পার্টি ৮৪ ভোট পেয়েছে৷ তাতে বামবিরোধী মোট ভোটের সংখ্যা ৩৬১৪৷ তাতে প্রমাণিত, কুমারঘাট জেলা পরিষদে সিপিএম জয়ী হলেও বাম বিরোধী শিবিরে ভোট বিজয়ী দলের তুলনায় অনেক বেশি পড়েছে৷ এধরনেরই চিত্র গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির আসনেও দেখা গেছে৷ সেখানেও বেশ কয়েকটি আসনে বামবিরোধী ভোট শাসক দলের প্রাপ্ত ভোটের থেকে অনেক বেশি৷ ফলে, এডিসি নির্বাচন, অমরপুর ও বড়জলা উপনির্বাচনে বিজেপি উঠে এসেছিল৷ এখন গ্রামেও গেরুয়া শিবিরের উত্থানে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা বাড়াল বামেদের৷
এদিন ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর বামফ্রন্ট কমিটি দাবি করেছে, কংগ্রেস বিজেপিকে মদত জুগিয়েছে৷ অন্যদিকে, সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি প্রদেশ সভাপতি বিপ্লব দেবের দাবি, ভোট বিভাজনের কারণেই বহু আসনে সিপিএম জয়ী হয়েছে৷ তিনি স্পষ্ট বলেন, ৫টি পঞ্চায়েত, ১টি জেলা পরিষদ এবং ১টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ভোট ভাগাভাগির কারণে বিজেপি জয়ী হতে পারেনি৷
এদিকে, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস ফলাফলের নিরিখে বিজেপির তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে৷ অবশ্য, পঞ্চায়েতের দুটি আসনে তৃণমূল জয়ী হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু ভোটের ফলাফলের নিরিখে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট কংগ্রেসের থেকেও কম৷ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৭.২৬ শতাংশ৷ যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে পড়েছে ৫.৮৮ শতাংশ ভোট৷ ২০১৪ সালের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ফলাফলের নিরিখে উপনির্বাচনে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের হার কমেছে৷ কিন্তু শাসক দলেরও ভোটের হার এবারের উপনির্বাচনে কমেছে৷ ২০১৪ সালে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদল পেয়েছিল ৬৪.১৩ শতাংশ ভোট৷ স্বাভাবিকভাবেই এবারের উপনির্বাচনের ফলাফলে এই ভোটের হার শাসক দলের অনেকটাই কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি প্রদেশ সভাপতি বলেন, পঞ্চায়েতের ২৫টি আসনে এবং জেলা পরিষদের ১টি ও পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ তিনি আরো বলেন, পঞ্চায়েতের যে আসন বিজেপি দখল করেছে তা দীর্ঘদিন ধরে শাসক দলের দখলে ছিল৷ এই ফলাফলের নিরিখে তাঁর দাবি, আগামীদিনে রাজ্যে বিরোধী হিসেবে একমাত্র বিকল্প বিজেপি৷
এদিকে, এক বিবৃতিতে বামফ্রন্ট কমিটি জানিয়েছে, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উপনির্বাচনগুলির ভোট গণনা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷ সামগ্রিক ফলাফলে দেখা যায়, এবারেও নির্বাচক মন্ডলী সাধারণভাবে বামফ্রন্ট ও বামফ্রন্ট সরকারের অনুকূলে ইতিবাচক রায় দিয়েছেন৷ জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির শূন্য আসনগুলিতে বামফ্রন্ট তার বিজয় অক্ষুণ্ণ্ রেখেছে৷ গ্রাম পঞ্চায়েতের গত নির্বাচনে জয়ী বামফ্রন্ট প্রার্থীরা তিনটি বাদে বাকি সব আসনে এবারও জয়ী হয়েছেন৷ অন্যদিকে, বাম বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেস, বিজেপি ও জেডিইউ থেকে বামফ্রন্ট ৫টি আসন ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে৷ তাতে ৪৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে ৪০টি আসনেই বামফ্রন্ট প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন৷ ৩৯টি আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থীরা এবং একটি আসনে সিপিআই প্রার্থী জয়ী হয়েছেন৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত ফলাফলের প্রাথমিক বিচারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে জামজুরি পঞ্চায়েতের আসনে গতবার কংগ্রেস বিজয়ী হয়েছিল৷ এবার কংগ্রেসের কোন প্রার্থীই ছিল না৷ তেমনিভাবে, ঊনকোটি জেলার অন্তত ৩টি পঞ্চায়েত আসনে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে গোপন সমঝোতা করে বামফ্রন্ট প্রার্থীকে হারানোর চেষ্টা হয়েছে কিংবা হারানো হয়েছে৷ হালাইপারে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন শূন্যভোট, সরোজনী নগরে পেয়েছেন ১ ভোট এবং বেতছড়া পঞ্চায়েতে কংগ্রেস প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট মাত্র দুই৷ আবার লক্ষ্মীপুর ও রাংগাউটি পঞ্চায়েতের ৩টি আসনে কংগ্রেস প্রার্থীরা দ্বিতীয় হয়েছেন৷ সেসব আসনে বিজেপি প্রার্থীদের হয় খাতা খুলেনি, কিংবা খুললেও তা অঙ্ক ছাড়ায়নি৷ এভাবে কংগ্রেস দল গতবারের জেতা ৩টি আসন হারিয়েছে এবং বিজেপিকে মদত জুগিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *