শিক্ষা নীতি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, নবীন প্রজন্মকে বিপথগামী করার চেষ্টা হচ্ছে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ সেপ্ঢেম্বর৷৷ জাতি গঠনে, ভবিষ্যৎ সুনাগরিক গড়ে তুলতে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ অসাধারণ 2222দায়িত্ব পালন করছেন৷ অন্য অনেক দায়িত্বের সঙ্গে এই দায়িত্বের কোন তুলনা চলেনা৷ কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া দরকার রাষ্ট্র পরিচালকরা তাদের সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না৷ যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদের শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গী শিক্ষানীতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে৷ কোন কোন রাষ্ট্রের পক্ষে তা সহায়ক হলেও আমাদের দেশে এই দৃষ্টিভঙ্গী সার্বজনীন শিক্ষায় বাধা সৃষ্টি করছে৷ এই নীতি সবার জন্য তৈরী করা হয়নি৷ ছোট একটি অংশের স্বার্থেই এই নীতি কাজ করছে৷ বঞ্চিত হচ্ছে বিরাট অংশের মানুষ৷ এর বিরুদ্ধে শিক্ষক সমাজকে সোচ্চার হতে হবে৷ আজ শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এ কথাগুলো বলেন৷
রবীন্দ্রশতবার্ষিকী ভবনে আজ ৫৫তম শিক্ষক দিবসের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ অনুষ্ঠানের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ ড সবর্বপল্লী রাধা কৃষ্ণাণের প্রতিকৃতিত্বে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান৷ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী বিজিতা নাথ৷ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি দিলীপ কুমার দাস, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব ডাঃ রাকেশ সাবোয়াল, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের সচিব জগদীশ সিং৷ সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় অধিকারের অধিকর্তা ডাঃ পি কে গোয়েল৷ অনুষ্ঠান মঞ্চে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তণ অধিকর্তা রঞ্জিৎ কুমার দেবনাথকে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্মাননা ২০১৬ প্রদান করা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার শ্রীদেবনাথের হাতে সম্মাননা তুলে দেন৷ অনুষ্ঠানে রাজ্যের ২২ জন কৃতি শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সম্মানিত করা হয়৷ সংর্ব্ধনা দেওয়া হয় রাজ্যের ১১টি সেরা বিদ্যালয়কে৷
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার রাজ্যের ও দেশের সব শিক্ষক- শিক্ষিকাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷ তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ জাতির মেরুদন্ড৷ ধারাবাহিক ভাবে তারা জাতি গঠনের কাজ করে চলেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সবার কাছে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দিতে যে নীতি প্রণয়ন করা দরকার কেন্দ্রীয় সরকার নেই নীতি গ্রহণ করেনি৷ তারা আমাদের বিজ্ঞান মনস্ক চিন্তায় আঘাত হানার চেষ্টা করছে৷ নবীন প্রজন্মকে বিপথগামী করার চেষ্টা হচ্ছে৷ এটা নেতিবাচক প্রয়াস৷ রাজ্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে সবার জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দিতে হবে৷ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শি৭ার পরিকাঠামো তৈরী, শিক্ষক-শিক্ষিকা বাড়ানোর কাজ চলছে৷ শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজ্য যে সম্যায় ভুগছিল তা সমাধানে রাজ্য সরকার অনেকটা এগিয়ে গেছে৷ এর পরও কাঙ্খিত সাফল্য আসছেনা৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কাঙ্খিত সাফল্য কনে আসছেনা তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিতে হবে৷ রাজ্য সরকার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার চাইছে দশম মান পর্যন্ত শিক্ষা সার্বাজনীন করতে৷ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনা, পাঠ্য পুস্তক নেই, খাওয়ার অভাবে সুকলে যেতে পারছেনা এমন অভিযোগ আমাদের রাজ্যে নেই৷ রাজ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী নানা ধরণের স্টাইপেন্ড পাচ্ছে৷ প্রায় ৯৮ শতাংশ শিশু অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে আসছে৷ তিনি বলেন, একজন শিশু যেন বিদ্যালয়ের বাইরে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের কাছে পড়াশুনা আকর্ষনীয় করে তোলার দায়িত্ব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের৷ তিনি বলেন, এই দিনটি শিক্ষক সমাজের কাছে আত্মসমীক্ষার দিন৷ মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ সময়ের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন৷ তিনি সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করেন৷
সভাপতির ভাষণে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী রাজ্যে শিক্ষা পরিকাঠামোর প্রসার এবং শিক্ষার অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরেন৷ বলেন,১৯৭২ সালে রাজ্যে সাক্ষরতার হার ছিল ৩৬,১৯ শতাংশ৷ বর্তমানে এই হার প্রায় ১০০ শতাংশের কাছাকাছি৷ তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের তুলনায় আমাদের রাজ্য কতটা এগিয়ে গেছে তথ্যই তা প্রমাণ করে৷ তিনি আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি আহ্বান জানান৷ সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী বিজিতা নাথ বলেন, সুকলেই ছাত্রছাত্রীদের মস্তিস্কের বিকাশ ঘটে৷ তারা বিজ্ঞান মনস্ক হয়ে উঠে৷ তাদের মানিবিক বিকাস প্রয়োজন৷ তিনি বলেন, নবীন প্রজন্মকে নানা ভাবে বিপথগামী করার চেষ্টা হচ্ছে৷ এ বিষয়ে অভিভাবকদের বিশেষ নজর রাখতে হবে৷ সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী বলেন,সবাই মিলে হাত লাগালে কাঙ্খিত সাফল্য অবশ্যই পাওয়া যাবে৷
তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে শুধু উপার্জনের জন্যই শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ শিক্ষাকেও পণ্য করা হচ্ছে এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে গুণগত শিক্ষা দেওয়ার কাজ চলছে৷ বিনামূল্যে সবার কাছে শিক্ষার সুযোগঞ্জদ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে৷ শ্রেণীকক্ষে পাঠদানই ছাত্রছাত্রীদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ৷
পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি দিলীপ কুমার দাস বলেন, যে উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে রাজ্য সরকার শিক্ষার প্রসারে কাজ করছে সবাই মিলে সাহায্য করলে তাতে অবশ্যই সাফল্য আসবে৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রঞ্জিৎ দেবনাথ, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব ডাঃ রাকেশ সারোয়াল, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের সচিব জগদীশ সিং, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক ও অবসরপ্রাপ্ত টিচার্স ফোরামের পক্ষে চিত্তরঞ্জন জমাতিয়া, সংবর্ধিত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ অনেকেই তাদের আর্থিক পুরস্কার মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল, শিক্ষক কল্যাণ তবহিল এবং দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে দান করেন৷