BRAKING NEWS

সালিশি সভায় মহিলাকে জুতোর মালা পরিয়ে বর্বরোচিত নির্যাতন

domestic violanceনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ জুলাই৷৷ রাজ্যে নারী নির্যাতনের একের পর এক বর্বরোচিত ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে৷ অবৈধ প্রণয়ের সূত্রে বিয়ে করার অপরাধে এক মহিলাকে বেধরক মারধর করে জুতোর মালা পড়িয়ে ঘুরানো হয়েছে গ্রাম্য সালিশি সভায়৷ ঘটনাটি ঘটেছে ধলাই জেলার কমলপুর মহকুমার উত্তর মরাছড়া গ্রামে শুক্রবার সকালে৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে৷ নির্যাতিতা মহিলার নাম সিখা দাস৷
সংবাদে প্রকাশ, কমলপুরের উত্তর মরাছড়া এলাকার বাসিন্দা সমীরণ দাস৷ তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী সরস্বতী দাস৷ অভিযোগ উঠেছে সমীরণ দাসের সঙ্গে এলাকারই স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলা শিখা দাসের অবৈধ প্রণয়ের সম্পর্ক রয়েছে৷ সমীরণ ও শিক্ষখার সম্পর্কের বিষয়ে এলাকার জনগণও অবহিত রয়েছে৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায়শয় সমীরণ ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী সরস্বতীর মধ্যে বিবাদ হতো৷ বুধবার সকালে, সমীরণ দাস তার প্রেমিকা শিখা দাসকে নিয়ে পালিয়ে যায়৷ তারা বিয়েও করে ফেলে৷ বিয়ের পর দুজনেই দক্ষিণ জেলার শান্তিরবাজারের এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছিল৷
এদিকে, এই খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে এলাকার লোকজন নিয়ে শান্তির বাজার ছুটে যায় সরস্বতী দাস৷ সেখান থেকে সমীরণ ও শিখাকে মরাছড়া গ্রামে নিয়ে যায়৷ গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য সমুতি সংনামির বাড়িতে বসে সালিশি সভা৷ এই সভায় বেশ কয়েকজন মাতববর সহ লোকজন উপস্থিত ছিল৷ সভায় শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া৷ সরস্বতী সহ গ্রামের লোকজন সমীরণ ও শিখাকে মারধর করে৷ মাতববরদের নির্দেশে শিখার গলায় জুতোর মালা ঝুলিয়ে বাড়ির উঠানো ঘুরনো হয়৷ গ্রামের লোকরা এই ঘটনা উপভোগ করে৷ জুতো গলায় দিয়ে উঠানে ঘুরানোর সময় সরস্বতী সহ গ্রামের মহিলারা অনবরত কিল, থাপ্পর, লাথি দিতে থাকে৷ তাকে চুলে ধরে উঠানে ফেলে মারধর করে৷ তাদের রোষাণল থেকে বাদ যায়নি সমীরণ দাসও৷ তাকে পঞ্চায়েত সদস্য ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে সরস্বতী সহ অন্যান্য লোকজন বেধরক মারধর করে৷ একসময় শিখা ও সমীরণ অজ্ঞান হয়ে পড়ে৷ তাদের মাথায় জল দিয়ে সুস্থ করে তুলে সালিশি সভায় উপস্থিত লোকজন৷
প্রকাশ্যে এই ধরণের বর্বরোচিত নির্যাতন চলতে থাকে শিখা দাসের উপর৷ প্রতিবাদ করতে কেউ এগিয়ে আসনে৷ পর খবর দেওয়া হয় কমলপুর থানায়৷ পুলিশ গিয়ে শিখা ও সমীরণকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ যদিও পুলিশ পঞ্চায়েত সদস্যা সুমতি সংনামি ও সরস্বতী সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি৷ এই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত সদস্যার বক্তব্য তিনি কিছুই জানেন না৷ সরস্বতী দাস তার স্বামী সমীরণ দাস ও শিখা দাসকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে৷ তারপর এলাকার লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়৷ পঞ্চায়েত সদস্যা জানিয়েছেন, এই ধরণের ঘটনা ঘটলে পঞ্চায়েতের সালিশি সভায় তা মিটমাট করে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে এখানে৷ তাই বিষয়টি পুলিশকে জানানোর প্রয়োজন হয়নি৷
এদিকে, এর আগেও কমলপুর মহকুমায় অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে৷ তখনও সালিশি সভায় গ্রাম্য মাতববররা বর্বরোচিত নির্যাতন করেছিল এক মহিলার উপর৷ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক এই ধরণের ঘটনায় রাজ্যের শাসক গোষ্ঠীর একাংশ যে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন দ্বিধা বোধ করছে না তা সম্পষ্ট হয়ে উঠছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *