নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা, ১০ জুন৷৷ প্রাণ সংশয় নিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা দিন কাটাচ্ছেন৷ প্রতিনিয়ত মৌলবাদীদের রক্তচক্ষুর মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের৷ কয়েকদিন আগে আশ্রমের পুরোহিত হত্যার পর শুক্রবার ভোরে ফের অনুকূল চন্দ্র ঠাকুর সেবাশ্রমের পুরোহিতকে কুপিয়ে হত্যা করেছে মৌলবাদী জঙ্গিরা৷ জানা গেছে, ঐ আশ্রমের পুরোহিত নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে ভোর বেলায় কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা৷ তাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়৷ বাংলাদেশের পাবনাস্থিত অনুকূল চন্দ্র ঠাকুর সেবাশ্রমের এই সেবক প্রতিদিনই ভোরে প্রাতঃভ্রমণে বের হতেন৷ শুক্রবার ভোরে প্রাতঃভ্রমণে বের হলে তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ পাবনার পুলিশ সুপার আলমগির কবির বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত জঙ্গি কর্তৃক হত্যাকান্ডের সঙ্গে এই হত্যাকান্ডের যথেষ্ট মিল রয়েছে৷ একই গোষ্ঠী এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে৷ তাতে মৌলবাদী জঙ্গিরাই ঐ পুরোহিতকে হত্যা করেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷
এর আগে গত ৭ জুন জিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত গোপাল গাঙ্গুলি, ৫ জুন নাটুরে খ্রিস্টান দোকানি সুনীল গোমেজ এবং একই দিনে চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আখতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা৷ পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আবদুল্লাহ আল হাসান বলেন, নিত্যরঞ্জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে৷
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত নিত্যরঞ্জন প্রায় ৩৫ বছর ধরে সেবাশ্রমটিতে পুরোহিত হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ তাঁর দেশের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার আরুয়াপাড়া কংশপুর গ্রামে৷ তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তিনি আশ্রমের সবচেয়ে দায়িত্বশীল ও কর্মনিষ্ট সেবক ছিলেন৷ নিত্য রঞ্জনের সাথে কারোর শত্রুতা ছিল বলে তাদের জানা নেই৷ জানা গেছে, এদিন ভোরে তার উপর পেছন থেকে ঝাপিয়ে পড়ে দুর্বৃত্তরা৷ প্রথমে পেছন থেকে ঘাড়ে কোপ মারা হয়৷ মাথায়ও বেশ কয়েকবার কোপ মারা হয়েছে৷ ফলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ কোপানোর ধরন দেখে খুনীরা তাঁর মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চেয়েছিল বলে ধারণা পুলিশের৷
তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন নিত্যরঞ্জনের বয়স হয়েছিল ৬২ বছর৷ ডায়াবেটিসের রোগী হওয়ার দরুণ হাঁটতে বেরুতে সকালে৷ এই খুনের ঘটনাটি এখনো পর্যন্ত কেউ দায় স্বীকার করেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে৷
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকবছর ধরে কট্টরপন্থী ইসলামি জঙ্গিদের হাতে একের পর এক খুন হচ্ছেন মুক্তমনা ব্লগার, যুক্তিবাদী অধ্যাপক, সমকামী মানবাধিকার কর্মী, পুরোহিত যাজক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ৷ গত তিন বছরে খুনের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে৷ প্রতি সপ্তাহেই একাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পৌঁছায়৷ এখনো পর্যন্ত বেশিরভাগ খুনের দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস এবং আলকায়দার দক্ষিণ এশিয়ার শাখা৷ তবে, এব্যাপারে আলাদামত পোষণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তাঁর দাবি, আইএস ও আলকায়দার নাম করে দেশীয় জঙ্গিরাই এসব হামলা চালাচ্ছে৷
এদিকে, সাম্প্রতিক সকল হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট, পূজা উদযাপন পরিষদ সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন৷ ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তারা৷ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি খুনী চক্রের মুলোৎ পাটনের দাবি জানান বক্তারা৷ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত ট্রাইব্যুনালে বিচার করার জোর দাবি জানান তাঁরা৷ এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন তারা৷ মানববন্ধন থেকে নিহতদের স্মরণে আগামী ২০ জুন দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা সভার কর্মসূচী ঘোষণা করে পূজা উদযাপন পরিষদ৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা প্রতিদিনই প্রাণ সংশয়ে দিন কাটাচ্ছেন৷ বহু হিন্দু পরিবার রয়েছেন যারা গত কয়েকদিনে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় গিয়েছেন৷ অনেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামীদিনে সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখাই দায় হবে বলে মনে হচ্ছে৷
2016-06-11