সিপিআই নেতা প্রশান্ত কপালীর জীবনাবসান

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ মে৷৷ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি তথা সিপিআই’র রাজ্য কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রশান্ত

প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিআই নেতা প্রশান্ত কপালির মৃত্যুতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ৷ নিজস্ব ছবি৷
প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিআই নেতা প্রশান্ত কপালির মৃত্যুতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ৷ নিজস্ব ছবি৷

কপালীর জীবনাবসান হয়েছে৷ মঙ্গলবার প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের এই কমিউনিস্ট নেতা৷ গত দীর্ঘ একমাস তিনি জি বি হাসপাতালের আই সি ইউতে ভর্তি ছিলেন৷ এদিন ভোর সাড়ে তিনটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর৷ তিনি ফঁুসফুসে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷
প্রশান্ত কপালী ছাত্র যুব আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা নেতৃত্ব৷ সিপিআই রাজ্য পরিষদের প্রাক্তন সম্পাদক, পার্টির জাতীয পরিষদের প্রাক্তন সদস্য এবং পার্টির রাজ্য কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন৷ ২০০১ সালে ৯ বনমালীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হন৷
তাঁর মৃত্যুর খবরে রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ সকাল ছয়টায় তাঁর শবদেহ হাসপাতাল থেকে কৃষ্ণনগরস্থিত তাঁর নিজ বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাসভবনে ছুটে যান অসংখ্য মানুষ৷ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এলাকার বিধায়ক রতন দাস, মেয়র পারিষদ ফুলন ভট্টাচার্য্য প্রমুখ৷ তাঁর মরদেহ লাল পতাকায় ঢেকে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সিপিআই রাজ্য পরিষদের সম্পাদক রঞ্জিত মজুমদার৷ সেখান থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্য বিধানসভায়৷ সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান বিধানসভার অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, উপাধ্যক্ষ পবিত্র কর, রাজ্য সভার সাংসদ ঝর্না দাস বৈদ্য এবং অন্যান্যরা৷ তারপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কামানচৌমুহনীস্থিত পার্টি দপ্তরে৷ সেখানে দলীয় নেতা কর্মীরা শেষ শ্রদ্ধা জানান৷ পার্টির রাজ্য দপ্তরে এসে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিআইএম পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার৷ তারপর কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর অন্তিম শোকযাত্রা পার্টি রাজ্য দপ্তর থেকে৷ রাজধানীর বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বটতলা মহাশ্মশানে৷ সেখানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়৷ তাঁর মৃত্যুতে সিপিআই ত্রিপুরা রাজ্য পরিষদ গভীর শোক প্রকাশ করে এবং তাঁর পরিবার পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সারা রাজ্যে পার্টি দপ্তরগুলিতে তিনদিন রক্ত পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে৷
এদিকে, প্রশান্ত কাপালীর প্রয়াণে মুখ্যমন্ত্রীর সরকার শোক প্রকাশ করেছেন৷ এক শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ত্রিপুরার প্রগতিশীল, বিশেষ করে বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা সংগঠক ছিলেন প্রশান্ত কপালী৷ বিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থাতেই তিনি ছাত্র আন্দোলনের সাথে নিজ ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন৷ ছাত্র-
যুব আন্দোলনের পথ বেয়েই বৃহত্তম বামপন্থী রাজনীতির অঙ্গনে তাঁর প্রবেশ ও এক সময়ে সি পি আই ত্রিপুরা রাজ্য পরিষদের সম্পাদকের দায়িত্বে বৃত হয়েছিলেন৷
রাজনৈতিক নেতা হিসাবে প্রশান্ত কপালী তাঁর নিষ্ঠা ও সততার নিদর্শন রেখে গিয়েছেন৷ ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ছিলেন বিনয়ী ও মিতভাষী৷ তাঁর অকাল প্রয়াণে ত্রিপুরার বাম-গণতান্ত্রিক আন্দোলন একজন নিষ্ঠাবান সামনের সারির জনদরদী সংগঠককে হারালো৷ প্রশান্ত কাপালীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি৷ তাঁর স্ত্রী, পরিবার পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি৷ সি পি আই ত্রিপুরা রাজ্য ত্রিপুরা রাজ্য পরিষদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি৷
অন্যদিকে, প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক প্রশান্ত কপালীর মরদেহ রাজ্য বিধানসভা ভবনে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান বিধানসভার অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, উপাধ্যক্ষ পবিত্র কর, কারামন্ত্রী মণীন্দ্র রিয়াং, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী বিজিতা নাথ, সাংসদ ঝর্ণা দাস বৈদ্য, বিধায়ক রীতা কর প্রমুখ৷ এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সিপিআই রাজ্য পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে প্রয়াত প্রশান্ত কপালীর মরদেহে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *