নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/তেলিয়ামুড়া, ২৫ মে৷৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় শ্রদ্ধার সাথে আজ রাজ্য জুড়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম দিবস পালন করা হয়৷ এ উপলক্ষে তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের উদ্যোগে আজ সন্ধ্যায় নজরুল কলাক্ষেত্রে আয়োজিত হয় শ্রদ্ধাঞ্জলী ও সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান৷ এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তপশিলী জাতি কল্যাণ মন্ত্রী রতন ভৌমিক৷ সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাসান ইমাম মজুমদার৷ সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পন করে অতিথিগণ শ্রদ্ধা জানান৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে পর্যটন মন্ত্রী রতন ভৌমিক বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্যবাদী কবি৷ নজরুলের বিশ্বাস ও ভাবনার বহিঃপ্রকাশ পেয়েছে তাঁর লেখনীতে৷ তার যে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মনোভাব, অত্যাচারিত নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁর লেখনী এই সকল ভাবনা চিন্তাকে আগামী প্রজন্মের নিকট নিয়ে যেতে হবে৷ যাতে করে বৈষম্যহীন সুস্থ সমাজ গড়ে উঠে৷ তিনি বলেন, নজরুলের চর্চাকে আরও প্রসারিত ও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে হবে৷
অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা বলেন, নজরুলের চিন্তা ভাবনা আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক৷ নজরুলের মূল ভাবনাকে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে৷ তিনি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমান সময়ে সাম্প্রদায়িকতার শক্তি যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, সেদিক দিয়ে কাজী নজরুলের চিন্তা ও ভাবনা এখন দেশে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক৷ এই সময়ে নতুন প্রজন্মকে নজরুলের বিভিন্ন রচনা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার দৃষ্টিভঙ্গিতে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে৷ তিনি বলেন, সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে আজকের দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে রাজ্যে পালিত হয়ে থাকে৷ বিশেষ অতিথি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাসান ইমাম মজুমদার কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে বলেন, তিনি ছিলেন সাম্প্রদায়িক বিরোধী কবি৷ তিনি একদিকে যেমন ইসলামীক গজল লিখেছেন তেমনি তিনি শ্যামা সঙ্গীতও রচনা করেছিলেন৷ নজরুল মানুষের কথা বলতেন৷ সর্বদা তাদের সহায়তার কথা ভাবতেন৷ তিনি কুমিল্লায় পাঁচবার এসেছিলেন যা এক সময় ত্রিপুরা রাজ্যেরই অংশ ছিল৷ নজরুলের কবিত্ব সত্ত্ব বিকাশে কুমিল্লার অবদান ছিল৷ অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানান তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের অধিকর্তা শান্তুনু দেববর্মণ৷ কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পী ও সংস্থা সমূহের সমন্বয়ে মনোজ্ঞ সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়৷
বুধবার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭ তম জন্মজয়ন্তী৷ এই উপলক্ষ্যে দিনভর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কর্মসূচী৷ তেলিয়ামুড়া মহকুমা তথ্য সংসৃকতি পর্যটন দপ্তর, তেলিয়ামুড়া পুর পরিষদ ও কবি নজরুল বিদ্যাভবন যৌথ উদ্যোগে বুধবার পালন করা হয় কবির জন্মজয়ন্তী৷ এদিনে সকাল সাতটায় পুর পরিষদ অফিস প্রাঙ্গমে কবি প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়৷ পরে কবি নজরুল বিদ্যাভবনে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান৷ অনুষ্ঠানে নজরুলের মর্মমূর্তিতে মাল্যদান ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন এলাকার বিধায়িকা গৌরী দাস৷
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ রাখেন কবি নজরুল বিদ্যাভবনে সহকারী প্রধান শিক্ষক চন্দন বিশ্বাস৷ অনুষ্ঠানে উদ্বোধক তথা এলাকার বিধায়িকা গৌরী দাস বিদ্রোহী কবির প্রসঙ্গে বলেন, কবি নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে৷ তিনি ছিলেন সাহিত্য জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র৷ কবি নজরুল কেবল সাহিত্য জগতে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখেননি৷ তিনি সৈনিক থেকে সাংবাদিকও ছিলেন৷ কবির লেখনি দ্বারা সমাজে সাম্প্রদায়িকতা হানাহানি বন্ধ করে দিয়েছিলেন৷ একদা কবি বলেছিলেন এক বৃন্তে দুই ফুল হিন্দু মুসলমান৷ বিধায়িকা ভাষণে কবি নজরুল বিদ্যাভবনের কাজকর্মে ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ এছাড়াও অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন মহকুমা শাসক বিম্বিসার ভট্টাচার্য, এসএমসি কমিটির চেয়ারম্যান অশোক দাসগুপ্ত, পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন সজল কুমার দে সহ অন্যান্যরা৷ তবে কবি নজরুল অনুষ্ঠানের পর্বের মধ্যে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানও হয়৷
2016-05-26