BRAKING NEWS

সারা দেশেই রাজনীতির নতুন দিকদর্শন এনে দিল পাঁচ রাজ্যের ভোটফল, বঙ্গে ঘাসফুল, আসামে পদ্মের জয়জয়কার, তামিলনাড়ুতে আম্মাই ফের ক্ষমতায়, প্রত্যাশা মতোই কেরলে বাম, পুদুচেরিতে কংগ্রেস জোট

election222 copyনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ মে৷৷ বিধবস্ত, বিপন্ন শতবর্ষ প্রাচীন দল কংগ্রেস৷ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে বিপর্যয়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেল৷ প্রত্যাশিতভাবেই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের প্রত্যাবর্তন হয়েছে৷ একইভাবে কেরলে পরিবর্তন হয়েছে৷ চমক দিয়েছে আসাম৷ এই প্রথম পূর্বোত্তরের কোন রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতার মসনদে বসেছে৷ তাতে টানা পনের বছরের কংগ্রেস জমানার অবসান ঘটেছে৷ তবে, এক্সিট পোল ভুল প্রমাণিত করে তামিলনাড়ুতে আম্মার উপরই আস্থা রেখেছেন রাজ্যবাসী৷ সেখানেও ধাক্কা খেয়েছে কংগ্রেস৷ অবশ্য মুখরক্ষা হয়েছে পুদুচেরিতে৷ কংগ্রেস জোট সেখানে মসনদ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে৷
পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এবং আসামে বিপর্যয়ের কারণে কংগ্রেস সেনাপতি রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক কেরিয়ার এক মারাত্মক সংকটের মুখে৷ প্রকাশ্যে দলে কোন বিরোধ দেখা না দিলেও কংগ্রেসের এক বিরাট অংশ দেশে ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার জন্য সোনিয়া তনয়কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন৷ এদিন, নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল দেখেই কংগ্রেস সহ সভাপতি এক টুইট বার্তায় ব্যর্থতা স্বীকার করে জনাদেশ মাথা পেতে নিয়েছেন বলে জানান৷ যেমনটা লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর পাশে দাঁড়িয়ে পরাজয় মাথা পেতে নিয়েছিলেন তিনি৷ দলের এই ক্রমাগত বিপর্যয়ের পোস্ট মর্টেম করা হলে দেখা যাবে কংগ্রেস সহ সভাপতির সিদ্ধান্তহীনতাই এর পেছনে মূল কারণ৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাহুল গান্ধীর পরিচালনায় দল যেভাবে একের পর এক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে তাতে কংগ্রেসের নতুন করে ভাববার সময় এসেছে৷ অবশ্য পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফলে এক মারাত্মক রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে বামেরাও৷ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে সমঝোতা নিয়ে সূর্যকান্ত-বিমানবসুরা যে বাড়াবাড়ি করেছিলেন তার ফলে রাজ্যে দলের ভরাডুবিতে ইতিমধ্যেই সুর চড়তে শুরু করেছে৷ সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্যা বৃন্দা কারাত পশ্চিমবঙ্গে দলের ফলাফল নিয়ে চরম হতাশা ব্যক্ত করে জোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ণ তুলেছেন৷ এদিন তিনি বাংলার বাম নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে বলেন, জোটের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না ভুল তা এবার বিচার করে দেখা দরকার৷ বৃন্দা কারাতের বঙ্গ নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর পেছনে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে সমঝোতা নিয়ে আগাগোড়া কেরল লবি বিরুদ্ধে ছিল তাই আবারও স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ একে গোপালন ভবনে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে সমঝোতা নিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র-বিমান বসুরা যখন দরবার করছিলেন এর ঘোর বিপক্ষে ছিল কেরল লবি৷ বৃন্দা কারাত এদিন বলেন, ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জোট করে বামেদের কোন লাভ হয়নি৷ সবুজ ঝড়ের দাপটে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাম-কংগ্রেসের জোট৷
এদিকে, নির্বাচন ফলাফল ঘোষণা শেষে পশ্চিমবঙ্গে বিপর্য্যস্ত বামেরাও কংগ্রেসের দিকে ভারডুবির জন্য আঙুল তুলেছে৷ জোটের সেনাপতি সূর্যকান্ত মিশ্র স্পষ্ট জানিয়েছেন, কংগ্রেসের সাথে সমঝোতায় গিয়েই রাজ্যে দলের এই হাল হয়েছে৷ তাতে প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে সমঝোতা নিয়ে যখন নানা দিক থেকে সমালোচনা হচ্ছিল তখন কেন সূর্যকান্ত মিশ্ররা পিছিয়ে গেলেন না৷
শুধু বৃন্দা কারাত নন, পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবির আঁচ করতে পেরে জোট সঙ্গীর দিকেই আঙুল তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী৷ এদিন, দুপুরে ভোটের ফল বুঝতে পেরে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি বলেন, কিছুতেই এই ব্যর্থতার জন্য কোন পঙ্গু অজুহাত দেব না৷ তবে, জোট সঙ্গী বামফ্রন্টের দিকে তিনি অভিযোগের আঙুল তুলতে ছাড়েননি৷ তিনি বলেন, আমরা অনেক আসনে ভোটে লড়তে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু সিপিএমের পক্ষ থেকে অত আসন পাইনি৷ আজ তাই আমরা কোনও অজুহাত দেব না৷ আরো বলেন, অনেক বাম নেতাই বলে বেরিয়েছেন জোট না হয়ে ঘোঁট হয়েছে৷ তিনি এদিন, বামফ্রন্টকে সরাসরি কটাক্ষ করে বলেন, যদি তারা মনে করে জোট করে ভুল করেছে, তাহলে সেটা তাঁদের ব্যাখ্যা৷ তবে, আরেকটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন তৃণমূল কিন্তু সিপিএমের জেতা আসনে জিতছে, কংগ্রেসের জেতা আসনেই নয়৷ তাতে নির্বাচন পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গে জোট শিবিরে যেভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে খোঁচাখঁুচি শুরু হয়েছে তাতে জাতীয় রাজনীতিতে দুই দলই প্রাসঙ্গিকতা আরো হারাবে৷ কারণ, কেরলে ফলাফল নিয়ে কৃতিত্ব দেখানো ততটা সম্ভব নয়৷ বাম গণতান্ত্রিক জোট কেরলে কংগ্রেস জোট সরকারকে বিরাট ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু ট্রেডিশান মোতাবেক প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কেরলে সরকার পরিবর্তন একপ্রকার নিশ্চিত থাকে৷ সেক্ষেত্রে শাসক দল কংগ্রেস জোট এবারের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল একশ শতাংশ ৷
এদিকে, তামিলনাড়ুতে এক্সিট পোল ভুল প্রমাণিত করে প্রত্যাবর্তন হয়েছে এআইএডিএমকে’র৷ ডিএমকে-কংগ্রেস জোট আম্মার শিবিরকে তছনছ করে দিয়ে ক্ষমতা দখলে নিতে সক্ষম হয়ে ওঠেনি৷ এক্ষেত্রেও ডিএমকে শিবির মনে করছে কংগ্রেসের কারণেই তামিলনাড়ুতে ক্ষমতার পরিবর্তন সম্ভব হয়ে উঠেনি৷ আসামের ক্ষেত্রে অবশ্য কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বরা দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে গিয়ে তরুণ গগৈ সরকারের পরিবর্তনের জন্য টানা ১৫ বছর রাজ্যে দলের দিশাহীন কর্মসূচীকেই দায়ী করেছে৷ বিজেপি এই প্রথম পূর্বোত্তরের কোন রাজ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে চলেছে৷ অনুপ্রবেশকারী, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি ইস্যুকে পুঁজি করে বিজেপি নির্বাচনী বৈতরণী পার করে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু সরকার গঠন করার ক্ষেত্রে জোট শিবিরে মতানৈক্য দেখা দিতে পারে বলে ইতিমধ্যে আভাস মিলেছে৷ বিজেপির প্রধান শরিক দল অগপ’র তরফে মূলত মুখ্যমন্ত্রীর পদের দাবি নিয়ে মত বিরোধ দেখা দিতে পারে৷
অবশ্য পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে প্রত্যাশিতভাবেই কংগ্রেস জোট ক্ষমতা দখল করেছে৷ এআইএডিএমকে সেখানে আবারও পরাজিত হয়েছে৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে পশ্চিমবঙ্গে ও তামিলনাড়ুতে তৃণমূল এবং এআইডিএমকে’র প্রত্যাবর্তন, কেরলে এবং আসামে পরিবর্তনের ফলে আগামীদিনে জাতীয় রাজনীতিতে এক বিরাট সংকটের মুখেই পড়েছে কংগ্রেস এবং বামেরা৷ কারণ, গত বিধানসভা নির্বাচনে আসামে কংগ্রেসের দখলে গিয়েছিল ৭৮টি আসন৷ এদিকে, গত বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের দখলে গিয়েছিল ৪২টি আসন এবং বামেরা পেয়েছিল ৬২টি আসন৷ এবছর বাম কংগ্রেস জোট পেয়েছে ৭৬টি আসন৷ ফলে স্বাভাবিক ভাবেই জাতীয় রাজনীতিতে বামেদের পাশাপাশি কংগ্রেসের অস্তিত্ব বিপন্নের মুখে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *