নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ মে৷৷ পাপাই সাহা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত উমর শরিফ ওরফে সোয়েব মলিককে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে পশ্চিম জেলা অতিরিক্ত ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এসবি দত্ত৷ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে৷ তাতে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷
বুধবার পশ্চিম ত্রিপুরা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক পাপাই সাহা হত্যা মামলায় রায়ে বলেন, অভিযুক্ত উমর শরিফ ওরফে সোয়েব মলিকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধি ৩০২/৩২৬ ধারা সাথে ধারা ২৭(১) অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি৷ সেক্ষেত্রে আদালত উমর শরিফকে এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস করে দেয়৷ তাতে পাপাই সাহা হত্যা মামলায় প্রকৃত দোষী কে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে৷ মামলায় আইনজীবী অনন্ত ব্যানার্জি জানিয়েছেন, পাপাই সাহা হত্যার সাথে যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ হাতে এসেছে তাতে কোনভাবেই উমর শরিফ দোষী নন৷ তিনি বলেন, পাপাই সাহা টিএসআরের গুলিতেই নিহত হয়েছেন৷ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ রিপোর্ট এবং ১৬০১ মোতাবেক যে ৪৫ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছিল তাতে পাপাই সাহা হত্যার পেছনে টিএসআরকেই দায়ি করা হয়৷ তিনি দিল্লিস্থিত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এম রাও এর রিপোর্টের উদ্ধৃতি করে বলেন, পাপাই সাহাকে যে গুলি করেছে তার সাথে অভিযুক্ত উমর শরিফের কোন মিল নেই৷ কারণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে গুলি চালিয়েছিল তার উচ্চতা পাপাইয়ের থেকে বেশি৷ এবং পাপাই সাহা ও যে গুলি চালিয়েছিল তারা দুজনেই দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন৷ এদিকে, আইনজীবী শ্রী ব্যানার্জি পিএসি(পাবলিক একাউন্টিবিলিটি কমিশন) রিপোর্টের উল্লেখ করে বলেন, ঐ রিপোর্টেও পাপাই সাহা হত্যায় টিএসআরকেই দায়ী করা হয়েছে৷ এর জন্য রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে পাপাই সাহার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন৷ এদিন তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, তদন্তে পুলিশ প্রকৃত দোষীকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে৷
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১১ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পাপাই সাহা৷ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে প্রয়াত পাপাই সাহার বড় ভাই পিনাকি সাহা জানান, সেদিন হঠাৎ তারা দুই ভাই হৈচৈ শুনতে পান৷ সাথে দেখতে পান সমস্ত দোকানপাট দোকানিরা বন্ধ করে ফেলছেন৷ পরিস্থিতি থমথমে অনুভব করে দুজনই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন৷ মিটারসনের গলির মুখে আসলে বিকাল আনুমানিক ৫১০ নাগাদ পাপাই সাহার বড় ভাই দেখতে পায় টিএসআরের জিপ রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেখানে আগ্ণেয়াস্ত্র সহ নামেন৷ রাস্তার মানুষ এদিক ওদিক পালাচ্ছিলেন৷ হঠাৎ গুলি ছঁড়তে শুরু করে টিএসআর জওয়ানরা৷ তাতে পাপাই সাহার গায়ে গুলি লাগে৷ গুলিবিদ্ধ হয়ে পাপাই সাহা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে টিএসআর জওয়ানরা সেখান থেকে পালিয়ে যান৷ পাপাই সাহার ভাইয়ের বক্তব্য হত্যার উদ্দেশ্যেই টিএসআর জওয়ানরা গুলি চালিয়েছিল৷ এই ঘটনায় ২০১১ সালের ১৬ জুলাই পিনাকি সাহা তার ভাই পাপা সাহার মৃত্যুর মামলা দায়ের করেন আগরতলা পশ্চিম থানায়৷ ভারতীয় দন্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়৷ যার মামলা নম্বর ২৩৫/২০১১৷ মামলা হাতে নিয়ে প্রথমে পশ্চিম থানার তদানীন্তন ওসি রঞ্জিত দেবনাথ কিছুটা তদন্ত করেন৷ এরপর ২০১১ সালের ২১ আগস্ট মামলাটি সিআইডির হাতে গেলে সিআইডি তদন্ত শুরু করে৷ এই মামলায় মোট ৫৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৭ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়৷ তারা প্রত্যেকেই টিএসআরের গুলিতেই পাপাই সাহার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান৷ কিন্তু আদালতে পাল্টি খেয়ে যান৷ পুলিশ এই মামলায় মূল অভিযুক্ত করে উমর শরিফ ওরফে সোয়েব মলিককে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি এই মামলায় চার্জশিট জমা দেওয়া হয় আদালতে৷ এরপর এই মামলায় দীর্ঘ শুনানি চলে৷ বাদি ও বিবাদি পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল জবাব শেষে বুধবার আদালত এই মামলায় মূল অভিযুক্ত উমর শরিফ ওরফে সোয়েব মলিককে বেকসুর খালাস করে দেয়৷ রায় ঘোষণার পর প্রয়াত পাপাই সাহার বড় ভাই পিনাকি সাহা জানিয়েছেন, আদালতের রায়ে তিনি বিচার পাননি৷ যে খুনী সে দিব্যি ঘোরাফেরা করছে৷ পুলিশ তদন্ত সঠিকভাবে করেনি৷ এদিকে, এই মামলায় খালাস উমর শরিফ জানিয়েছে, তাকে ফাঁসানো হয়েছিল৷ ঘটনার দিন সে ঘটনাস্থলে ছিল না৷ এদিকে সরকার পক্ষের আইনজীবী হরিবল দেবনাথ জানিয়েছেন, রায়ের কপি হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে৷ এদিকে, পাপাই সাহার বড় ভাইও জানিয়েছেন, রায়ের কপি দেখে উচ্চ আদালতে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন৷
2016-05-19