উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার দয়ার সাগর৷ বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাক্তি রাজ্য সরকারকে ভেল্কি দেখাইয়া অনেক কিছুই বাগাইয়া নেয় এবং সময় সুযোগ বুঝিয়া রাজ্য ছাড়িয়া পালায়৷ এমন একের পর এক ঘটনা সত্বেও রাজ্য সরকারের সম্বিত ফিরে নাই৷ প্রথমেই রাজ্যের মানুষ দেখিয়াছে হাপানীয়ায় সরকারী হাসপাতালের বিল্ডিং, জমি তুলিয়া দেওয়া হইয়াছিল জি-নেট নামে একটি সংস্থার হাতে৷ রাজ্য সরকারের অতি প্রিয় ও বিশ্বাসভাজন এই সংস্থা মেডিকেল কলেজ চালু করে৷ কিন্তু জালিয়াতি যেখানে মুখ্য সেখানে বার বার এই হাসপাতাল কলেজ মেডিকেল কাউন্সিলের অনুমোদন হারায়৷ জি-নেটের কুমতলব সাধারণ মানুষ একেবারেই বুঝিতে পারে নাই৷ বাজার হইতেও জি-নেট চড়া সুদে টাকা নিয়াছে৷ এইরকম কোটি কোটি টাকা ও কলেজের বিস্তর অর্থ হাফিজ করিয়া জি-নেট রাজ্য ছাড়ে একরকম সকলকে ঘুমে রাখিয়া৷ শেষ পর্য্যন্ত নিরুপায় রাজ্য সরকার সোসাইটির নামে হাসপাতাল কলেজ নিজের হাতেই তুলিয়া নেয়৷ রাজ্য সরকারের উপর চাপে বাড়তি বোঝা৷ শুধু জিনেট নহে, রাজ্য সরকারকে একের পর এক বোকা বানাইয়াছে হায়দ্রাবাদের একটি বেসরকারী মেডিকেল সংস্থা৷ জি বি হাসপাতালের একাংশে সুপার স্পেশালিটি ব্লক গড়িয়া তোলা হইল৷ সেখানে হার্ট ইত্যাদি জটিল রোগের চিকিৎসার ঘোষণাও হইল৷ কিন্তু হায়দ্রাবাদের সেই সংস্থা পিছাইয়া গেল৷ রাজ্য সরকারের বিস্তর অর্থ জলে গেল৷ উদয়পুরে হার্টের চিকিৎসার জন্য টেলিমেডিসিন চালু হইবার পর কিছু দিন পর তাহারও গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটে৷ আর ‘বিশ্বমানের’ হাসপাতাল ক্যাপিটেল কমপ্লেক্সে গড়িয়া উঠিয়াছে৷ রাজ্য সরকার সেখানেও দরাজ হইয়াছেন এই কারণে যে, রাজ্যে একটি উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাইবে৷ কিন্তু সেখানে প্রকৃত পক্ষে রাজ্য সরকারের আশার গঁুড়ে বালি দেওয়া হইয়াছে৷ ভুরি ভুরি অভিযোগ এই ‘বিশ্বমানের’ হাসপাতালের৷ প্রতারণা ও ছলনার মধ্য দিয়াই যে হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা সেই হাসপাতাল রাজ্যবাসীকে হতাশ করিয়াছে৷ বিশ্বমানের তো দূরের কথা রাজ্যমানের কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ৷
রাজ্য সরকার শুধু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেই একের পর এক প্রতারিত হন নাই অন্য ভাবেও ঠকিয়াছেন দুর্দান্ত ভাবে৷ রাজ্য সরকার পাঁচ তারা হোটেলের জন্য জমি দিয়াও শেষ পর্য্যন্ত চুক্তি বাতিল করিতে হইয়াছে৷ সংগীত গ্রামের জন্য বহুমূল্যের জমি দিয়াছে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু সেই সংগীত গ্রাম কোনও দিন গড়িয়া উঠিবে কিনা সন্দেহ৷ এইভাবে একের পর এক প্রতারণার মূলে রাজ্য সরকারের একচোখো নীতি৷ এক্ষেত্রে পার্টির কোনও কোনও মহলের সুপারিশ গুরুত্ব পাইয়াছে৷ আর এই জন্যই বিশদ খোঁজ খবর না নিয়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার খেসারত দিতে হইতেছে৷ রাজ্য সরকারের মূল্যবান জমি যদি এইভাবে ব্যাক্তি স্বার্থে দেওয়া হয় তাহা হইলে আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ ও জনস্বার্থের জন্য বৃহৎ প্রকল্প করা জমি সংকটের কারণেই অসম্ভব হইয়া উঠিয়াছে৷ এইমস হাসপাতালের ধাঁচে হাসপাতাল গড়িবার প্রকল্প ত্রিপুরায় রূপায়ণের সুযোগ আসিতেই পারে৷ সেখানে রাজ্য কি প্রয়োজনীয় জমি দিতে পারিবে? জমি সংকটের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পই রাজ্যের হাতছাড়া হইয়া যাইতে পারে? সুতরাং জমি বিলি বন্টনের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে অনেক বেশী সজাগ ও সতর্ক থাকিতে হইবে৷ মনে রাখিতে হইবে রাজ্যের জমির সীমাবদ্ধতা আছে৷ অফুরন্ত জমি নাই রাজ্যে৷ এক্ষেত্রে দাতাকর্ণ সাজিলে রাজ্যকে একদিন চরম মূল্য দিতে হইতে পারে৷ আগামী দিনে রাজ্যে বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্প রূপায়নের সম্ভাবনা আছে৷ ব্রডগেজ রেল চালু হইলে এরাজ্যের আর্থিক ক্ষেত্রে নতুন করিয়া বিশাল সুযোগ আসিবে৷ সেই সম্ভাবনাময় দিনগুলি সম্পর্কে রাজ্যের মানুষকে সজাগ ও সতর্ক হইতেই হইবে৷
2016-04-17
