সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বা সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে গত কয়েক দশক যাবৎই প্রেস কউন্সিল অব ইন্ডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিয়া আসিতেছে৷ ত্রিপুরায় প্রেস এক্রেডিটেশন কমিটি সম্পর্কে অভিযোগ পাইয়া কউন্সিলের তদন্তকারী টিম আগরতলায় ছুটিয়া আসিয়াছেন৷ রাজ্যের সংবাদপত্রের কতিপয় মালিক সম্পাদক, সাংবাদিকদের বক্তব্য শুনিয়াছেন৷ এই তদন্তকারী দল রাজ্য সরকারের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করিবেন৷ এই নিবন্ধে, এই প্রসঙ্গে আলোচনার তাগিদ আসিবার সঙ্গত কারণ আছে৷ প্রেস কাউন্সিল সংবাদপত্রের বা সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করিবে? কারণ, বিভিন্ন অভিজ্ঞতার নীরিখে আজ এই কাউন্সিলও বিতর্কের উর্দ্ধে উঠিতে পারিতেছে এমন দাবী করা সম্ভব হইতেছে৷ প্রেস এক্রেডিটেশনই শুধু নহে রাজ্য সরকারের বিজ্ঞাপন প্রদান সংক্রান্ত বিষয়েও তো আজ নানা অভিযোগ, প্রশ্ণ আছে৷ দেশের বেশীর ভাগ রাজ্যে কোনও বিজ্ঞাপন পলিসিই নাই৷ ত্রিপুরায় ‘নাই মামার চাইতে কানা মামা ভাল’ এমন নীতিই চালু আছে৷ রাজ্য সরকারের নীতি এমন ভাবে করা হইয়াছে যেখানে রাজ্য সরকারের মূল উদ্দেশ্য সাধিত হইয়া যাইতেছে৷ রাজ্য সরকারের বিজ্ঞাপন নীতির কারনে রাজ্যের সংবাদপত্রের সামনে সংকট আসিয়াছে৷ ত্রিপুরা সরকার নীতির নামে বিজ্ঞান প্রদান করিতেছেন৷ কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে কর্তার ইচ্ছাতেই কীর্তন৷ একথা স্বীকার না করিয়া উপায় নাই যে, একটি সংবাদপত্রের বাঁচিয়া থাকার মূল রসদ যোগায় এই বিজ্ঞাপন৷ সেখানেই সরকারগুলি সংবাদপত্রের উপর পরোক্ষ নীপিড়ন চালাইতেছে৷ ইতিপূর্বে বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিষয়ে বহু অভিযোগ পেশ হইয়াছিল ত্রিপুরার বিভিন্ন সংবাদপত্রের তরফে৷ ইদানিং বিজ্ঞাপন বঞ্চনা নিয়া রাজ্যের সংবাদপত্রগুলির তরফে তেমন অভিযোগ কাউন্সিলে আছে বলিয়া মনে হয় না৷ তেমন তাগিদও এখন আর অনুভব করে বলিয়া মনে হয় না৷
আসলে, প্রেস কাউন্সিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে খুব বেশী উল্লেখযোগ্য সাফল্যের স্বাক্ষর রাখিতে পারিয়াছেন এমন মনে হইতেছে না৷ একথা আজ হয়তো অস্বীকার করা যাইবে না যে, সংবাদপত্র বা মিডিয়াও নানা বিতর্কীত অবস্থায় পৌঁছিয়াছে৷ নানা ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা দিনে দিনেই জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করিয়া চলিয়াছে৷ প্রেস কাউন্সিলকে কিছু বিধিবদ্ধ নিয়মের মধ্যে কাজকর্ম পরিচালনা করিতে হয়৷ কিন্তু আজ সেই দিন আসিয়াছে, মিডিয়া সম্পর্কে মানুষের মনে যে ক্ষোভ ও যন্ত্রণা দিনে দিনেই বাড়িতেছে সে সম্পর্কে আজ ভাবিবার সময় আসিয়াছে৷ ত্রিপুরায় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার মধ্যে কাজ করিতে হইতেছে৷ প্রেস এক্রেডিটেশনের কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব নিয়া যেসব সংস্থা সোচ্চার দাবী জানাইয়া নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিতে চাহিতেছেন তাহা নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা৷ সেই সঙ্গে এই কমিটি এখন পর্য্যন্ত যেসব সাংবাদিকদের জন্য এক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যুর সুপারিশ করিয়াছেন সেসব ক্ষেত্রে কি কোনও অভিযোগ নাই? প্রেস এক্রেডিটেশন রুলসের প্রাথমিক শর্তই হইতেছে ‘সাংবাদিকতাই মূল জীবিকা’৷ কিন্তু এমন কয়জন পাওয়া যাইবে প্রেস এক্রেডিটেশন কার্ড প্রাপকদের মধ্যে৷ এই সব বিষয়গুলি এক্রেডিটেশন কমিটি কতখানি দেখিতে চায় এই প্রশ্ণ আছে৷ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে দ্বৈতভূমিকা কতজনের আছে এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত না হইলে এই এক্রেডিটেশন কার্ড গুরুত্ব হারাইবে এবং তাহার সার্থকতাই প্রশ্ণ চিহ্ণের সামনে দাঁড়াইয়া যাইবে৷ জ্যোতিষী হইতে আরম্ভ করিয়া বহু প্রেস এক্রেডিটেশন কার্ড হোল্ডার রহিয়াছেন যাহারা অন্য ব্যবসায় সম্পূর্ণ জড়িত৷ প্রেস কাউন্সিল কি এইসব বিষয় তদন্তের আওতায় আনিতে পারেন? কতজন রাজনৈতিক কর্মী এই প্রেস এক্রেডিটেশনের সুযোগ নিতেছেন সেই অভিযোগ কি কাউন্সিল পাইয়াছেন? সুষ্ঠুভাবে প্রেস এক্রেডিটেশন কমিটি গঠন যেমন জরুরী তেমনি অসাংবাদিক বা পূর্ণ সময়ের সাংবাদিক নহেন এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কেও আজ ভাবা উচিত৷
এই প্রেস এক্রেডিটেশন কার্ড যাহাদের ভাগ্যে জুটিয়াছে তাহাদের কি কি সুবিধা মিলিতে পারে তাহারও কোনও পূর্ণাঙ্গ তালিকা নাই৷ কথায় আছে ‘চেনা বামুনের পৈতা লাগে না’৷ এরাজ্যে চার দশকেরও বেশী সাংবাদিকতার কাজে জড়িত আছেন, জীবন মন এই পেশাতেই সঁপিয়া দিয়াছেন৷ সেই অভিজ্ঞতা যাহাদের রহিয়াছে তাহারা খুব ভাল করিয়াই জানেন রাজনীতির নোংরামীেিত সমস্ত শুভ কাজ কিভাবে নস্যাৎ হইয়া গিয়াছে৷ প্রেস কাউন্সিলের কি সেই অচলাবস্থার অবসানে কোনও কার্য্যকরী ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ আছে?
2016-03-29