মোমবাতি কংগ্রেস

ত্রিপুরায় কংগ্রেস কার্য্যত কোমাতেই চলিয়া গিয়াছে৷ সম্প্রতি, অমরপুরে বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে জামানত জব্দ হওয়া এবং এডিসির ভিলেজ ভোটের শোচনীয় পরিণতিতে এরাজ্যে কংগ্রেসের অস্তিত্বই বিপন্ন হইয়া পড়িল৷ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস- সিপিএম জোটের পাকাপাকি সিদ্ধান্ত যখন হইতে চলিয়াছে তখন ত্রিপুরায় কংগ্রেস কর্মীরা যে হতাশ হইয়া পড়িয়াছেন সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একটি আসনও দখলে রাখতে congressপারিবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়াছে৷ সিপিএম দলের সঙ্গে জোটের প্রশ্ণে রাজ্যে কংগ্রেসের অধিকাংশ বিধায়কই অসম্মতি প্রকাশ করিয়াছেন৷ কিন্তু, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা এই জোট সিদ্ধান্তকে নীরব সম্মতি জানাইয়াছেন৷ তিনি যে দলের হাইকমান্ডের একনিষ্ট সৈনিক এবং সোনিয়া রাহুলের যেকোনও সিদ্ধান্তকে নতমস্তকে মানিয়া নিবেন তাহাই স্পষ্ট করিয়া দিয়াছেন৷ কংগ্রেস এমনিতেই ত্রিপুরা রসাতলে গিয়াছে৷ তাহাকে টানিয়া তুলিবার কোনও সম্ভাবনাই নাই সেখানে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করিয়া নিজের মসনদ হারাইয়া নিজের কোনও লাভ নাই৷ বরং অনেক বেশী  ক্ষতি৷ জোট বিরোধী কংগ্রেস বিধায়করা পড়িয়াছেন মহা বিপাকে৷ কারণ বিজেপি দলে যোগ দিবারও ক্ষেত্রে ভরসা পাইতেছেন না৷ কংগ্রেসের ভরাডুবি অবস্থায় কিছু ভোট বিজেপির থলিতে পড়িয়াছে ইহাতে হয়তো দেখা গিয়াছে যে, এই গেরুয়া দল দ্বিতীয় স্থানে চলিয়া আসিয়াছে৷ কিন্তু আগামী দিনে বিজেপির উত্থানের সম্ভাবনার পিছনে কংগ্রেসের অবদানই অনেক বেশী৷ কিন্তু, রাজ্যে বিজেপি শক্তিশালী দল হইয়া উঠিবার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় ত্রিপুরায় শক্ত সমর্থ ও জনপ্রিয় নেতৃত্বের অভাব৷ এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরায় কংগ্রেস দলের সামনে বিপদ তো অনেক বেশী ঘনাইয়া আসিতেছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই৷

এই পরিস্থিতিতে, ত্রিপুরায় কি অশোক ভট্টাচার্যের মোমবাতি কংগ্রেসের নবজন্ম প্রাপ্তি হইবে? ১৯৭৭ সালে কেন্দ্রে ইন্দিরার পতনের সংগে সংগে ত্রিপুরায় কংগ্রেসের সব বিধায়কই জনতা ও সিএফডি দলে যোগদান করিয়া সিপিএমের সঙ্গে সরকার গঠন করিয়াছেন৷ তখন ইন্দিরাকে সিপিএম রাক্ষুসে ডাইনী বলিয়া অভিহিত করিত৷ কংগ্রেস হঠাইতে সিপিএম আদা জল খাইয়া মাঠে নামিয়াছেন৷ দেশের যাবতীয় সর্বনাশের জন্য সিপিএম কংগ্রেসকেই দায়ী করিয়াছে৷ তখন বামেদের শ্লোগান ছিল ‘কংগ্রেস হঠাও দেশ বাঁচাও’৷ কংগ্রেস ত্যাগী বিধায়করা তো সেই সাতাত্তর সালে সিপিএমের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করিয়া ‘গর্হিত’ কাজ করিয়াছে বলিয়া তখন তেমন সোরগোল উঠে নাই৷ আজ কংগ্রেস সিপিএম জোটের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের একাংশ প্রতিবাদী হইতেছেন কিভাবে? কংগ্রেস সিপিএম সম্মুখ সমর যেমন দেশের রাজ্যের মানুষ দেখিয়াছেন তেমনি দুই দলের গভীর প্রেম পর্ব মানুষ অবলোকন করিয়াছেন৷ গোপন অভিসারও মানুষের চোখ এড়ায় নাই৷ কংগ্রেস- সিপিএমের এই সখ্যতাকে রাজ্যের একাংশ মানুষ ‘নিষিদ্ধ’ প্রেম বলিয়া বর্ণিত করিয়াছেন৷ এই প্রেমের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের মেরুদন্ড যেমন ভাঙ্গিয়াছে ত্রিপুরাতে দলের অস্তিত্ব বিপন্ন হইয়াছে৷ এরাজ্যে একসময় কংগ্রেস সভাপতি অশোক ভট্টাচার্য্য বকুল তলায় মোমবাতি জ্বালাইয়া রাখিয়াছিলেন? সেই মোমবাতির উত্তরসুরী কি বর্তমান প্রদেশ সভাপতি বীরজিৎ সিনহাই ত্রিপুরায় কংগ্রেসের বাতি জ্বালইয়া রাখিবেন? সেই পরিস্থিতির দিকেই যে প্রাচীন এই দলের পরিণতি প্রাপ্তি হইতেছে সে বিষয়ে আর কোনও সন্দেহই রহিল না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *