BRAKING NEWS

কুসংস্কারের নাগপাশ

Superstitionsবিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতি সাধিত হইয়াছে৷ বিবর্তনের যুগেও এইসব উন্নতিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাইতে না পারিবার কারণেই সমাজ ব্যবস্থায় অপমৃত্যু, হত্যাকান্ড, গুপ্তহত্যা ইত্যাদির ঘটনা দিন দিন বাড়িয়া চলিতেছে৷ বিশেষ করিয়া শিক্ষার হার যেইসব দেশ বা রাজ্যে কিংবা সমাজ ব্যবস্থায় অনেকটাই কম সেই সব সমাজ ব্যবস্থায় এই ধরনের ঘটনা বাড়িয়া চলিয়াছে৷ অশিক্ষা, কুসংস্কার সমাজ ব্যবস্থাকে চিড়ে চিড়ে খাইতেছে৷ এই সব কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষজনকে কিংবা সমাজ ব্যবস্থাকে শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত করিবার জন্য যেইটুকু উদ্যোগ গ্রহণ করিবার প্রয়োজন ছিল তাহা নেওয়া হয় নাই৷ সেই কারণেই সমাজ ব্যবস্থার অধঃপতন ঘটিয়া চলিয়াছে৷ বিশেষ করিয়া আমাদের রাজ্য ত্রিপুরার দিকে ফিরিয়া তাকাইলে দেখা যাইবে উপজাতি সমাজ ব্যবস্থায় কুসংস্কার এখনও অব্যাহত রহিয়াছে৷ ডাইনী অপবাদে হত্যাকান্ড, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ না করিয়া বনের লতা-পাতাকে ওষুধ হিসাবে গ্রহণ করা এবং ওঝা-বৈদ্যের কাছে ছুটিয়া যাইবার প্রবণতা অব্যাহত রহিয়াছে৷ এই প্রবণতা কমাইতে হইলে একদিকে যেমন উপজাতিদের শিক্ষার হার বাড়াইবার দিকে অধিক নজর দিতে হইবে ঠিক তেমনি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলিকে আরও বেশী করিয়া দায়দায়িত্ব পালন করিতে হইবে৷ তাহারা যদি বিভিন্ন সভা সমাবেশে কুসংস্কার সম্পর্কে, ডাইনী অপবাদ সম্পর্কে উপজাতি অংশের মানুষকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেন তাহা হইলে এই সব অপরাধ ধীরে ধীরে হ্রাস করা সম্ভব হইবে৷ তাহাতে একদিকে যেমন সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়িয়া উঠিবে তেমনি বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে কাছে টানিয়া নিবার সুযোগ মিলিবে৷
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির যুগে, যখন মানুষ অন্ধ কুসংস্কারের হাত হইতে মুক্তির জন্য প্রয়াসী তখন এই ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে ডাইনী সন্দেহে হত্যা, গ্রাম ছাড়ার ঘটনা ঘটিতেছে৷ শুধু ডাইনী হত্যার ঘটনা নহে আরও অনেক কুসংস্কারে আমাদের সমাজকে এখনও আষ্টেপৃষ্টে বাঁধিয়া রাখিয়াছে৷
ডাইনী অপবাদে আক্রমণ, হামলা, হত্যা ও হত্যার চেষ্টার আরও অভিযোগ আছে৷ এইসব ঘটনাগুলি রোধে জন সচেতনতার লক্ষ্যে তেমন কোনও উদ্যোগ দেখা যাইতেছে না৷ এখনও ত্রিপুরার বিভিন্ন উপজাতি এলাকায় বিভিন্ন কুসংস্কার জাঁকাইয়া আসে৷ এই কুসংস্কারের মধ্যে ঝাড়ফঁুক, পূজা ও বিভিন্ন ওঝা বৈদ্যের মাধ্যমে চিকিৎসরে নামে চলে তিলে তিলে ধবংসের পথে৷ নানা ধরনের কুসংস্কারে বহু মানুষের প্রাণ গিয়াছে এর হিসাব কাহারা রাখে? অথচ ইহাই বাস্তব যে, কুসংস্কার এখনও গ্রাম ত্রিপুরার উপজাতিদের মধ্যে সাংঘাতিক ভাবে জাঁকাইয়া আছে৷ আজকের বিজ্ঞান মনস্কতার যুগে ত্রিপুরার মতো রাজ্যের উপজাতি পল্লীতে কুসংস্কার মারাত্মক ভাবে ক্রীয়াশীল৷ ইহা বড় ব্যর্থতা ছাড়া আর কি হইতে পারে৷
ত্রিপুরার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর কি নাকে তেল দিয়া ঘুমায়? রাজ্যে বিজ্ঞানের প্রচার যদি ঠিকমতো হইত তাহা হইলে নিশ্চয়ই সুফল মিলিত৷ কিন্তু রাজ্যের উপজাতিরা এখনও সেই অন্ধকারে৷ যেখানে শিক্ষার আলো, বিজ্ঞানের আলো পৌঁছায় নাই৷ এই যখন অবস্থা তখন প্রজাতির গর্ব তো ধূলায় লুটাইবে৷ ত্রিপুরার মানুষ অতীতের বদ্ধ কুসংস্কার মুক্ত হইবার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করিয়াছে৷ এখনও যেখানে এই কুসংস্কারের নাগপাশে মানুষ বন্দী তাহাদের বন্দিদশা তখনই কাটিবে যদি বিজ্ঞান চেতনা ছড়াইয়া দেওয়া সম্ভব হয়৷ বিজ্ঞানের সুফল যদি ওই গ্রাম পাহাড়ের মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় তবে ডাইনী অপবাদের ঘটনা নির্মূল হইতে পারে৷ এর জন্য প্রয়োজন রাজ্য সরকারের কার্যকরী ভূমিকা৷ সচেতনতা শিবিরে বেশী সংখ্যক মানুষের অংশ গ্রহণ, হাতে কলমে বাস্তবতা তুলিয়া ধরিয়া প্রশিক্ষিত করার মধ্য দিয়া কুসংস্কার হইতে মুক্তির পথ আসিতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *