নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ জানুয়ারি ৷৷ উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২০ তম জন্মজয়ন্তী৷ এই উপলক্ষ্যে ঐতিহ্য বজায় রেখে মূল অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতন৷ চিরাচরিত প্রথায় সুসজ্জিত ট্যাবলু’র আয়োজনও করা হয়৷ এদিন, সকালে বিদ্যানিকেতনের মাঠে অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী৷ এরপর রাজপথ আলোড়িত করে বের হয় ট্যাবলু৷ মোট ২৬টি থিম এবং বিভিন্ন ক্লাব ও সামাজিক সংস্থা মিলে সেজে উঠে ট্যাবলু৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ থেকে শুরু করে শান্তিরবার্তা সবকিছুই স্থান পায় সুসজ্জিত ট্যাবলুতে৷ বিদ্যানিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা নানা পোশাকে সজ্জিত হয়ে রাজপথ আলোড়িত করে৷ সকাল থেকেই বিদ্যানিকেতন চত্বর সহ রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় জড়ো হতে থাকেন অগণিত মানুষ৷ নেতাজী জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রতিবারই এই চিত্র দেখা যায় ২৩শে জানুয়ারির সকালে৷ এদিন, এই ট্যাবলুতে পাঠানকোটের ভয়াবহতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক দিক এবং আঞ্চলিক বিষয় তুলে ধরা হয়৷
[vsw id=”pSlVJvpUiBA” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]উল্লেখ্য, সারা দেশের সাথে রাজ্যেও আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর সেনানী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২০ তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়৷ রাজ্যের মূল অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতন প্রাঙ্গণে৷ সেখানে জাতীয় পতাকা এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের পতাকা উত্তোলন করেন শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী৷ তিনি নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ বাহিনীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন৷ অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ভারত মাতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান৷ ভারতের মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য তিনি গোটা জীবন উৎসর্গ করেছেন৷ তাই আমাদের কাছে এই দিনটি হচ্ছে দেশপ্রেম দিবস৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নেতাজী দেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদ দূর করে দেশকে স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন৷ তাঁর স্বপ্ণ ছিল দেশ স্বাধীন হবে৷ দেশের জনগণ তার মৌলিক অধিকার যথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা প্রভূতি ভোগ করবেন৷ কিন্তু স্বাধীনতার ৬৮ বছর পরও আমরা কি দেখি-দেশের কোটি কোটি লোক নিরক্ষক, দু’বেলা পেট ভরে খেতে পান না, নেই স্বাস্থ্য, পানীয়জল, বাসস্থানের সুবিধা৷ দেশকে খন্ড খন্ড করার অপপ্রাস চলছে৷ চলছে অসহিষ্ণুতা তৈরীর অপচেষ্টা৷ তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷ সম্মানিত অতিথির ভাষণে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড ব্রজগোপাল রায় সর্ব প্রথমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন৷ তিনি বলেন, দেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদকে দূর করতে নেতাজীর যে অবদান তা চিরস্মরণীয়৷ আই সি এস পরীক্ষায় পাশ করা সত্ত্বেও চাকুরী না নিয়ে তিনি দেশ মাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন৷
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে৷ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট জনের মধ্যে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র পারিষদ বিশ্বনাথ সাহা, জয়া বিশ্বাস, পারিষদ রত্না দত্ত, এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমূল্য চন্দ্র দেবনাথ, প্রাক্তন শিক্ষক কালীপদ চক্রবর্তী ছাড়াও বহু দর্শক উপস্থিত ছিলেন৷ এরপর এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে বের হয় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা৷ এতে ট্যাবলো সহযোগে এই বিদ্যালয় ও অন্যান্য বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, বিভিন্ন ক্লাবও সামাজিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন৷ এই শোভাযাত্রা রাজধানীর বিভিন্ন পথ পরিক্রমা শেষে পুনরায় এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে সমাপ্ত হয়৷
ধর্মনগর ঃ
যথাযাগ্য মর্যাদায় আজ ধর্মনগরেও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়৷ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে, নেতাজী জন্মজয়ন্তী কমিটি এবং তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের সহযোগিতা জেলার মূল অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় নেতাজী মূর্তি প্রাঙ্গনে৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উত্তর ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সবাধিপতি প্রতিমা দাস৷ নেতাজী মূর্তিতে মাল্যদান করেন সভাধিপতি, বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন, ধর্মনগর পুর পরিষদের সদস্য মিলন শুক্ল বৈদ্য প্রমুখ৷ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সভাধিপতি প্রতিমা দাস, নেতাজী জন্মজয়ন্তী কমিটির আহ্বায়ক রঞ্জিতদ রায়৷ তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের শিল্পীরা দেশাত্ববোধক সংগীত পরিবেশন করেন৷ এই অনুষ্ঠানের পর নেতাজী মূতি প্রাঙ্গন থেকে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক পরিক্রমা করে ধর্মনগর টাউন হল প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়৷
আমবাসা ঃ
ধলাই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্ম দিবস উপলক্ষে প্রভাতফেরী আয়োজিত হয়৷ এরপর চান্দ্রাই পাড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে নেতাজীর জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন চান্দ্রাইপাড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দয়ানন্দ দেববর্মা, সহকারি প্রধান শিক্ষক বাবুল দাস প্রমুখ৷ নেতাজী জন্মজয়ন্তী পালিত হয় কুলাই দ্বাদশ শ্রেণীবিদ্যালয় প্রাঙ্গনেও৷
যথাযোগ্য মর্যাদায় নেতাজীর ১২০ তম জন্মজয়ন্তী উদয়পুরেও বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করা হয়৷ পুর পরিষদ এলাকায় প্রভাত ফেরীর মাধ্যমে দিনটির সুচনা হয়৷ সকাল ৮৩০ মিনিটে উদয়পুর টাউন হলে নেতাজীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়৷ শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শিক্ষা আধিকারিক পঞ্চপদ ত্রিপুরা, বিদ্যালয় পরিদর্শক সুরেশ বিশ্বাস নেতাজীর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন৷ এরপর বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দেশাত্মবোধক সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে৷