BRAKING NEWS

ইতিহাসের বিড়ম্বনা

tripuraসমাজের, দেশের জন্য যাঁহারা নীরবে নিজেকে বিলাইয়া দিয়া একসময় এই বিশ্ব সংসার হইতে মুক্তি নিয়া থাকেন তাহাদের ত্যাগ, তিতিক্ষাকে স্মরণ করার তেমন তাগিদ অনুভুত হয় না৷ এইসব ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের স্মরণে রাখা, তাহাদের জীবনবোধ বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলিয়া ধরার তাগিদ তো তেমন দেখা যায় না৷ এইসব স্মরণীয় ব্যাক্তিরা যখন একেবারেই বিস্মৃতির অতলে তলাইয়া যাইতে থাকেন কোনও কোনও পরিবার আগাইয়া আসে৷ এত এত এনজিও আছে, আছে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা, রাজনৈতিক দল সমুহ৷ তাঁহারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জল নজীর রাখা ব্যাক্তিদের বিষয়ে মোটেও ভাবেন না৷ তাঁহাদের একমাত্র লক্ষ্যই হইল রাজনীতির অঙ্গনে ভাসিয়া উঠা৷ কিভাবে মানুষকে কাছে টানা যায়৷ পরিবারের তরফে যখন সেই বরেণ্য নেতাদের শ্রদ্ধা জানানো হয়, স্মরণাঞ্জলী অনুষ্ঠান ও স্মৃতি রক্ষার্থে উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেখানে সরকার ও সাধারণ মানুষ কতখানি আগাইয়া আসেন সেই প্রশ্ণ উঠা খুব স্বাভাবিক৷ পন্ডিত গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা এতবড় একজন জ্ঞানী গুনী, এত পান্ডিত্য ইত্যাদি থাকা সত্বেও এতদিন তাঁহার নামগন্ধও কাউকে নিতে দেখা যায় নাই৷ প্রয়াত গঙ্গাপ্রসাদের পুত্রবধু এই গুনী, প্রাজ্ঞ ব্যাক্তিকে ইতিহাসের আলোতে প্রতিষ্ঠিত করার যে উদ্যোগ নিয়াছেন তাহা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য ঘটনা৷ এই প্রয়াত উজ্জল ব্যাক্তিত্বের আলোচনা সভাও একটি গোষ্ঠীর মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধতার বেড়ি পরানো হইয়াছে৷ এই জ্ঞানী ব্যাক্তিত্বের জীবন দর্শন, রাজন্য আমলের রাজনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতিই উঠিয়া আসিতে পারে তাঁহার জীবন চর্চার মাধ্যমেই৷
শুধু গঙ্গাপ্রসাদ নহে, এরাজ্যে এমন অনেক ব্যাক্তি আছেন, যাহাদের দেশপ্রেম, সমাজের প্রতি বিরাট কর্তব্য নিষ্টা, রাজ্যের মানুষের জন্য, উন্নয়নের জন্য, রেল লাইনের জন্য জীবনভর সংগ্রাম করিয়া গিয়াছেন৷ এক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করিয়াছেন প্রয়াত অমিয় দেবরায়৷ পিতার জীবনবোধ, মানুষের জন্য কর্তব্য পরায়ণতা ইত্যাদির বিষয়ে তাঁহার জীবন সংগ্রামের একটি অধ্যায় তাঁহার পুত্র উপলব্ধি ও অবলোকন করিয়াছেন৷ তিনি পিতা অমিয় দেবরায়ের স্মৃতি রক্ষায় কতনা ঘুরিয়াছেন৷ দ্বারে দ্বারে ছুটিয়াছেন৷ কিন্তু, আশাহত হইয়া শেষ পর্য্যন্ত বোধহয় পিছাইয়া আসিতে হয়৷ এমনই হইয়াছে৷ পরিবারের তরফে মহান কীতির বিষয় তুলিয়া আলোচনা অনুষ্ঠানে, স্মৃতি পুরস্কার প্রদান ইত্যাদি চালু করা হয়৷ কিন্তু সরকারী তরফে সেই প্রয়াত, বরণীয় ব্যাক্তিদের সম্পর্কে তেমন কোনও ভুমিকা পালন করিতে দেখা যায় নাই৷ প্রয়াত প্রবীন সাংবাদিক, ত্রিপুরার যোগাযোগ সমস্যা নিয়া, রেলের দাবী নিয়া সেই পঞ্চাশের দশকে যিনি কলমযুদ্ধ চালাইয়া গিয়াছে, অত্যন্ত সততার সঙ্গে, সেই অমিয় দেবরায়ের স্মৃতি রক্ষায় তেমন কোনও উদ্যোগ তো সরকারী তরফে নেওয়া হয় নাই৷ শুধু অমিয় দেবরায় নহেন আরও অনেক বরণ্য ব্যাক্তি ত্রিপুরায় বিচরণ করিয়াছেন, তাঁহাদের ইতিহাস তো হারাইয়া যাইতেছে৷ যেমন পন্ডিত গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা ১১৭তম জন্মজয়ন্তী পালনের মাধ্যমে তাঁহার স্মৃতিচারণ করা হইয়াছে৷ আসলে, আলোচনার মঞ্চের মধ্যেই যেন সব কিছু সীমাবদ্ধ৷ কিছু লেখক, বুদ্ধিজীবি আছেন যাহারা মঞ্চ আলোকিত করিয়াই দায়িত্ব শেষ করেন৷ এইসব প্রচারমুখী ব্যাক্তিরা নিজেদের প্রচার নিয়াই সর্বাধিক ব্যতিব্যস্ত থাকেন৷ এইসব আলোচনা অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ লেখক বুদ্ধিজীবিদের আমন্ত্রণ জাাননো হয়৷ যাহারা ইতিহাস সম্পর্কে অনেক বেশী অজ্ঞ তাহারাই সামনের সারীতে উপনীত হইয়া ইতিহাসের আলোকে নিজেরা আলোকিত হইতে চান৷ প্রচারে নিজেদের মুখ তুলিয়া ধরাই যদি মুখ্য হয়, মঞ্চ আলোকিত করাই যদি লক্ষ্য হয় তাহা হইলে ইতিহাসের প্রথিতযশীরা জন আলোকিত হইবেন কিভাবে?
সময় আসিয়াছে, যদি সত্যিই রাজনীতির সংকীর্ণতার উর্ধে উঠিয়া রাজ্যের প্রকৃত কৃতি, সমাজে যাহাদের অনন্য ভুমিকা আছে তাহাদের জীবনালক্ষ্যে এবং পরিচিতি তুলিয়া ধরা হয়, তাহা হইলে এরাজ্যের আগামী প্রজন্ম অনেক বেশী সমৃদ্ধ হইবে৷ ত্রিপুরাকে জানা, এরাজ্যের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার মধ্য দিয়াই তো মানুষের চিন্তা ও চেতনার দুয়ার উন্মুক্ত হইতে পারে৷ ত্রিপুরায় গঙ্গাপ্রসাদ আরও একজন হয়তো খঁুজিয়া পাওয়া যাইবে না৷ কিন্তু, মানুষের জন্য লড়াই’র ইতিহাস আছে এমন অনেক ব্যাক্তিকে খঁুজিয়া বাহির করা খুব বেশী কঠিন মনে হয় না৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সব কৃতিদের খঁুজিয়া বাহির করিবার নির্দেশ যদি জারী হইয়া থাকে তাহা হইলে সরকারের সদিচ্ছা আছে বলিয়াই ধরিয়া নেওয়া যাইতে পারে৷ গঙ্গাপ্রসাদের মতো বিরল ব্যাক্তিত্বকে নিয়াই যদি দীর্ঘ আলোচনা করার সুযোগ আসে তাহা হইলে ত্রিপুরার অতীত সম্পর্কে অনেক বেশী জানিবার সুযোগ হইতে পারে৷ কিন্তু অভিজ্ঞতা বড়ই বেদনার৷ আত্মসর্বস্বতায় আমরা ইতিহাসকে দূরে সরাইয়া দিই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *