নিধন, বার্ড ফ্লু’র থাবা গান্ধীগ্রাম ফার্মে, মারা হচ্ছে ছয় সহস্রাধিক মুরগী

Bird Flu 32নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ জানুয়ারি৷৷ গান্ধীগ্রাম স্থিত পোলট্রি ফার্মে শনিবার থেকে H5N1 বা বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত মুরগিগুলির নিধন (কালিং) শুরু হয়েছে৷ প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা মনোরঞ্জন সরকার জানিয়েছেন, এদিন ২৮১১টি মুরগি নিধন করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ১০,১৭৮টি ডিম এবং ৫০ কেজি মুরগির খাবার নষ্ট করা হয়েছে৷ তিনি জানান, সাড়ে ছয় হাজারের উপর আক্রান্ত হাঁস, মুরগি নিধন করা হবে৷ আরো দুদিন লাগবে এই নিধন কার্য সম্পন্ন করতে৷ শ্রী সরকার জানান, আগামীকাল সুকলটিলা এলাকায় হাঁস নিধন করা হবে৷ ইতিমধ্যে সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রেখে তিনটি স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে৷ যাতে হাঁস এবং মুরগি বাইরে যাওয়া এবং আসা বন্ধ করা যায়৷ এদিন, তিনি আরো জানান, গান্ধীগ্রামস্থিত পোলট্রি ফার্মের এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বার্ড ফ্লু কবলিত এলাকা বলে চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ পাশাপাশি দশ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকাকে সারভাইলান্স জোন হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ এদিকে, পোলট্রি ফার্মের বাইরে মানুষের বাড়িঘরে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হাঁস কিংবা মুরগি সনাক্ত করার কাজও জোরকদমে চলছে৷ মোট চারটি টিম এই মুরগি নিধনের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বলে শ্রীসরকার জানিয়েছেন৷
[vsw id=”hz2WRSclh4g” source=”youtube” width=”325″ height=”244″ autoplay=”yes”]উল্লেখ্য, গান্ধীগ্রামস্থিত পোলট্রি ফার্মে চলতি মাসের ৬/৭ তারিখ থেকে মুরগির মরক পরিলক্ষিত হয়৷ এছাড়া, ঐ এলাকার বাড়িঘরেও হাঁস ও মুুরগির মরক লক্ষ্য করা হয়৷ এই ঘটনা নজরে আসতেই প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের তরফে মৃত হাঁস, মুরগির নমুনা ভোপালস্থিত ন্যাশনাল ইন্সষ্টিটিউট অফ হাই সিকিউরিটি এনিম্যাল ডিজিজ ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়৷ গত ১৪ জানুয়ারি সেখান থেকে রিপোর্টে জানানো হয় নমুনায় বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ মিলেছে৷ সঙ্গে সঙ্গেই দপ্তরের তরফে সারা রাজ্যে বার্ড ফ্লু’র এলার্ট জারি করা হয়৷ পাশাপাশি শনিবার থেকে হাঁস-মুরগি নিধনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়৷ ইতিমধ্যে সংক্রমিত এলাকায় হাঁস, মুরগি বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর গান্ধীসুকল উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে ক্যাম্প বসিয়ে সমস্ত বিষয়ের উপর নজরদারি রাখছে৷
এদিকে, যেসব চাষীদের হাঁস, মুরগী এবং ডিম নিধন করা হবে তাদের সরকারীভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে৷ কিন্তু চাষীদের অভিযোগ সরকারী ভাবে সাহায্য নেহাতই কম মিলে৷ বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণের ফলে তাদের ক্ষতির মুখই দেখতে হবে৷
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে রাজ্যে প্রথম বার্ড ফ্লু চিহ্ণিত হয়৷ লক্ষাধিক হাঁস, মুরগী তখন নিধন করা হয়েছিল৷ সীমান্ত ঘেঁসা ত্রিপুরায় কয়েক বছর অন্তর অন্তর বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ ২০১৩ সালে শেষবারের মতো রাজ্যে বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল৷ ফের রাজ্যে বার্ড ফ্লু আক্রান্তের ঘটনায় শঙ্কিত গোটা রাজ্যের জনগণ৷ ইতিমধ্যে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত ফার্মগুলি থেকে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে হাঁস, মুরগী এবং ডিম পৌঁছে গিয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে বাজারগুলিতেও নজরদারী চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে৷ তবে কী পরিমান সংক্রমিত হাঁস, মুরগী এবং ডিম বাজারে রয়েছে তা এখনই নির্দিষ্টভাবে জানতে পারেনি দপ্তর৷ দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা জানিয়েছেন,৷ যতদূর অনুমান করা হচ্ছে সংক্রমিত হাঁস, মুরগী কিংবা ডিম বাজারজাত হয়নি৷ তবে, একদমই যে নেই সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি তিনি৷
এদিকে, সামনে বিয়ের মরশুম৷ এরই মধ্যে বার্ড ফ্লু আতঙ্ক স্বাভাবিকভাবেই পরিবারগুলিতে দুঃশ্চিন্তার ছাপ৷ বিকালে পাওয়া সংবাদে জানা গিয়েছে, শহরের বাজরগুলিতে মুরগীর দাম নিম্নমুখী হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য মাংসের দামও বাড়ছে ক্রমশঃ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *