BRAKING NEWS

স্বপ্ণ পূরণে আরও এক ধাপ, এল ট্রায়াল ট্রেন, গণ উচ্ছাসে নব যুগের সূচনা

BG TRAINনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ জানুয়ারি৷৷ উলুধবনী ও ফুল-বেলপাতা দিয়ে সাদরে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে ব্রডগেজে ট্রায়াল ট্রেনকে৷ সাতটি বগি নিয়ে বুধবার আগরতলা স্টেশনে ব্রডগেজের ইঞ্জিনটি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করে উপস্থিত উৎসুক জনতা সকলেই বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে মেতে উঠেন৷ ব্রডগেজে রূপান্তরিত ট্রেকে তখন জনতার ভীড়৷ এরই মধ্যে সাইরেন বাজিয়ে লুকো পাইলট শান্তি কুমার দাস এবং সহকারী লুকো পাইলট অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য সবুজ সংকেত দেখেই স্টেশনে নিয়ে আসনে ট্রেনটি৷ মঞ্চে উপস্থিত রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী মনোজ কুমার সিনহা, পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দে, রাজস্ব মন্ত্রী বাদল চৌধুরী, লোকসভার সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত সহ রেলওয়ের উচ্চ পদস্থ আধিকারীকারা সবুজ পতাকা দেখিয়ে অভ্যর্থনা জানান ট্রায়াল ট্রেনটিকে৷ সাথে সাথে এই ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী রয়ে যান উপস্থিত সকলেই৷
[vsw id=”OGu9IFuwiU0″ source=”youtube” width=”325″ height=”244″ autoplay=”yes”]উল্লেখ্য, ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সহিত প্রচুর সংখ্যক জনতার উপস্থিতিতে বর্ণময় অনুষ্ঠানে আজ রাজধানী আগরতলায় পরীক্ষামূলক প্রথম ব্রডগেজ ট্রেনকে অভ্যর্থনা জানানো হ য়৷ এই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে আগরতলা রেলওয়ে স্টেশনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় রেলরাষ্ট্রমন্ত্রী মনোজ সিনহা পরীক্ষামূলক ট্রেনকে সিগন্যাল দেখিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, ত্রিপুরাবাসীর কাছে আজকের দিনটি এক স্মরণীয় মুহূর্ত৷ যদিও এটা রাজধানী আগরতলায় প্রথম ব্রডগেজের পরীক্ষামূলক ট্রেন৷ তিনি বলেন, কয়েক মাসের মধ্যেই আগরতলা জাতীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে রেলপথে যুক্ত হবে৷ এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা৷ এই অঞ্চলে মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজ লাইন রূপান্তরিত করার জন্য রেল দপ্তর ৬ মাসের জন্য মেগা ব্লক নিয়েছিল৷ কিন্তু সকলের সম্মিলিত প্রয়াস ও প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে তা তিন মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে৷ এখন শুধু সিগন্যালিং সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ বাকি রয়েছে৷ এর জন্য তিনি রাজ্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার, কর্মচারীদেরকে অভিনন্দন জানান৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০২০ সালের মধ্যে উত্তরপূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের রাজধানীকে রেল পরিষেবার সাথে যুক্ত করা হবে৷ এর জন্য কাজ এগিয়ে চলছে৷ এই কর্মসূচীতে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে আগরতলা থেকে ব্রডগেজ ট্রেন পরিষেবা চালু করা হবে৷
এছাড়া, আগরতলা থেকে উদয়পুর থেকে সাব্রুম পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা যথাক্রমে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি ও ঐ বছরের শেষের দিকে কাজ সম্পন্ন করা হবে৷ তিনি আগরতলা থেকে আখাউড়া হয়ে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে রেল পরিষেবা চালু করার সাপেক্ষে বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন৷ আগরতলায় নয়া লাইন নির্মাণ কর্মসূচীকে জাতীয় কর্মসূচী হিসাবে ঘোষণা করেন অটলবিহারা বাজপেয়ী৷ এই ঘোষণার ফলে কর্মসূচী রূপায়ণে পর্যাপ্ত তহবিলের যোগানে সুবিধা হয়, এই কারণে শ্রী বাজপেয়ীর ঘোষণা ছিল এই কর্মসূচীর ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট৷ ছয়মাসের কাজ তিনমাসের মধ্যেই শেষ করায় রেলওয়ের প্রকৌশলীদের কঠোর শ্রম এবং কর্মনিষ্ঠার প্রশংসা করে তিনি বলেন, সাব্রুম পর্যন্ত রেলপথ আগামী মার্চ ২০১৭ সালের মধ্যে চালু হবে৷ রেলমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে জানান, উত্তর পূর্বাঞ্চলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম গুরুত্বপ্রাপ্ত বিষয়৷ আগামী ২০২০ সালের মধ্যে উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীর মধ্যে ব্রডগেজ রেল যোগাযোগ তৈরি করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷
তিনি বলেন, এটা দুঃখের বিষয় যে স্বাধীনতার পর রেল যাত্রীর সংখ্যা ১৬ গুণ বৃদ্ধি পেলেও, রেল নেটওয়ার্ক বেড়েছে মাত্র ২২৬ গুণ৷ সরকার এখন রেলওয়েতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আগামী পাঁচবছরে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে৷ যা অতীতের চাইতে অনেকটাই বেশি৷ আগরতলা-আখাউড়া রেল লিঙ্ক কর্মসূচী সম্পর্কে শ্রী সিনহা বলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য ক্রমবর্ধমান খরচের কথা বিবেচনায় রেখেও কর্মসূচীটি রূপায়ণে সরকার এগিয়ে চলেছে৷ এই কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক দৃঢ়তর হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ আগরতলা রেলওয়ে স্টেশনের যাত্রী সাধারণের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বিভিন্ন সুবিধাবলীর তিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০৯ কিমি দীর্ঘ এই রেল লাইনের ১৭টি ওভারব্রিজ এবং তিনটি আন্তার ব্রিজের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে সড়ক পথে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে৷
পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী বলেন, রাজ্য ব্রডগেজের সাথে যুক্ত হবার ফলে এই অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার আরো পরিবর্তন আসবে৷ আগামী ২০২০ সালের মধ্যে উত্তরপূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যে ট্রেন পরিষেবা পৌঁছে দেবার যে পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে সমগ্র উত্তরপূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে৷ তিনি রাজ্যেও রেলওয়ে রিক্র্যুটমেন্ট বোর্ড স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন৷
অনুষ্ঠানে পরিবহনমন্ত্রী মানিক দে,রাষ্ট্রমন্ত্রী মনোজ সিনহার হাতে স্মারকলিপি প্রদান করে বলেন, রাজ্যবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল আজকের এই দিনটি৷ সে ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর প্রথম মিটার গেজ ট্রেন আগরতলায় আসার পর থেকেই ব্রডগেজ লাইনের দাবি উঠতে শুরু করে৷ রাজ্যবাসীর সে দাবি আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে৷ এরজন্য তিনি রেল দপ্তর স হ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান৷ আগামী দিনগুলিতে আগরতলা থেকে সুপারফাস্ট ট্রেন সহ রাজধানী এক্সপ্রেস চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় রেল রাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ এর জন্য রেল বাজেটে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানান৷ তিনি রাজ্যেও একটি রেল ডিভিশন স্থাপনের বিষয়টি রেলওয়ে দপ্তরের নজরে আনেন৷
অনুষ্ঠানে রাজ্যে রেলপথ স্থাপনের বিভিন্ন ধারাবাহিক আন্দোলনের উল্লেখ করে সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত আগরতলা থেকে দ্রুত যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ জানান৷ তিনি রাজ্য থেকে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে রেল পরিষেবার জন্যও গুরুত্বারোপ করেন৷
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (নির্মাণ) এইচ কে জগ্গি৷ এছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *