নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, খোয়াই, তেলিয়ামুড়া, ৫ জানুয়ারি৷৷ রাজ্য পুলিশের কাজকর্ম নিয়ে একের পর এক সমালোচনা উঠে আসছে৷ অভিযোগের পাহাড় জমছে৷ পৃথক স্থানে তিনটি ঘটনা রীতিমতো পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে৷ দুটি স্থানে পুলিশ ভিলেনের ভূমিকায় ছিল৷ এপর একটি ঘটনায় পুলিশের অতি সক্রিয়তার দরুন নাজেহাল হতে হয়েছে৷ সংবাদে প্রকাশ, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার শান্তিরবাজার মহকুমার বাইখোরা থানার অধীন কালমা এলাকায় পুলিশ ও পিকনিক পার্টির মধ্যে খন্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে৷ তাতে মহিলা পুলিশ কর্মীসহ আটজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন৷
বাইখোলা থানার কালমা এলাকায় গতকাল রাতে কিছু যুবক পিকনিক করতে গিয়ে মদমত্ত হয়ে উশৃঙ্খল আচরণ শুরু করে৷ খবর পেয়ে রাত নয়টা নাগাদ পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়৷ পিকনিক পার্টির মদমত্ত যুবকরা পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা চালায়৷ পুলিশ ও পিকনিক পার্টির যুবকদের মধ্যে খন্ডযুদ্ধ হয়৷ তাতে আটজন পুলিশকর্মী আহত হয়৷ আহতের মধ্যে একজন মহিলা পুলিশ কর্মীও রয়েছেন৷
পুলিশ বাহিনী আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে এসডিপিওর নেতৃত্বে বাইখোরা থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও টিএসআর বাহিনীর জওয়ানরা ছুটে যান৷ আহত পুলিশ কর্মীদের তারা উদ্ধার করে বাইখোরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন৷ কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আহতদের মধ্যে এসআই মণীন্দ্র দেববর্মা ও রাজু দেবনাথকে জিবিতে স্থানান্তর করেন৷ এছাড়া আহত আরও দুইজন পুলিশ কর্মীকে উদয়পুর গোমতী জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়৷ রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারও৷ মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলার পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী৷ দক্ষিণ জেলার পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী জানান, গতকাল রাতে বাইখোরা থানায় খবর আসে কিছু যুবক পিকনিক করার নাম করে রাত পর্য্যন্ত মাইক বাজিয়ে উশৃঙ্খল আচরণ করে চলেছে৷ সেই খবরের ভিত্তিতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুলিশের উপর আক্রমণ হয়৷ স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংঘর্ষের কোন ঘটনা ঘটেনি৷ তিনি আরও জানান, পুলিশ কর্মীদের পিকনিক পার্টির মদমত্ত যুবকরা আটকেও রেখেছিল৷ পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে৷ ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে
ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাইখোরা থানার কালমা এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলাও গ্রহণ করেছে৷
পুলিশ অফিসারের সামনেই কয়েকজন উপজাতি যুবক হরেকৃষ্ণ মালাকারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে৷ হরেকৃষ্ণর হত্যা কারীরা যখন তার বুকের উপর দাঁড়িয়ে তাকে মেরে ফেলার জন্য পেটচ্ছিল তখন উপস্থিত পুলিশ অফিসার বিজয় দাসের পায়ে ধরে হরেকৃষ্ণের বোন সবিতা মালাকার ভাই এর প্রান ভিক্ষা চেয়ে কাতর আবেদন জানায়৷ আবেদনে সারা না দিয়ে সহকারী সাব ইনস্পেক্টর বিজয় দাস সবিতাকে জানিয়ে দেয় ওনার কিছু করনীয় নেই৷
আজ দুপুরে হরেকৃষ্ণ মালাকারের মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর নিয়ে যেতে এসে লালটিলা গ্রামের তার আত্ম্যয় পরিজনেরা এই খুনের জন্য প্রকল্প্যে দায়ী করলেন বাইজালবাড়ী ফাঁড়ি থানার পুলিশদের৷ হরেকৃষ্ণের পরিবারের লোকজন প্রচন্দ্র উত্তেজিত হয়ে জানালেন এ এস আই বিজয় দাস ঐ সময় হরেকৃষ্ণকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলে সে বেঁচে যেত৷ কিন্তু পুলিশ ইচ্ছে কৃত ভাবে তা করেনি৷ গতকাল রাতে খোয়াই জেলা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে ওসি নারায়ন চক্রবর্তী এবং সাব ইনস্পেক্টর পলাশ দত্ত সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের ঘটনার বিবরনে সে কাহীনি শুনিয়েছিলেন তা খন্তন করে হরেকৃষ্ণর পরিবারের লোকজন অভিযোগে জানালেন যে কয়েকজন যুবক হরেকৃষ্ণকে পেটায় তাদের মধ্যে ঐ গ্রামের শিবু দেববর্মা এবং শশী দেববর্মার ছেলে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্তছিল৷ হরেকৃষ্ণের বড় ভাই বাদল জানায় হত্যাকারীদের নাম ধাম দেওয়ার পরও ওসি নারায়ন চক্রবর্তী এফ আই এ তাদের নাম অন্তভুক্ত না করে ঘটনা গন প্রহার বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে৷ হরেকৃষ্ণের বোন সবিতা জানায় ঘটনাস্থলে পুলিশের সামনেই শিবু দেববর্মা তাকেও পেটায়৷ পুলিশকে বার বার হত্যাকারীদের নাম ধাম দেওয়া হলে পুলিশ খুনিদের বাঁচাতে বলছে তদন্তের পর দেখা যাবে তারা কতটা জড়িত৷একটি খুনের ঘটনা ঘটে যাবার পরও খোয়াই থানার মামলা নিতে না চাইলে সন্দেহের অভিযোগ তোলে হরেকৃষ্ণের পরিবারের লোকজন৷ এদিকে মৃত যুবকের বড় ভাই বাদল জানায়, খোয়াই থানার পুলিশ এই হত্যাকান্ড নিয়ে তারা তাদের মর্জিমাফিক এফ আই আর এ বয়ান লিখে নেয়৷ হাসপাতাল চত্তরে পুলিশকে জুতো পেটা করার জন্য মৃত যুবকের পরিবারের লোকজন যখন উত্তেজিত হয়ে উঠে তখনই নামানো হয় টিএসআর৷ গতকাল রাতে ওসির উপস্থিতিতে এস আই পলাশ দত্ত জানিয়েছিলেন পদ্মবিল সাব জোনাল অফিসের উপজাতি যুবতী মনিদীপা দেববর্মা সন্ধ্যার পর অফিস থেকে তুলশিখর নিজ বাড়ীতে ফিরছিলেন একটি সুকটিতে করে৷ রাস্তায় মিদনা ছড়াস্থলে হরেকৃষ্ণ সহ আরও দুই যুবক মনিদীপাকে আটকে পাশের একটি জঙ্গলে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে৷ সেই সময় বাইজালবাড়ী পিএইচ সির এক চিকিৎসক ঐ রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় ঘটনা দেখে টেলিফোন করে কিছু যুবককে ডেকে আনেন৷ যুবকরা এসে একজনকে ধাওয়া করে ধরে গণধোলাই দেয়৷ পুলিশের এই বক্তব্য সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করে হরেকৃষ্ণের বোন সবিতা জানায়, গত পরশু অর্থাৎ রবিবার মদ খাওয়া নিয়ে গ্রামেরই শিবু দেববর্মার সঙ্গে হরেকৃষ্ণের প্রচন্ড ঝগরা হয়৷
সোমবার দুপুরে সে তার স্ত্রী সংগীতার নিকট থেকে দুইশ টাকা নিয়ে পদ্মবিল বাজারে যায় বাজার করতে৷ বাজার সেরে সে ঐ শিবু দেববর্র্মর বাড়ীতে এসে একটি মদের বোতল কিনে৷ পরে বোতল রেখে সে যায় একটি দোকান থেকে বাদাম কিনতে৷ হরেকৃষ্ণ এর বোন সবিতা জানায় ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে৷ সবিতা আরও জানায় সে স্থানে তার ভাইকে পেটানো হয় তার থেকে পাঁচশত মিটার দূরে তার ভাই এর বাইসাইকেলটি পাওয়া যায় বাজারের বেগ সহ৷ এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায় সাব জোনালের কর্মী মনিদীপার বাড়ী তুলশিখর এলাকায়৷ ওনার মিদনাছড়ার রাস্তা ধরে তুলশিখর যাবার পেছনে অন্যকোন রহস্য থাকার সম্ভবনা দেখছেন স্থানীয় মানুষ৷ স্থানীয় মানুষ বলছেন এই রাস্তাটি সর্বদাই গাঁজা, মদ, জুয়ারী, ও পাচারের স্বর্গ রাজ্যের রাস্তা এটি৷ এই রাস্তা ধরে সন্ধ্যের পর ভাল মানুষ চলাচলই করে না৷ অপর একটি সূত্রে, জানা যায় দীর্ঘ দিন ধরেই হরেকৃষ্ণের চোরাই মদের অন্য গ্রুপ তার এলাকায় আঁধে যেতে পারত না৷ হরেকৃষ্ণকে একটি অজুহাতে ফেলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলেও স্থানীয় মানুষ অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷
রাজ্যের আইন ব্যবস্থা লাটে উঠেছে৷ আইনীবিধি নিষেধ উপেক্ষা করে আইনী রক্ষক পুলিশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের উপর প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছে৷ আর তাতে করেই পুলিশের সততা দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছে৷ যার খেসারত দিতে হচ্ছে এক শ্রেণীর জনগণদের৷ তেলিয়ামুড়া মহকুমা মুঙ্গিয়াকামী থানার এক পুলিশের বিরুদ্ধে এক শিক্ষককে বেআইনী ভাবে পেটাল পুলিশ৷ আহত শিক্ষকের নাম গণেশ দেববর্মা৷ তিনি মুঙ্গিয়াকামী দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন৷ এই প্রতিবাদের সুকলের ছাত্রছাত্রীদের তিন ঘন্টা থানা ঘেরাও করে রাখে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের গ্রেপ্তারের ও শাস্তির দাবিতে৷ এক সময় ছাত্রছাত্রী থানায় ভাঙচুর করে৷ সংবাদে জানা যায়, মঙ্গলবার পুলিশে আক্রমণে আহত শিক্ষক গণেশ দেববর্মা নিজের বাইকে করে সুকলের দিকে আসছিল৷ সুকল সংলগ্ণ এলাকায় যানবাহনের কাগজপত্র তল্লাশি অভিযানে মুঙ্গিয়াকামী থানার এক এসআই৷ গণেশ দেববর্মা বাইকটি আটক করে বৈধ্য কাগজপত্র দেখানোর নির্দেশ দেয় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার৷ এদিকে গত কয়েকদিন ধরেও গণেশ দেববর্মা কাগজপত্র দেখিয়ে ছিল৷ এনিয়ে পুলিশকে জিজ্ঞেস করে প্রতিদিনই কাগজপত্র দেখাতে হবে৷ এনিয়েই গণেশবাবু এবং কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়৷ এক সময় পুলিশ অফিসার আইনী ভয় দেখিয়ে যখন শিক্ষক মহাশয়কে কব্জায় আনতে না পেরে রাস্তার মধ্যে মারধর করে বলে অভিযোগ৷ মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গণেশবাবু৷ পরে এলাকাবাসীদের সহযোগিতায় গণেশ দেববর্মাকে তেলিয়ামুড়া হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে অবস্থা সংকটজনক হওয়াতে সঙ্গে সঙ্গে জিবি হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থা সংকটজনক হওয়াতে সঙ্গে সঙ্গে জিবি হাসপাতালে রেফার করে৷ পুলিশের দ্বারা শিক্ষকের উপর হামলার প্রতিবাদে মুঙ্গিয়াকামী দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে থানায় প্রবেশ করে৷ ছাত্রছাত্রীরা থানায় গিয়ে থানা ঘেরাও করে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার শুভ্র দেওয়ান চাকামাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায় মুঙ্গিয়াকামী থানা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার অজয় দেববর্মার কাছে৷ এক সময় থানার পুলিশের ব্যবহারে অসন্তোষ্ট হয়ে ছাত্রছাত্রীরা বলপূর্বক থানায় ঢুকে ভাঙচুর চালায়৷ পুলিশের অসহানুভূতি থাকায় ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে অন্যান্য এলাকাবাসীও তাদের আন্দোলনে শরিক হয়৷
এদিকে, ভাঙচুর ও ছাত্রছাত্রীদের উত্তেজিত পরিস্থিতি দেখে থানায় আনা হয় প্রচুর টিএসআর বাহিনী৷ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তেলিয়ামুড়া মহকুমা প্রশাসনের ডিসিএম প্রণয় ভৌমিক৷ তিনি এসে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেন৷ ছাত্রছাত্রীদের শান্ত করার জন্য আইনের রক্ষক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে থানা ঘেরাও প্রত্যাবর্তন করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা৷ এদিকে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে থানায় একটি এফআইআর দেওয়া হয়েছে৷ থানা ঘেরাও দীর্ঘ দুই ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ৷ তিনি হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষকদের নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের শান্ত করার জন্য ছুটে আসে৷ এদিকে একাংশ এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ছাত্রছাত্রী কোথায় কি কারণে সুকল ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে তাদের কাছ থেকে কারণ জেনে পিছু পিছু আসার প্রয়োজনটুকু বোধ করেননি তিনি৷ যদিও শিক্ষককে বেধড়ক মারধরের ঘঠনা ওনার জানা৷ ওনাকে শিক্ষক শিক্ষিকারা এত বিলম্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছার কারণে তিনি সাফ জানেিয় দেন, বর্তমানে নতুন শিক্ষাবর্ষের জরুরি কাজকর্ম থাকায় শিক্ষক শিক্ষিকারা আসতে পারেননি৷ এদিকে রাজ্যে প্রশাসনীয় ব্যবস্থায় গুণধর পুলিশ অফিসারদের বিরদ্ধে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের কথা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ও তাদের ডাকা হয় না৷ এখন দেখার বিষয় ওই এসআই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে৷