জনসংখ্যার হারে ত্রিপুরায় অপরাধের ঘটনা অন্যান্য রাজের তুলনায় ক্রমবর্ধমান৷ তাহা উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়াইতেছে৷ সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ নিরাপত্তাহীনতায়, আতংকে কাটাইবেন ইহাই স্বাভাবিক৷ একথা ঠিক, ত্রিপুরা উগ্রপন্থী তৎপরতা মুক্ত হইতে পারিয়াছে৷ সেই বিভিষিকাময় দিনের কথা ভাবিলে আজ মানুষ শিহরিত হন৷ ত্রিপুরা একদিকে যেমন উগ্রপন্থী মুক্ত হইয়া শান্তির রাজ্যে পরিণত হইয়াছে অন্যদিকে মাফিয়া, জমির দালাল, ঠিকাদারী কাজের অপরাধ চক্র, মাস্তানী, সাধারণ মানুষের উপর জোর জুলুম ইত্যাদির ঘটনা বাড়িয়াই চলিয়াছে৷ ইহা ছাড়াও আছে, রাজনৈতিক দলগুলির হিংসার ইন্ধনের ঘটনা ইদানিং বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাকেও খাটো করিয়া দেখিবার সুযোগ নাই৷ পৃথক রাজ্যের দাবীদার রাজনৈতিক দল পাহাড়ে উপজাতি মহল্লায় হিংসার যে বীজ রোপণ করিয়া চলিয়াছে তাহা তো নিকট ভবিষ্যতেই পল্লবিত হইবে৷ এইসব বিষবৃক্ষ শান্তির পাহাড় গ্রামে বিষ ঢালিবে৷ বিষাক্ত ছোবলে পাহাড়ে উপজাতি জনপদে আবার না রক্তাক্ত সংঘর্ষ ব্যাপক হইয়া উঠে৷ এই আশংকা তো অমূলক নয়৷ রাজ্যের বুকে মাফিয়া জুলুম, মাস্তানদের জুলুম অত্যাচার, বিভিন্ন অপরাধের ঘটনাও তো বাড়িয়া চলিতেছে৷ এই অবস্থা বাড়িয়া চলিলে আগামীদিনে তো ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখেই ঠেলিয়া দিতে পারে ত্রিপুরাকে৷ সুতরাং যেকোনও মুহুর্তে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার গর্বকে ফুটো করিয়া দিতে পারে, এই আশংকা কি উড়াইয়া দেওয়া যায়?
রাজ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়াই চলিতেছে৷ ইংরেজী নববর্ষ শুরুর মুহুর্তে তো একের পর এক অপরাধের ঘটনা বাড়িয়াই চলিতেছে৷ ২রা জানুয়ারী একই দিনে বিভিন্ন স্থানে অপরাধের ঘটনা ঘাটিয়াছে৷ যাহা সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ণ আনিয়া দিয়াছে৷ ৩ঠা জানুয়ারী জাগরণ এর প্রথম পাতায় প্রকাশিত সংবাদ শিরোনামই বলিয়া দিতেছে রাজ্যের পরিস্থিতি কী ভয়ানক৷ প্রকাশিত সংবাদ শিরোনাম ‘বিলোনীয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম, জিরানীয়ায় জোড়া লাশ উদ্ধার, জয়পুর সীমান্তে মিলল রক্তমাখা গাড়ী৷’ এই সংবাদ শিরোনামই বুঝাইয়া দিতেছে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার গর্ব কী নির্মমভাবে তছনছ করিয়া দিতেছে৷ রাজ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষ এখন তেমন না থাকিলেও সাধারণ অপরাধের ঘটনা তো বৃদ্ধি পাইয়া চলিয়াছে৷ একথা পরিসংখ্যানই বলিয়া দিতেছে৷ এই অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধির পিছনে যেসব ঘটনা দায়ী তাহার মধ্যে অন্যতম হইতেছে পুলিশী ব্যর্থতা৷ অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ কার্য্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারে৷ পুলিশী গাফিলতির কারণে অপরাধীরা ছাড়া পাইয়া যাইতেছে৷ ক্ষমতাসীন দলের আস্কারা ইন্ধন এক্ষেত্রে, অপরাধ বৃদ্ধির সহায়ক, তাহা নিয়া বিতর্ক রহিয়াছে৷ এই দায় ক্ষমতাসীন দল ও সরকার কতখানি এড়াইয়া যাইতে পারিবেন বলা মুশকিল৷ শান্তির ত্রিপুরার কৃতিত্ব রাজ্যের বাম সরকার কতদিন ধরিয়া রাখিতে পারিবেন এই মুহুর্তে বলা মুশকিল৷
ত্রিপুরায় শক্তিশালী বিরোধী দল আছে এমন দাবী করা মুশকীল৷ কংগ্রেস তো মরণের পথেই৷ কারণ রাজ্যের মানুষের কাছে এই বার্তা রটিয়াছে যে, কংগ্রেস-সিপিএম ভাই ভাই৷ পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস তো তৃণমূলকে হঠাইতে সিপিএমের সঙ্গে জোট করিতে সোনিয়াকে প্রস্তাব দিয়াছেন৷ এই ঘটনার পর সিপিএম বিরোধী কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা কি বিদ্রোহী হইবেন না? এই রাজনৈতিক অশান্তি আগামীদিনে নতুন করিয়া আইন শৃঙ্খলার সংকট ডাকিয়া আনিবে না? আজ রাজ্যে শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কারণে একদলীয় আধিপত্যই কায়েম হইয়া আছে৷ উপজাতি মহল্লায় পৃথক রাজ্যের দাবীদাররা তো ইতিমধ্যেই জোর তৎপরতা চালাইয়াছে৷ এই যখন অবস্থা তখন রাজ্যের সাধারণ আইন শৃঙ্খলার অবনতির ঘটনা আগামীদিনে আরও বেশী বিপদ ডাকিয়া আনিতে পারে৷ অতীতের অভিজ্ঞতা কিন্তু সেইকথাই শিক্ষা দেয়৷ ধরিয়াই নিতে হইবে সামনে ভয়ংকর দিন অপেক্ষা করিতেছে৷ সম্প্রতি, রাজ্যে একের পর এক রক্তাক্ত ঘটনা বৃদ্ধিতে রাজ্যবাসীর উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়িয়াই চলিতেছে৷