নিজস্ব প্রতিনিধি, উদয়পুর, ১১ জুন৷৷ কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংঘর্ষের ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে ত্রিপুরা৷ মৃয়মান কংগ্রেস এখন তৃণমূলের আগ্রাসী নীতির শিকার হতে চলেছে৷ কংগ্রেস ভবন দখল করে তৃণমূল ভবন করার প্রয়াস শুরু হয়েছে৷ তারই উদ্যোগ লক্ষ্য করা গিয়েছে উদয়পুরে৷
ছয় বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সাথে সাথেই রাজ্যের বিভিন্ন ব্লক কংগ্রেস ভবন দখল নেওয়ার জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেছে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা৷ রাজধানী আগরতলা শহরে ইন্দিরা ভবনকে দখল করে তৃণমূল ভবন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল৷ এখন উদয়পুরের কংগ্রেস ভবনগুলি দখল নেওয়ার জন্য তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা ময়দানে নেমে পড়েছেন৷ কংগ্রেস ভবন দখল করার ঘটনাকে ঘিরে শনিবার সাত সকালে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে গোমতী জেলার উদয়পুরে৷ রমেশ চৌমুহনীস্থিত কংগ্রেস ভবন দখল নেওয়ার জন্য গত ক’দিন ধরেই তৃণমূল নেতৃত্বরা উঠেপড়ে লেগে গিয়েছিল৷ এদিন সকালে বেশ কিছু সংখ্যক তৃণমূল কর্মী সমর্থক রমেশ চৌমুহনী কংগ্রেস ভবন দখল নেওয়ার জন্য তৎপর হতেই স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন৷ তাতে দুই দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে৷ আহত হয়েছেন তিনজন কংগ্রেস কর্মী৷ পরিস্থিতি অগ্ণিগর্ভ হয়ে উঠে৷ সামাল দেওয়ার জন্য নামানো হয় প্রচুর সংখ্যায় পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী৷ থানায় পাল্টা মামলা করা হয়েছে উভয় দলের তরফে৷
সংবাদে প্রকাশ, উদয়পুরের বিধায়ক প্রণজিৎ সিংহ রায় কংগ্রেসের বিদ্রোহী বিধায়কদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন৷ তিনি সম্প্রতি দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগদান করেন৷ প্রণজিৎবাবু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় উদয়পুরের কংগ্রেস ভবনগুলি দখল নিয়ে তৃণমূল ভবন করাক তৎপরতা৷ সেই পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য শনিবার সকালে প্রচুর সংখ্যায় প্রণজিৎ অনুগামী তথা তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা রমেশ চৌমুহনীস্থিত কংগ্রেস ভবনের সামনে হাজির হয় সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ৷ এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা হাজির হন বাধা দেওয়ার জন্য৷ ভবন দখল নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় বাক বিতন্ডা৷ একসময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে৷ তৃণমূলের কর্মীরা কংগ্রেস কর্মীদের উপর হামলা চালায়৷ তাতে রক্তাক্ত হয়েছেন কংগ্রেস কর্মী মিলন কর, সৌমিত্র বিশ্বাস এবং পরিমল দেবনাথ৷
হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন আর কে পুর থানার ওসি দিব্যেন্দু রায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ তিনি গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু, তাতে কোন সুফল মিলেনি৷ তারপর ঘটনাস্থলে পৌঁছেন এসডিপিও, এসডিএম সহ প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারীকরা৷ আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে৷ সাত সকালে এই হামলা ও বিক্ষোভের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা উদয়পুর শহরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ মহকুমা পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি বিবেচনা করে উদয়পুরের প্রতিটি কংগ্রেস ভবনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে৷ শহরের জামজুরি, গকুলপুর, চন্দ্রপুর, উদয়পুর এবং রমেশ চৌমুহনীস্থিত কংগ্রেস ভবানে বিশাল সংখ্যায় টিএসআর বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ এদিকে, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা রমেশ চৌমুহনীস্থিত কংগ্রেস ভবনটি দখল নিতে পারেনি৷ পরে মহকুমা প্রশাসন তৃণমূল এবং কংগ্রেসের কর্মীদের নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে৷ এই আলোচনা সভায় মহকুমা প্রশাসনের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে যদি কংগ্রেস ভবন দখল নিতে হয় তাহলে আইনী পথে হাটতে হবে৷ বলপূর্বক দখল নেওয়া আইন বিরুদ্ধ৷ মহকুমা প্রশাসনের তরফ থেকে উভয় দলের নেতা কর্মীদের কাছে আহ্বান রাখা হয়েছে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য৷
এদিকে, কংগ্রেসের বিদ্রোহী বিধায়করা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের অন্যান্য ব্লক কংগ্রেসের কংগ্রেস ভবনগুলি দখল নেওয়ার জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বর্মন ব্রিগেডের কর্মী সমর্থকরা৷ ইতিমধ্যেই রাজধানী আগরতলা শহরের জ্যাকশন গেট সংলগ্ণ এলাকায় ইন্দিরা ভবনকে তৃণমূল ভবন করার জন্য তৎপরতা চালায় সুদীপ রায় বর্মন ও তাঁর অনুগামীরা৷ যদিও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এযাত্রায় সুদীপ বর্মনরা ব্যর্থ হয়েছেন ইন্দিরা ভবন দখল নিতে৷
2016-06-12
