‘দেশনায়ক’ বনাম ‘পরাক্রম’ অধিকার আদায়ের নিরন্তর লড়াইয়ে নবতম সংযোজন

অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ২০ জানুয়ারি (হি. স.) :  চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মবার্ষিকীকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালন করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্যের তরফে ইতিমধ্যেই দিনটিকে ‘দেশনায়ক’ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়েছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে রাজি নয় তৃণমূল কংগ্রেস ও বামেরা। ‘দেশনায়ক’ বনাম ‘পরাক্রম’ নিয়ে চর্চা তাই হয়ে উঠল কেন্দ্র-রাজ্যের অধিকার আদায়ের নিরন্তর লড়াইয়ের তালিকায় নবতম সংযোজন। 

চলতি বছর থেকে নেতাজির জন্মদিন এবার ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালিত হবে বলে গতকালই জানিয়েছে কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রক। আর তাতেই বিরোধিতা করেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ রাজ্যের তরফে ইতিমধ্যেই দিনটিকে ‘দেশনায়ক’ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এই বিষয়ে মূলত রাজনীতির রঙ দেখছেন বিশেষজ্ঞমহলের একাংশ।

বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য মোহিত রায় ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে জানিয়েছেন, “পরাক্রম কথাটির অর্থ শক্তি, বল (হরিচরণ বন্দ্যোঃ)। ১৯৩৩ সালেই ভিয়েনা থেকে বিটলভাই প্যাটেলের সঙ্গে একটি যুক্ত ঘোষণায় সুভাষচন্দ্র জানিয়েছিলেন গান্ধীর নেতৃত্ব ব্যর্থ। তিনি বলেছিলে কংগ্রেস দলের প্রয়োজন আরও বিপ্লবী সংগ্রাম। শক্তির জোরে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে সুভাষচন্দ্র এক অসমসাহসিক প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। নেতাজীর সঙ্গে তাই পরাক্রম শব্দটিই সহবস্থান করে। যাঁরা এখনও গান্ধীর তথকথিত অহিংসার জয়গান করে দেশের টুকরে টুকরে গ্যাঙ্গের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলেছে সেই বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল – তাদের কাছে নেতাজীর পরাক্রম প্রকাশ বিপজ্জনক। তাই এদের বিরোধিতা নেতাজীর অপমান।“

দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় জানিয়েছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মানছি না। এই দিনটিকে দেশপ্রাণ বা দেশপ্রেমিক দিবস হিসেবে পালন করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে এই দিনটিকে মান্যতা দিতে হবে। কেন্দ্র এই দুটি কাজের কিছুই করেনি। পরাক্রম দিবস ঠিক আছে, কিন্তু দেশপ্রেমিক দিবস ঘোষণা না করলে রাজ্য রাজ্যের মতই কাজ করবে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মানছি না। 

অন্যদিকে, বরিষ্ঠ শিক্ষাবিদ তথা প্রাক্তন উপাচার্য  অচিন্ত্য বিশ্বাস এই প্রতিবেদককে জানান, “নেতাজী সুভাষচন্দ্রের ১২৫ তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য কেন্দ্র সরকার ‘পরাক্রম-দিবস’ ঘোষণা করায় পশ্চিমবঙ্গের কিছু রাজনীতিবিদ ও দল অবান্তর  বিতর্ক শুরু করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বহুদিন ধরেই দিনটি ‘দেশনায়ক দিবস’ বলার দাবি করে আসছেন। সুতরাং হইচই শুরু হয়েছে। নিতান্ত  অনভিপ্রেত বিতর্ক।  আমার মতে ‘পরাক্রম দিবস’ যথেষ্ট অর্থ বহন করছে। ‘দেশনায়ক’ শব্দের চেয়ে ‘পরাক্রম’ নেতাজীর বীরত্ব পরিকল্পিত যুদ্ধোদ্যমকে অনেক স্পষ্ট করে। নেতাজী সর্বভারতীয় নেতা। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর সময়েই বিতর্ক তুলে আমরা তাঁকে প্রদেশে সীমাবদ্ধ করে ফেলছি বলেই মনে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *