নিজস্ব প্রতিনিধি, উদয়পুর/ আগরতলা, ২৯ এপ্রিল৷৷ আবারও করোনা আতঙ্কের ছায়া দেখা দিয়েছে রাজ্যে৷ চেন্নাই থেকে এম্বুলেন্সে দুই পরিবার রাজ্যে ফিরেছেন৷ ওই এম্বুলেন্সের চালক করোনা আক্রান্ত হিসেবে রিপোর্ট এসেছে৷ তাতে উদয়পুর ও বাইখোরা নিবাসী দুই পরিবারকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে৷ তাদের প্রতিবেশীদেরও নজরদারীতে রাখা হয়েছে৷ বহিঃরাজ্য থেকে রাজ্যে ফিরে করোনার সংকেত চিন্তা বাড়াল তা স্বীকার করেছেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ তিনি আজ সাংবাদিকদের বলেন, রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সমস্ত ঘটনা বহিঃরাজ্য থেকে প্রবেশের কারণেই ঘটেছে৷
এই বিষয়ে গোমতী জেলা শাসক টি কে দেবনাথ বলেন, গত সোমবার চেন্নাই থেকে এম্বুলেন্সে রাজ্যের দুই পরিবার ফিরেছেন৷ ওইদিন অনেক রাতে তারা উদয়পুরে পৌঁছেছিলেন৷ তাই, ওইদিন উদয়পুর এবং বাইখোরার দুই পরিবারকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল৷ সাথে এম্বুলেন্সের দুই চালকদেরও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল৷ তিনি জানান, তাদের করোনা আক্রান্তের কোনও লক্ষণ না হওয়ায় গতকাল নমুনা সংগ্রহের পর পঞ্চায়েতরাজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়িতে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়৷ গোমতী জেলা শাসক বলেন, এম্বুলেন্স চালকদের ২৮ এপ্রিলের মধ্যেই ত্রিপুরা ছাড়তে হবে এমন শর্তের কারণে তারা তামিলনাড়ুর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন গতকালই৷ আজ তাদের রিপোর্ট এসেছে৷ তাতে এম্বুলেন্সের একজন চালক করোনা পজেটিভ হিসেবে পাওয়া গিয়েছে৷ বাকিদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে৷
গোমতী জেলা শাসক বলেন, টিএন-০৭-এবি-৭২২১ নম্বরের এম্বুলেন্সটি আজ পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি জেলার শিলিগুড়ি থেকে আশি কিমি দূরে বীরপাড়া এলাকায় আটকানো হয়েছে৷ এম্বুলেন্সের দুইজন চালককেই সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে৷ আজ গোমতী জেলা শাসক জানিয়েছেন, উদয়পুর নিবাসী ওই পরিবারকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে৷ উদয়পুরের অমরসাগর দক্ষিণ পাড়স্থিত পুলিশ সুপারের সরকারী আবাসনের বিপরীতে অবস্থিত ওই পরিবারের এক প্রতিবেশীর বাড়িকেও কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ওই পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণে থাকা ব্যক্তির বাড়িটিও কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, আগামীকাল জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারীক ওই এলাকা পরিদর্শনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন৷ তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার পরামর্শ দেবেন৷ সেই মোতাবেক বিজ্ঞপ্তি জারী করা হবে৷ সেক্ষেত্রে আরও কোনও বাড়ি কোয়ারেন্টাইন করা প্রয়োজন কিনা তা আগামীকাল স্থির হবে৷
এদিকে, বাইখোরা নিবাসী চেন্নাই থেকে ফেরা ওই পরিবারকেও বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে৷ আগামীকাল ওই পরিবারের আশেপাশে আরও বাড়ি কোয়ারেন্টাইন করা প্রয়োজন আছে কিনা সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
এদিন সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, ত্রিপুরা এখনও বিপদমুক্ত বলেই মনে করা হচ্ছে৷ কিন্তু, নিশ্চিন্তে থাকার সুযোগ নেই৷ তাঁর বক্তব্য, লক্ষণহীন অনেকেই দেশে করোনা আক্রান্ত হিসেবে চিহ্ণিত হয়েছে৷ ফলে, কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত ত্রিপুরা বিপদমুক্ত বলে মনে করা যাচ্ছে না৷ তাঁর কথায়, এই ঘটনা বহিঃরাজ্যে যারা আটকে রয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়েও প্রশ্ণ তুলেছে৷ কারণ, ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সমস্ত ঘটনাই বহিঃরাজ্য থেকে আসার ফলেই ঘটেছে৷
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে বহিঃরাজ্য থেকে যারা ত্রিপুরায় ফিরছেন তারা কতটা বিপদমুক্ত সেই প্রশ্ণ উঠা অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে হচ্ছে৷ কারণ, বহিঃরাজ্যে লকডাউনে দিশেহারা ত্রিপুরার নাগরিকদের বোঝার সুযোগ নেই যে গাড়িতে তারা ত্রিপুরায় ফিরবেন ওই গাড়ির চালক করোনা মুক্ত কিনা৷ ফলে, নিজ উদ্যোগে রাজ্যে ফেরাও অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার নতুন চিন্তাধারা করবে কিনা সেই প্রশ্ণও উঠেছে৷ কারণ, শিক্ষামন্ত্রী আজ জানিয়েছেন, সর্বদলীয় বৈঠকেও এই বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ণ উঠেছে৷