ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, আগরতলায় বলেছেন বাংলাদেশ তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ সেপ্ঢেম্বর৷৷ ভারত- বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যই তা সম্ভব হয়েছে৷ সোমবার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ-কথা বলেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড় হাসান মাহমুদ৷ তাঁর কথায়, যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে৷ তাই, ত্রিপুরার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নয়নে গভীরভাবে প্রয়াস নেবে বাংলাদেশ৷


রাজ্যে সীমান্তহাট স্থাপন, আগরতলা-আখাউড়া রেলপথে সংযোগ স্থাপন, জলপথে ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ স্থাপন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজ বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড় হাসান মাহমুদের সাথে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ ড় হাসান মাহমুদের নেতত্বে ৫ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল আজ মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হন৷ সাক্ষাৎকারকালে উভয়ের মধ্যে দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, বিশেষ করে যোগাযোগ, শিল্প, সংসৃকতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷


মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব মহাকরণে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড় হাসান মাহমুদ-সহ প্রতিনিধি দলটিকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানান এবং স্মারক তুলে দেন৷ আলোচনাকালে মুখ্যমন্ত্রী দেব রাজ্যের চা পাতা রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তঃশুল্ক কমানো, রবার রফতানির ক্ষেত্রে সবধরনের রবার উৎপাদন সামগ্রীকে সুযোগ প্রদান করা, মংলা এবং চিটাগাঙ বন্দরের এসওপি-র কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং মনুঘাট ও মুহুরিঘাট ল্যান্ডকাস্টম স্টেশনের জায়গা সংক্রান্ত বিষয়াদির সমাধান দ্রুত সম্পন্ন করার আবেদন জানান৷ বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড় হাসান মাহমুদ এই কাজগুলি যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সেই বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁদের দেশের সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীদের গোচরে নিয়ে যাবেন বলে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন৷ আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আগত পণ্যবাহী ট্রাকগুলি যাতে ডেস্টিনেশন টু ডেস্টিনেশন লোডিং আনলোডিং করতে পারে সে-বিষয়েও আলোকপাত করেন৷ এতে দু’দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷ নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ার যে পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার তা-ও বৈঠকে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব৷


আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড় হাসান মাহমুদ জানান, ত্রিপুরা সফরে আসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আগরতলায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করা৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমানে দু’দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতা পেয়েছে৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা পাওয়ার ক্ষেত্রে ত্রিপুরারও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে৷ তথ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কার্যসূচি গ্রহণ করেছে৷ এই দিবস পালনে ত্রিপুরা সরকার থেকেও যেন কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তার জন্য অনুরোধ করেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী৷ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে আগরতলায় শহিদমিনার গড়ে তোলার জন্য ত্রিপুরা সরকার প্রয়োজনীয় জায়গা দিলে বাংলাদেশ সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করবে বলেও বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড় হাসান মাহমুদ জানান৷ এছাড়া ত্রিপুরায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করার জন্য অনুরোধ জানান৷


বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ত্রিপুরা এবং ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নয়নে বাংলাদেশ যথেষ্ট আন্তরিক৷ তাই, যোগাযোগের পরিধি আরও বাড়ানোর প্রশ্ণে আজ আলোচনা হয়েছে৷ তাঁর কথায়, চট্টগ্রাম এবং মংলাবন্দর ব্যবহারে ত্রিপুরাকে স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করে দেওয়া প্রয়োজন৷ সে-ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সরকারের প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷


তাঁর দাবি, ২০২০-এর ডিসেম্বর নাগাদ ত্রিপুরার সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়ে যাবে বাংলাদেশের৷ ফলে, যোগাযোগ ক্ষেত্র তখন আরও বিস্তার লাভ করবে৷ এদিকে, সীমান্তহাট নিয়েও তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পণ্য বাংলাদেশে রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাস করার দাবি জানিয়েছেন৷ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে চর্চা করবেন এবং সুরাহা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি৷


এদিকে, সীমান্ত দিয়ে নেশা সামগ্রী পাচার নিয়ে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, নেশা সমাজের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর৷ তাই, নেশা সামগ্রী পাচার বন্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে৷