নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ জুন৷৷ রাজ্যে ফের উগ্রপন্থী সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে৷ তাতে শান্তির পরিবেশ নষ্ট

হবে৷ কারণ, এনএলএফটি এবং আইপিএফটি’র মধ্যে গোপন বৈঠক হয়েছে৷ বৈঠকে স্থির হয়েছে, আগামী নির্বাচনে এনএলএফটি আইপিএফটিকে সহযোগিতা করবে৷ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে এই সমস্ত তথ্য তুলে ধরেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর৷ তাঁর মতে, এধরনের সিদ্ধান্ত রাজ্যের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার সমান৷ পাশাপাশি তিনি এও দাবি করেন, বিজেপি’র সাথে আলোচনা করেই পৃথক রাজ্যের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধের ডাক দিয়েছে আইপিএফটি৷ তাই তাঁর দাবি, বিজেপি সহ সমস্ত বাম বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি পৃথক রাজ্য এবং জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করুক৷
এদিকে, রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৯৮৮ সালে প্রাক নির্বাচনী পরিস্থিতি এবং সদ্য সমাপ্ত মণিপুর নির্বাচন সিপিএমকে ভীষণভাবে চিন্তায় ফেলেছে৷ কারণ, সিপিএমের ধারণা ১৯৮৮ সালে রাজ্যে যে কায়দায় সরকার বদল করা হয়েছিল, তার পুণরাবৃত্তি ঘটতে পারে৷ বিজনবাবুর বক্তব্য, মণিপুরে জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে যে অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টি করা হয়েছিল, তেমনই পরিস্থিতি রাজ্যেও কায়েম হতে চলেছে৷ কারণ, রাজ্যে আইপিএফটি পৃথক রাজ্যের দাবিতে আগামী ১০ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধের ডাক দিয়েছে৷ এই সমস্ত কারণে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদককে যথেষ্ট চিন্তিত বলেই মনে হয়েছে৷
বিজনবাবু বলেন, আইপিএফটি’র এন সি দেববর্মা গোষ্ঠী আগামী ১০ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধের ডাক দিয়েছে৷ তাঁর মতে, আলাদা রাজ্যের দাবিতে এই পদক্ষেপের পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে৷ কারণ, এরাজ্যে সমস্ত কিছুর যোগান বাইরে থেকে হয়৷ অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে৷ তিনি মনে করেন, এই পদক্ষেপ জাতি ও উপজাতির ঐক্যকে ভাঙবার একটি প্রয়াস৷
তিনি এও মনে করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আন্দোলন খেলা পুরনো কৌশল, আর তা বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মদতেই হচ্ছে৷ এবিষয়ে তাঁর যুক্তি, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে আইপিএফটি’র এন সি দেববর্মা গোষ্ঠি সেখান থেকেই অবরোধ আন্দোলনের ঘোষণা দেন৷ বিজনবাবুর কটাক্ষ, এর থেকেই মনে হচ্ছে, কেন্দ্রের সাথে শলা পরামর্শ করেই রাজনৈতিক কর্মকান্ড বাস্তব রূপ দেওয়া হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী টিএনভি’র সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করে বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতার বদল ঘটিয়েছিলেন৷ এখন তারই পুণরাবৃত্তি ঘটানোর প্রচেষ্টা বলে মনে করেন বিজনবাবু৷
তিনি আরও বলেন, মণিপুর নির্বাচনের আগে জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল বিজেপি’র মদতেই৷ কারণ, সেখানে বিজেপি সরকার গঠনের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই জাতীয় সড়ক অবরোধ প্রত্যাহৃত হয়৷
রাজ্যে উগ্রপন্থী সমস্যা ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কা প্রকাশ করে এদিন তিনি বলেন, এনএলএফটি’র একটা অংশ এখনও বাংলাদেশের ঘাঁটিতে লুকিয়ে রয়েছে৷ তাদের নেতৃত্ব বদল হয়েছে৷ সুবির দেববর্মা এখন এনএলএফটি সুপ্রিমো৷ সম্প্রতি এনএলএফটি’র সাথে আইপিএফটি’র বৈঠক হয়েছে৷ তাতে স্থির হয়েছে, নির্বাচনে আইপিএফটিকে সহযোগিতা করবে এনএলএফটি৷ এদিকে, আইপিএফটি এবং বিজেপি’র মধ্যে আলোচনায় জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দাবি করেন বিজনবাবু৷ তাঁর দাবি, বামফ্রন্ট সরকারকে হঠাতে ত্রিপুরার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ তাই তিনি বিজেপি সহ সমস্ত বাম বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আইপিএফটি’র জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন৷
এদিন সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ বলেন, গত ১ মে গুয়াহাটিতে এনএলএফটি’র সাথে আইপিএফটি’র বৈঠক হয়েছে৷ ঐ বৈঠকে বিজয় রাঙ্খলও ছিলেন৷ তিনি বলেন, জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে হয়েছে মনে করার কোন কারণ নেই৷
রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে প্রশাসনকেও সতর্ক করেছেন বিজন ধর৷ ফের উগ্রপন্থা সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি৷ যাতে রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষুন্ন হতে না পারে৷

