নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ মার্চ৷৷ বিএসএফ’র গুলিতে সাব্রুমের হার্বাতলি এডিসি ভিলেজে চিত্তাবাড়িতে তিন তিনজন
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2017/03/Sabroom-Incident-300x169.jpg)
নিহত এবং দুইজন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন৷ এই ঘটনায় সাব্রুম মহকুমা জুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে৷ বিএসএফ’র দাবি গরু পাচারকারী সন্দেহে গুলি চালানো হয়েছিল৷ তাতে, প্রাণহানি এবং আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ সাব্রুম পুলিশ জানিয়েছে, গরু চড়ানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনায় বিএসএফ’র গুলি চালানোতে এই ঘটনা ঘটেছে৷ তবে, সিপিএম’র দাবি যুবতী গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টাকে ঘিরে গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ জানালেন বিএসএফ জওয়ানরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়৷ তাতে, তিনজন নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছেন৷ এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার ১২ ঘন্টার সাব্রুম মহকুমা বন্ধের ডাক দিয়েছে সিপিএম৷ এদিনের এই ঘটনাকে ঘিরে বিভিন্ন মহলের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় প্রকৃত ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে৷
শুক্রবার বিকেল আনুমানিক চারটে নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটেছে৷ সাব্রুমে ভাঙ্গামুড়া বিওপির বিএসএফ জওয়ানরাই গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ৷ গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে যেখানে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে বিএসএফ’র দাবি গরু পাচারের ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়৷ যদিও স্থানীয়দের দাবি, গ্রামবাসীরা জুম চাষ করে ফেরার পথে বিএসএফ জওয়ানরা তাদের কয়েকজনকে গরুপাচারকারী সন্দেহে আটক করে হেনস্থা করেছে৷ গ্রামবাসীরা হেনস্থার প্রতিবাদ জানালে বিএসএফ গুলি চালায় বলে অভিযোগ৷ বিএসএফ’র দাবি, স্থানীয় জনগণ ভাঙ্গামুড়া বিওপি ঘেরাও করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ তাদের বার বার বিওপি ঘেরাও মুক্ত করার অনুরোধ জানানো হলেও তারা সে আবেদন শুনেননি৷ তখন বিএসএফ জওয়ানরা প্রথমে শূন্যে গুলি চালায়৷ তাতে গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হয়ে বিএসএফ জওয়ানদের দিকে এগিয়ে আসলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়৷ তাতে সুরলক্ষ্মী ত্রিপুরা(৩০), মিন কুমার ত্রিপুরা(৩৫) ও পদ্মকুমার ত্রিপুরা(৪২) গুলিবিদ্ধ হন৷ এছাড়া জীবন ত্রিপুরা(২২) ও শ্যামকুমার ত্রিপুরা(৩০) গুরুতর আহত হন৷ তাদের সাব্রুম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা সুরলক্ষ্মী ত্রিপুরা, মিনকুমার ত্রিপুরা ও পদ্মকুমার ত্রিপুরাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ বাকি দুজনের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে৷
এই ঘটনার বিষয়ে সাব্রুম থানার পুলিশ জানিয়েছে, চিত্তাবাড়িতে গরু চড়ানোকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী ও বিএসএফ’র মধ্যে বচসার জেরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়৷ তাতে, বিএসএফ জওয়ানরা গুলি চালালে তিনজন নিহত হন এবং দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন৷
কিন্তু সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হার্বাতলী এডিসি ভিলেজের চিত্তাবাড়িতে আজ সকাল থেকে গ্রামবাসী মিন কুমার ত্রিপুরা নিজের রাবার বাগানে পাঁচ-ছয় জন সহ কাজ করছিলেন৷ বাগানটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কাঁটাতারের বেড়া থেকে প্রায় সাড়ে সাতশ মিটার ভেতরে৷ মিন কুমার ত্রিপুরা বাগানে যাদের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন তাদের মধ্যে সুরলক্ষ্মী ত্রিপুরা(৩০) নামে এক গৃহবধূও ছিলেন৷ বিকেল সোয়া তিনটে নাগাদ সুরলক্ষ্মী সঙ্গীদের জানান ঘরে তার শিশু সন্তান রয়েছে, তাই তাকে একটু আগে বাড়ি ফিরতে হবে এবং তিনি একাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন৷ কয়েক মিনিট পর মিন কুমার ত্রিপুরা সহ বাগানে কর্মরত অন্যান্যরা সুরলক্ষ্মীর আর্ত চিৎকার শুনতে পান৷ তারা ছুটে এসে দেখেন তিনজন বিএসএফ জওয়ান সুরলক্ষ্মী ত্রিপুরাকে ঝাপটে ধরে ধস্তাধস্তি করছে৷ গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করলে বিএসএফ জওয়ানরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়৷ গুলিতে সুরলক্ষ্মী ত্রিপুরা, মিনকুমার ত্রিপুরা এবং পদ্মকুমার ত্রিপুরা ঘটনাস্থলেই নিহত হন৷ শ্যামচন্দ্র ত্রিপুরা এবং জীবন ত্রিপুরা নামে অন্য দুজন গ্রামবাসী গুলিতে আহত হন৷ বিএসএফ জওয়ানরা বর্বরোচিত হত্যাকান্ড সংগঠিত করে দেহগুলো ফেলে রেখে পালিয়ে যান৷ এলাকাবাসীর মারফত খবর পেয়ে সাব্রুম শহর থেকে সিপিএম নেতারা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যান৷ তারা মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে সাব্রুম হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসেন এবং আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করে দেন৷
আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা নিজেদের জঘন্য অপরাধের তথ্য প্রমাণের লোপাটের চেষ্টায় যে নৃশংস হত্যাকান্ড সংগঠিত করেছে এধরনের সীমাহীন বর্বরতা নজির বিহীন৷ সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী দ্রুততার সাথে হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি করছে এবং ঘটনার উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করতে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে৷
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় ঘটনাটি সংগঠিত হওয়ায় অনেক দেরিতে পুলিশের কাছে খবর এসেছে৷ ধর্ষণের চেষ্টার প্রতিবাদে ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয় বলে সূত্রটির দাবি৷ ফলে, এই ঘটনাকে ঘিরে প্রকৃত কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই যাচ্ছে৷ জানা গেছে, সাব্রুম মহকুমার হার্বাতলী এডিসি ভিলেজের চিত্তাবাড়ি এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ তাই, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে৷