আগরতলা, ৪ জুলাই: জন্মগত শারীরিক অসঙ্গতি ও ক্রুটি নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জন্মগত শারীরিক অসঙ্গতি ও রোগ নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুরা যাতে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার মাধ্যমে নিজেদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন সেজন্য সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। আজ আগরতলা গভর্নমেন্ট নার্সিং কলেজের অডিটোরিয়ামে জন্মগত হৃদরোগ শনাক্তকরণ শিবিরের রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ত্রিপুরা শাখার উদ্যোগে ও অ্যাপোলো চিলড্রেনস হাসপাতালের সহযোগিতায় এই শনাক্তকরণ শিবিরের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জন্মগত শারীরিক অসংগতি, শারীরিক অভ্যন্তরীণ অপরিপূর্ণতা বিকাশগত ত্রুটি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের প্রাথমিক সনাক্তকরণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম চালু করা হয়।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম মোট ৪৮টি ডেডিকেটেড মোবাইল হেলথ টিম সারা রাজ্যে কাজ করছে। ডেডিকেটেড মোবাইল হেলথ টিমগুলি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শূন্য থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের স্ক্রিনিং করে। পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলিতে ৬ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদেরও স্ক্রিনিং করা হয়। রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রমে ত্রিপুরায় জন্মগত হৃদরোগ, শ্রবনজনিত প্রতিবন্ধকতা, বাঁকা পা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা, নিউরাল টিউব ডিফেক্ট-এর মত বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমের অন্তর্গত রাজ্যের গোমতী, ধলাই এবং ঊনকোটি জেলায় তিনটি ডিস্ট্রিক্ট আর্লি ইন্টারভেনশন সেন্টার রয়েছে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাতেও আর্লি ইন্টারভেনশন সেন্টার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে জন্মগত শ্রবণজনিত প্রতিবন্ধকতা রোগে আক্রান্ত শিশুদের ৮৩৫টি শ্রবণযন্ত্র বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৫২১ জন শিশুকে শনাক্ত করা হয়েছে। জন্মগত ত্রুটি, বিভিন্ন শারীরিক ঘাটতি, বিকাশজনিত ত্রুটি এবং শৈশবজনিত রোগ শনাক্তকরণে ৪ লক্ষ ৬ হাজার ১৬১ জন স্কুল পড়ুয়ার পরীক্ষা করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রাজ্যে এবং রাজ্যের বাইরের একাধিক হাসপাতালে প্রায় ৯১ জন জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করা হয়।
পাশাপাশি ১৪১টি ঠোঁট কাটা এবং তালুকাটা রোগের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ১০৫টি ক্লাব ফুটে আক্রান্ত রোগীর পা ঠিক করা হয়েছে। ৭৩টি শ্রবণযন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। ৪ জন নিউরাল টিউব ডিফেক্ট রোগে আক্রান্ত শিশুদের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ৬৭ জন অটিজম রোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করা হয়েছে। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত আরও ৩২ হাজার ৭৮৭ জন শিশুর চিকিৎসা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ব্রাহ্মিত কৌড়, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা প্রফেসর ডাঃ সঞ্জীব দেববর্মা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকারের অধিকর্তা প্রফেসর ডাঃ এইচ পি শর্মা, অ্যাপোলো চিলড্রেনস হাসপাতালের প্যাডিয়াট্রিক কার্ডিয়োলজিস্ট সি এস মুথুকুমারন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ত্রিপুরা শাখার মিশন ডিরেক্টর রাজীব দত্ত। অনুষ্ঠানে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন অ্যাপোলো হাসপাতালের সিইও ভি নবিন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রমের মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপক ৬ জন সুবিধাভোগী তাদের অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে একটি তথ্য চিত্রও প্রদর্শিত হয়।