BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় রেল বিপ্লব

BGপ্রতীক্ষার অবসান৷ অবশেষে ব্রডগেজ রেল ইঞ্জিন আগরতলাতেই নয় বিশালগড়ের মাটি স্পর্শ করিল প্রচন্ড গণ উচ্ছাসের মধ্য দিয়া৷ ত্রিপুরার রেলের ইতিহাসে এই দিনটি উল্লেখযোগ্য ভাবে চিহ্ণিত হইয়া থাকিবে৷ অবশ্য ব্রডগেজের ইঞ্জিন ইতিমধ্যেই আমবাসায় পা রাখিয়াছে৷ কয়েকদিন আগেই আমবাসা পর্য্যন্ত আসিয়াছিল ব্রডগেজ ইঞ্জিন৷ ত্রিপুরায় আগরতলা পর্য্যন্ত মিটারগেজ রেলের যাত্রা শুরুর সময়ও গণ উচ্ছাস, বাঁধ ভাঙ্গিয়াছিল৷ তখন ছিলনা কোন মন্ত্রীর উপস্থিতি৷ মিটারগেজ রেলের যাত্রাও শুরু হইয়াছিল গণ অভ্যর্থনার মধ্য দিয়া৷ কেন কেন্দ্র ও রাজ্যের মন্ত্রীদের দিয়া এই ঐতিহাসিক দিনের উদ্বোধন হইল না তখন তাহা অতটা বুঝা যায় নাই৷ আজ যখন রাজ্যে ব্রডগেজ রেল একেবারে বিশালগড় পর্য্যন্ত পৌঁছিয়া গিয়াছে তখন তাহার আনুষ্ঠানিক সূচনায় কেন্দ্রের রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অংশ নিবার ঘটনাও ঐতিহাসিক সন্দেহ নাই৷ রেলের জয়যাত্রার ইতিহাস ত্রিপুরায় নবযুগের সূচনা করিবে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷ ব্রডগেজ রেলের এই জয়যাত্রায় যোগাযোগ ক্ষেত্রে ত্রিপুরা এক নতুন যুগে উত্তির্ণ হইল৷ বন্ধ্যা যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ত্রিপুরায় কাঙ্খিত উন্নয়ন হয় নাই৷ রাজ্যে শিল্প ও অন্যান্য বৃহদায়তন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়িয়া উঠে নাই৷ ফলে, রাজ্যে কর্মসংস্থানের পথ উন্মুক্ত না হওয়ায় বেকার সমস্যা বাড়িয়াছে৷ এখানে পরিস্থিতি এমনই যে, বেকাররা সরকারী চাকুরীর আশায় প্রহর গুনে৷ সরকারী চাকুরী পাওয়া যেন আসমানের চাঁদ পাওয়া৷ ব্রডগেজ রেল চালুর কল্যাণে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের সুযোগ বাড়িবে সন্দেহ নাই৷ আর এই সুযোগ বৃদ্ধির ফলে ত্রিপুরায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হইবে, রাজ্যের মানুষ নিশ্চয়ই আশায় বুক বাঁধিতে পারে৷ শুধু আশায় আশায় দিন কাটাইলে চলিবে না, ত্রিপুরাকে ঘুরিয়া দাঁড়াইতে হইবে৷ আমাদের প্রতিবেশী দেশ সাহায্যের জন্য হাত বাড়াইয়া আছে৷ দীর্ঘদিন ত্রিপুরা তো প্রতিবেশী দেশের ন্যুনতম সুযোগ সুবিধাও পায় নাই৷ বরং দেখা গিয়াছে, পাকিস্তানের সেই সামরিক শাসকরা বিভিন্ন দিক দিয়া ত্রিপুরার সমস্যা জিয়াইয়া রাখিয়াছে৷ ত্রিপুরার উগ্রপন্থীদের জামাই আদরে লালন করা, পাক ভুখন্ডকে অস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারের সুযোগ প্রতিনিয়ত দিয়াছে পাক সরকার৷ ১৯৭১ সালে পাক হানাদারদের হঠাইয়া বাংলাদেশে নতুন সূর্য্যোদয়ের বিচ্ছুরণে ত্রিপুরা আরও বেশী আলোকিত হয়৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ আবারও ত্রিপুরার প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করিয়াছেন৷ বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর উন্মুক্ত হইয়া গেলেই ত্রিপুরার জয় যাত্রা নতুন মাত্রা পাইবে৷ এই প্রেক্ষাপটে ব্রডগেজ রেলের এই জয়যাত্রা ত্রিপুরার ভাগ্য উন্নয়নের দুয়ার খুলিয়া গেল৷
রাজনীতির সংকীর্ণতা মুক্ত হইয়া রেল মন্ত্রকের এই যে উদ্যম, প্রয়াস, প্রত্যন্ত রাজ্যকে আগাইয়া নেওয়ার সফল বাস্তবায়নই নতুন স্বর্ণোজ্জল ভবিষ্যতের সূচনা করে৷ রাজন্য শাসনের যুগ অতিক্রম করিয়া যে ত্রিপুরা ভারতভুক্ত হয়, সেই রাজন্য স্মৃতি বুকে নিয়াই ত্রিপুরায় রেল নতুন স্বপ্ণ দেখা শুরু করে৷ আগরতলা রেল স্টেশন বিল্ডিং নির্মিত হইয়াছে ত্রিপুরার রাজবাড়ীর আদলে৷ রাজন্য যুগে ত্রিপুরা ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আবস্থায়৷ পাহাড় জঙ্গলাকীর্ণ রাজার রাজ্যে সড়ক পথও গড়িয়া উঠে নাই৷ দারিদ্রের করাল ছায়ায় উপজাতিদের জীবন মান ছিল একেবারেই শোচনীয়৷ এই সেদিনও নেংটি পরা উপজাতিদের দেখা মিলিত৷ আজ সেই দারিদ্রের ভয়াবহ অবস্থা হইতে অনেকখানি উঠিয়া আসিয়াছে উপজাতি অংশের মানুষ৷ উপজাতিরা হয়তো শোষিত হইয়াছেন৷ কিন্তু, কপর্দকহীন এই আদিবাসীদের কতখানিই বা শোষণের সুযোগ ছিল৷ বাঙালী জনগোষ্ঠীকে যাহারা শিক্ষায় অগ্রণী তাহাদের ত্রিপুরায় ঠাঁই দিয়াছিলেন রাজারাই৷ রাজ্যকার্য্য, আদালত ইত্যাদি পরিচালনায় তো বাঙালীরাই সক্রিয়ভাবে ছিলেন৷ সেই ত্রিপুরা এখন জাগিয়াছে৷ যোগাযোগের ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপ্লব হইয়া গেল৷ ব্রডগেজ রেল ইঞ্জিনের পরীক্ষামূলক সূচনা উপলক্ষে আজ বুধবার আগরতলা রেল স্টেশনে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানও সেই বিপ্লবেরই সার্থক সংযোজন৷ সেই অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে রেলকে স্বাগত জানাইতে উপস্থিত থাকিবেন কেন্দ্রীয় রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী মনোজ সিনহা৷ ব্রডগেজ রেলের এই জয়যাত্রা ত্রিপুরার ভাগ্যাকাশে আশার দীপশিখা জ্বালাইয়া দিল৷ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী এপ্রিল মাস হইতে যাত্রী রেল যাত্রা শুরু করিবে৷ ইতিমধ্যে পণ্য পরিবহণ শুরু হইয়া ত্রিপুরার দীর্ঘদিনের এক জটিলতার অবসান হইবে৷ ত্রিপুরার মানুষ ব্রডগেজ রেলের পরীক্ষামূলক যাত্রাকে রাজ্যের মানুষ আবেগ উচ্ছাসে স্বাগত জানাইতেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *