আগুন নিয়া খেলা

congressআবার আরেকটি ফাঁদে পা দিয়া সর্বস্বান্তের পথে আরেক ধাপ আগাইয়া গেল কংগ্রেস৷ এই ক্ষয়িষ্ণু দলটি দিনে দিনেই আত্মহননের পথেই হাটিতেছে৷ একথা স্বীকার করিতে হইবে, উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত এই ত্রিপুরা রাজ্যটিতে অনাবিল শান্তি বিরাজ করিতেছে৷ ১৯৮০ সাল হইতে টানা দুই দশকেরও বেশী সময় ত্রিপুরায় রক্ত ঝরিয়াছে৷ উপজাতি উগ্রপন্থীরা একের পর এক গণহত্যা সংঘটিত করিয়াছে৷ হামলা, অপহরণ, চাঁদার জুলুম, মুক্তিপণ ইত্যাদির ঘটনায় ত্রিপুরা ছিল অশান্ত, অগ্ণিগর্ভ, নিরাপত্তাহীন রাজ্য৷ রাজ্যের গ্রাম পাহাড় ছিল বন্দুকধারীদের বিচরণভূমি৷ হাজার হাজার পরিবার গ্রাম পাহাড় হইতে পালাইয়া শরণার্থীর জীবন বাছিয়া নিতে বাধ্য হইয়াছিল৷ সোজা কথায়, গোটা রাজ্য পরিণত হইয়াছিল শ্মশানে৷ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ছিল ভুলুন্ঠিত৷ এই পরিস্থিতি কাটাইয়া উঠিয়া ত্রিপুরাবাসী সেই দুঃস্বপ্ণকে ভুলিতে পারে নাই৷ ভুলিতে পারে নাই সেই বন্দুকধারীদের, যাহারা স্বাধীন ত্রিপুরার স্বপ্ণে ছিল মাতোয়ারা, যাহারা অসহায় মানুষের রক্তে স্নান করিয়াছে, অর্থ, প্রাণ লুট করিয়াছে, শান্তির ত্রিপুরাকে লন্ডভন্ড করিয়াছে৷ ত্রিপুরা আবার ঘুরিয়া দাঁড়াইয়া তথাকথিত উগ্রপন্থীদের বিষ দাঁত ভাঙ্গিয়া দিয়াছে৷ জাতি উপজাতি উভয় অংশের মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধই ত্রিপুরা জঙ্গী মুক্ত হইয়াছে৷ কিন্তু, আবার অশান্তির আগুন জ্বালাইবার যে নগ্ণ প্রয়াস শুরু হইয়াছে তাহাকে শুরুতেই প্রতিহত করিতে না পারিলে ভয়ঙ্কর বিপদ হইতে ত্রিপুরাকে রক্ষা করা যাইবে না৷ সেই পথেই কি এরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যাপারীরা পা রাখিতেছেন?
শুক্রবার ত্রিপুরা বিধানসভায় সিপিএম বিধায়কের আনা বেসরকারী প্রস্তাবটি ছিল পৃথক রাজ্যের দাবীর বিরুদ্ধে৷ কংগ্রেস কৌশলী বিরোধীতা করিতে গিয়া ফাঁদে আটকা পড়িয়া গেল৷ কংগ্রেসের বিধায়করা জানাইয়া দিল পৃথক রাজ্যের দাবী অসাংবিধানিক নহে৷ এই কথা তো সাধারণ মানুষের অজানা নয়৷ অনেক অসাংবিধানিক বিষয় না হওয়া সত্বেও জনস্বার্থ হানিকর হিসাবে বিচার করিবার নজীর আছে৷ কংগ্রেস পৃথক রাজ্যের দাবীর পক্ষেই, কার্য্যত সওয়াল করিয়া ফেলিয়াছে বিধানসভায়৷ এডিসি এলাকায় বঞ্চনা, অনুন্নয়নই পৃথক রাজ্যের দাবী উঠার পিছনে বড় কারণ বলিয়া, কংগ্রেস বিধায়কদের মন্তব্য ঘিরিয়া রাজ্য জুড়িয়া জোর প্রতিক্রিয়া হওয়ারই কথা৷ আসলে, উপজাতি এলাকায় কংগ্রেসের পা রাখিবার জায়গা নাই৷ আসন্ন এডিসি ভিলেজ কমিটির নির্বাচনের লক্ষ্যে, উপজাতি এলাকায় কিছুটা মাটি খঁুজিতেই, পৃথক রাজ্যের দাবীর প্রতি নরম মনোভাব দেখাইয়া বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বিরাগ ভাজন হইয়া কংগ্রেস আত্মহননের পথেই পা বাড়াইল৷ সে বিষয়ে বোধহয় সন্দেহ নাই৷ সিপিএমের পাতা ফাঁদে পা দিয়া এখন, গভীরতর অস্তিত্বের সংকটের মুখেই কংগ্রেসকে ঠেলিয়া দিলেন নেতা বিধায়করা৷ এই ভুলের মাশুল হাড়ে হাড়ে কংগ্রেসকে দিতে হইবে একথা জোরের সঙ্গেই বলা যাইতে পারে৷ পৃথক রাজ্যের দাবী সম্পর্কে কংগ্রেসের ভূমিকার কারণে, রাজ্যের মানুষকে বিশ্বাস ও নির্ভরতার জায়গা হিসাবে সিপিএম দলকেই বাছিয়া নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকিতেছে না৷
শুক্রবার বিধানসভার অধিবেশনে পৃথক রাজ্যের দাবী সম্পর্কে কংগ্রেসের অবস্থানকে লুফিয়া নিয়াছে পৃথক রাজ্যের দাবীদার উপজাতি ভিত্তিক দল আইপিএফটি৷ শনিবার রাতে তড়িঘরি সাংবাদিক সম্মেলন করিয়া কংগ্রেসের তারিফ করিয়াছে৷ জানাইয়াছে, পৃথক রাজ্যের দাবীর পক্ষে কংগ্রেসের অবস্থান ইতিবাচক৷ আইপিএফটির এই বার্তা দিকে দিকে ছড়াইয়া পড়িবার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে এই দলের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকিবে কিনা সন্দেহ৷ ইহাও সন্দেহ নাই যে, রাজ্যের জাতি উপজাতি উভয় সম্প্রদায়ের বৃহত্তর অংশের মানুষ এই পৃথক রাজ্যের দাবীকে সমর্থন করিতে পারে না৷ এই দাবী কোনও দিন পূরণ হওয়ার মতো সুযোগই তো নাই৷ আইপিএফটি নেতারাও তাহা ভাল করিয়া জানেন৷ প্রায় এগার হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি রাজ্য, যে রাজ্যের বৃহত্তর অংশই এডিসি এলাকায়, সেখানে পৃথক রাজ্যের দাবী মানিবার ন্যুনতম সুযোগও তো নাই৷
উপজাতি ভিত্তিক অনেক দলের জন্ম হইয়াছে, আবার অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলিয়াও পড়িয়াছে৷ কিন্তু আইপিএফটি পৃথক রাজ্যের দাবী তুলিয়া নতুন প্রজন্মের যুবকদের টানিতে পরিয়াছে, তাহাও সত্য৷ কিন্তু, এই প্রজন্ম রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে কতখানি ওয়াকিবহাল? এরাজ্যের উপজাতিদের দুঃখে বুক ভাসাইয়া তো কম রাজনীতি হয় নাই৷ অদৃশ্য শক্তির মদতে এডিসিতে যাহারা এক সময় ক্ষমতায় বসিয়াছিল সেই উপজাতি ভিত্তিক দলের কান্ডকীর্তি, এডিসির সেই সব ঘটনা রাজ্যবাসী ভুলিয়া গিয়াছেন ভাবিলে ভুল করা হইবে৷ পৃথক রাজ্যের দাবী যে ত্রিপুরায় অশান্তিকে আমন্ত্রণ করিতে পারে সে সম্পর্কে রাজ্যবাসীর উদ্বেগ, উৎকন্ঠা কি অস্বীকার করা যাইবে৷ সেই ১৯৮০ সালে স্বাধীন ত্রিপুরার দাবীদাররা যেভাবে জাতি উপজাতির মধ্যে অবিশ্বাসের বিষ ছড়াইয়াছিল পৃথক রাজ্যের দাবী এই পথকেই উন্মুক্ত করিয়া দিতেছে৷ উপজাতি উন্নয়নে একের পর এক দাবী মানা হইয়াছে৷ এডিসিতে সপ্তম তপশিল হইতে ষষ্ঠ তপশিল চালু হইয়াছে৷ এডিসিকে আরও বেশী ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে সর্বদলীয় আন্দোলন করা যাইতে পারে৷ সেই পথে না গিয়া সেই বিচ্ছিন্নতার পথকে ডাকিয়া আনা৷ পৃথক রাজ্যের দাবী অসাংবিধানিক নহে কিন্তু এই দাবী বিচ্ছিন্নতাকে ইন্ধন যুগায়৷ রাজ্যের শান্তি সম্প্রীতির পক্ষে বিপজ্জনক৷ আগামী দিনে ত্রিপুরার স্বর্ণসম্ভাবনার দ্বার যখন উন্মুক্ত হইতে যাইতেছে তখন পৃথক রাজ্যের দাবী নিয়া রাজনীতির খেসারত ভয়ানকভাবে দিতে হইবে৷ সে বিষয়ে সন্দেহ থকিতে পারে না৷ এই দাবীর পক্ষে প্রকারান্তরে অবস্থান নিয়া এ রাজ্যে কংগ্রেসের শ্মশান যাত্রার পথকেই উন্মুক্ত করিয়া দিল, বলা যাইতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *