নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ জানুয়ারী৷৷ সমস্ত জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটল৷ শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের চাপের মুখে সিপিএমের বহিসৃকত নেতা তথ্য পদত্যাগী বিধায়ক মনোরঞ্জন আচার্য্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত মনোরঞ্জন আচার্য্যের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের চবিবশ ঘন্টার মধ্যেই মনোরঞ্জন আচার্য্যকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ শনিবার বীরগঞ্জ থানার পুলিশ মনোরঞ্জন আচার্য্যকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে অমরপুর এসডিজেএম কোর্টে সোপর্দ করে৷ বিচারক অভিযুক্তকে তিন দিনের জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন৷
[vsw id=”dUX6zMwRkow” source=”youtube” width=”325″ height=”244″ autoplay=”yes”]এদিকে, মনোরঞ্জন আচার্য্যের আইনজীবী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলকে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷ শুক্রবার উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন মনোরঞ্জন আচার্য্য৷ মাননীয় বিচারপতি ইউ বি সাহা এই মামলায় কেইস ডায়েরী তলব করে আগামী মঙ্গলবার পুনরায় জামিনের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য্য করেছিলেন৷ মনোরঞ্জন আচার্য্যের আইনজীবী পিযুশ বিশ্বাস জানিয়েছেন, হাইকোর্ট আগামী মঙ্গলবার পর্য্যন্ত তাঁর মক্কেলকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ দিয়েছিল৷ তা সত্বেও শনিবার মনোরঞ্জন আচার্য্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ উচ্চ আদালতের নির্দেশকে অবমাননা করেছে বলে অভিযোগ করেন পিযুষবাবু৷
এদিন, এই মামলার তদন্তকারী অফিসার ডিএসপি মিনা কুমারী দেববর্মা সকাল সাড়ে এগারটা নাগাদ মনোরঞ্জন আচার্য্যকে বাড়ি থেকে বীরগঞ্জ থানায় ডেকে পাঠান৷ মনোরঞ্জন থানায় গেলে তাকে জোরদার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ তারপর বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ মনোরঞ্জন আচার্য্যকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মেডিকেল করানোর জন্য৷ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান এসডিপিও অনির্বান দাস৷ তারপর দুপুর একটা নাগাদ বীরগঞ্জ থানার পুলিশ মনোরঞ্জন আচার্য্যকে গ্রেপ্তার করে৷ বেলা দুইটা নাগাদ মনোরঞ্জন আচার্য্যকে নিয়ে যাওয়া হয় অমরপুর এসডিজেএম কোর্টে৷ মাননীয় বিচারক তথা এসডিজেএম সুনীল কুমার সিং মনোরঞ্জন আচার্য্যকে তিন দিনের জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন৷ আগামী মঙ্গলবার পুনরায় তাকে কোর্টে তোলা হবে বলে জানা গিয়েছে৷
এদিকে এদিন আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবী আবীর সেন মনোরঞ্জন আচার্য্যের কোন কথাই বলেননি বলে খবর৷ সরকারী আইনজীবীর ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন উঠেছে৷ প্রসঙ্গত, গত ২৭ নভেম্বর অমরপুরে বীরগঞ্জ সিপিএম পার্টি অফিসে মনোরঞ্জন আচার্য্য দলেরই এক নেতার নাবালিকা মেয়েকে যৌন নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ উঠে৷ বিষয়টি ঐ নাবালিকা তার মা বাবা সহ পরিবারের অন্যানদের জানায়৷ তারপর অভিভাবকরা বিষয়টি সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব এবং মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বলে খবর৷ এই খবর জানার পরও সিপিএম নেতৃত্ব সামনে পুর ও নগর ভোট হওয়ায় বিষয়টি চেপে রাখেন৷ পুর ও নগর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হতেই ১০ ডিসেম্বর সিপিএম রাজ্য কমিটি বৈঠক করে মনোরঞ্জন আচার্য্যকে পার্টি থেকে বহিস্কার করে এবং তাকে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে নির্দেশ দেয়৷ সেই মোতাবেক মনোরঞ্জন আচার্য্য বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন৷ তারপরই গোটা বিষয়েটি নিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি মনোরঞ্জন আচার্য্যকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সরব হয়৷ তার বিরুদ্ধে বীরগঞ্জ থানায় মামলা হয় ১৫ ডিসেম্বর৷ কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছিল না কোন এক অজ্ঞাত কারণে৷ এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে সরকারের উপর চার সৃষ্টি করা হয় মনোরঞ্জন আচার্য্যকে গ্রেপ্তার করার জন্য৷ এদিকে এই বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় বিরোধীরা সরব হয় এবং মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য দাবী করেন৷ শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন খুব শীঘ্রই মনোরঞ্জন আচার্য্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের চবিবশ ঘন্টার মধ্যেই বীরগঞ্জ থানার পুলিশ মনোরঞ্জন আচার্য্যকে নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালাতে সোপর্দ করে৷
2016-01-10